পুলিশের দ্বারস্থ পরিযায়ী শ্রমিক। নিজস্ব চিত্র
ধীমান রায়, কাটোয়া: ওড়িশায় বাংলা বলার অপরাধে পরিযায়ীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ। মারধরের কারণে বাড়ি ফিরলেন কাটোয়া থানার করজগ্রামের তারজেন শেখ। তিনি পেশায় ফেরিওয়ালা। তাঁর অভিযোগ, মালপত্র লুঠ করা হয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে কাছে থাকা ছয় হাজার টাকা। এ নিয়ে তিনি কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কাটোয়া থানার করজগ্রাম মাঠপাড়ার বাসিন্দা তারজেন শেখ। তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে ওড়িশার জলেশ্বরে ফেরিওয়ালার কাজ করতেন। সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে স্টিলের বাসনপত্র ফেরি করতেন। ঘরভাড়া করে থাকতেন জলেশ্বরের রাজপুর বস্তিতে।
ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার। প্রতিদিনের মতো ফেরি করতে বেরিয়েছিলেন তারজেন। সকাল দশটা নাগাদ জলেশ্বরের লক্ষণডিহি এলাকায় তাঁকে আটকায় দুজন। তারজেন বলেন, ‘‘ওরা আমাকে ওড়িয়া ভাষায় জিজ্ঞাসা করে নাম কী, কোথায় যাচ্ছি। আমি ওড়িয়া ভাষা বলতে পারি না। তাই বাংলা ভাষাতেই নিজের নাম বলি। ফেরিওয়ালার কাজ করি বলি। তারপর আর কোনও কথা শুনল না। একটা মোটা কাঠ তুলে মার শুরু করল। একজন ওই মারের দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ডিং করতে থাকে। ওরা বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেয়।’’ তারজেনের কথায়, ‘‘আমার কাছেই ছিল আধার, ভোটারকার্ড। আমি বের করে দেখিয়ে বলি আমি বাংলাদেশী নই। ভারতীয়। কিন্তু ওরা কোনও কথা শোনেনি। মারধর করতে থাকে। ৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। বাসনপত্র কিছু ভেঙে তছনছ করে দেয়। কিছু লুট করে নেয়। এরপর সাইকেল নিয়ে কোনওক্রমে পালিয়ে বাসায় আসি।’’
প্রহৃত যুবক ভাড়াবাড়িতে ফিরে যান। তারপর গিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করান। পরদিন তিনি জলেশ্বর থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া আসেন। তারপর বাড়ি ফেরেন। বৃহস্পতিবার কাটোয়া থানায় ও কাটোয়া ১ বিডিওর কাছে পুরো ঘটনা জানান তারজেন। তিনি জানান, তাঁর ডানহাতের কব্জির হাড় ফেটে গিয়েছে। শরীরের প্রায় সর্বাঙ্গে আঘাত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চল্লিশোর্ধ তারজেনের বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী সুকনা বিবি। দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে খুশি খাতুন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে হাসান শেখ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত পুরো পরিবার। তারজেন বলেন, ‘‘আর ওখানে কাজ করতে গেলে এবার হয়তো প্রাণেই মেরে দেবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.