ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নদিয়ায় কর্মসূচি, অথচ মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের ব্যানারে। তাও আবার নদিয়া জেলা সংগঠনকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে! একুশে জুলাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর ডাকে ‘পলাশী চলো’ কর্মসূচি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ কংগ্রেসের অন্দরে। নদিয়া জেলা নেতৃত্বকে না জানিয়ে কেন এই কর্মসূচি? এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখ। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, অধীর চৌধুরী অন্য জেলা সংগঠনে নাক গলাচ্ছেন। এনিয়ে ফেসবুক পোস্টে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কাবিলউদ্দিন। পাশাপাশি তিনি বিষয়টি নিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী-সহ হাইকম্যান্ডের নেতাদেরও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূল গঠনের পর থেকেই ২১ জুলাই আলাদাভাবে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করেন। তবে যেহেতু ১৯৯৩ সালে সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে প্রতিবাদ হয়েছিল যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বে এবং তাতে শহিদ হন যুব নেতারা, তাই যুব কংগ্রেস আলাদাভাবে এই দিনটি পালন করে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কিন্তু গোল বেঁধেছে এক জেলা সংগঠন আরেক জেলায় কর্মসূচি ঘোষণা করে দেওয়ায়। গত মাসে নদিয়ার কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিন বোমাবাজিতে মৃত্যু হয় এক নাবালিকার। তা নিয়ে কম রাজনৈতিক শোরগোল হয়নি। এবার একুশের শহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে অধীর চৌধুরী সেই ইস্যুকেই হাতিয়ার করছেন। নাবালিকা তামান্নার খুনের বিচার চেয়ে তিনি ‘পলাশী চলো’ ডাক দিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলা যুব কংগ্রেসের ব্যানারে।
প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির এই কর্মসূচিতেই আপত্তি নদিয়ার কংগ্রেস নেতা কাবিলউদ্দিন শেখের। ফেসবুক পোস্টে তিনি তোপ দেগে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কংগ্রেস সংবিধানের কোন ধারায় লেখা আছে যে, এক জেলার কমিটি অন্য জেলায় গিয়ে সভা করতে পারে? ভারতীয় যুব কংগ্রেসের অনুমোদিত এবং নির্বাচিত নদীয়া জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি, কালীগঞ্জ বিধানসভা যুব কংগ্রেস সভাপতিদের এই সভা করার দায়িত্ব দিতে পারতেন। তাঁরাই আপনার সভা ব্যবস্থা করে দিত। নদীয়া জেলা কংগ্রেসকে বারবার অপমান করছেন কেন?’ তাঁর আরও ক্ষোভ, ‘২১শে জুলাই যুব কংগ্রেসের কাছে একটি পুন্য তিথি। আপনি মনে করতে পারবেন- ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই আপনি কোথায় ছিলেন? পারবেন না…কারণ আপনি সেদিন ধর্মতলায় ছিলেনই না। আমাদের মতন হাজার-হাজার যুব কংগ্রেস কর্মীরা কিন্তু মৃত্যুর ভয় না পেয়ে সেদিন মিছিলে সামিল ছিলাম।তারপরেও লাশ কাটা ঘর পর্যন্ত আমরাই ছিলাম, আপনি ছিলেন না। আজ আপনি ঘটা করে ২১শে জুলাই পালন করতে আসছেন সেই কালীগঞ্জেই। কাকে রক্ষা করতে বার-বার কালীগঞ্জে আসতে হয় আপনাকে? কালীগঞ্জ নিয়ে কিসের এত ইন্টারেস্ট আপনার?’
আসলে অধীররঞ্জন চৌধুরী এবং কাবিলউদ্দিন শেখের মধ্যে সম্পর্ক গোড়া থেকেই বিশেষ ভালো নয়। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমে কাবিলউদ্দিনকে দলের প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু তা বাতিল করে অধীরের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এদিনের ফেসবুক পোস্টে সেকথাও উল্লেখ করেছেন কাবিলউদ্দিন। সবমিলিয়ে, ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি নিয়ে দুই জেলায় কংগ্রেসের তীব্র কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.