স্বামী ও ছোট ছেলের সঙ্গে নির্যাতিতা। নিজস্ব চিত্র
সৌরভ মাজি ও অর্ক দে: স্বামী গত হয়েছেন। প্রাপ্তবয়স্ক দুই পুত্র ও মাকে নিয়ে থাকতেন। আচমকা জীবনে প্রেম আসে। বছর তেরোর ছোট রাজমিস্ত্রির প্রেমে পড়েন বর্ধমানের বাদশাহী রোড শর্মা পাড়ার রিনা সরকার। সামাজিকভাবে বিয়েও করেন। এর পরেই ঘটে বিপত্তি। ছেলের বয়সি যুবকের সঙ্গে এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি রিনার বড় ছেলে। নবদম্পতি ও ছোট ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিরোগ। এমনকী বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে গেলেও বাধার মুখে পড়তে হয়। বাড়ি ভাঙচুর করে ঘরছাড়া করা হয়। একটা রাত বর্ধমান স্টেশনে খোলা আকাশের নিচে কাটাতে হয় রীনা ঘোষ, তাঁর দ্বিতীয় স্বামী রাকেশ সরকার ও ছোট ছেলে আকাশ ঘোষকে। ঘটনার বিষয়ে সোমবার বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন রিনা (৪০)। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি তদন্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।”
জানি গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে রিনার স্বামী বিশ্বজিৎ ঘোষ মারা যান। তাঁর দুই ছেলে। বড়ছেলে বিকাশ (২৬) ও ছোট ছেলে আকাশ (২৪)। তাঁরা একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সেখানেই রিনার মা লক্ষ্মী ঘোষেরও বাড়ি রয়েছে। সেখানে পাকা বাড়িও বানায় তারা। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি রাকেশ সরকার (২৭)-এর সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রিনা। গত ১ জুলাই সামজিক অনুষ্ঠান করে বিয়েও করেন তাঁরা। অভিযোগ, এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি বড় ছেলে বিকাশ ও তাঁর দিদিমা লক্ষ্মী ঘোষ। তারা রিনা, তার ছোট ছেলে ও স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ভাড়া বাড়িতে থাকতে গেলে সেখানেও বিকাশ লোকজন নিয়ে হামলা করে। রিনা বলেন, “ঘরের সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে বড় ছেলে ও তার বন্ধুরা। ঘরছাড়া করেছে আমাদের। স্টেশনে রাত কাটাচ্ছি। কোথায় থাকব জানি না।”
রিনার ছোট ছেলে আকাশ বলেন, “মা সামান্য পরিচারিকার কাজ করে। মা আমাকে একটা টোটো কিনে দিয়েছে। মা বিয়ে করায় যতটা না রাগ তার থেকেও দাদার বেশি রাগ আমাকে টোটো কিনে দেওয়ায়। সেই কারণেই আমাদের বাড়ি মায়ের বিয়ের অজুহাত দিয়ে ভাঙচুর করেছে। আমাদের মারধর করে বের করে দিয়েছে।” রিনার বর্তমান স্বামী রাকেশ বলেন, “আমরা প্রেম করে বিয়ে করেছি। কিন্তু বিয়ের আগে কেউ আপত্তি করেনি। বিয়ের চারদিনের মধ্যে ওইভাবে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেবে ভাবতেই পারিনি। খোলা আকশের নীচে রাত কাটাচ্ছি এখন।” রবিবার রাতেই তাঁরা বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহরমের শোভাযাত্রার ভিড়ের কারণে যেতে পারেননি। সোমবার অভিযোগ জানান। ওই এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর সুমিত শর্মা বলেন, “বড় ছেলে মায়ের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি বলে হামলা করেছে বলে শুনেছি। উভয়পক্ষকেই আলোচনায় বসে মিটমাট করে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ওরা আমার কথা শুনে আলোচনায় বসেনি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.