Advertisement
Advertisement
Nimta

ছোটবেলায় জামার অভাবে দূরে সরিয়েছিল বন্ধুরা, ‘গরিবের বাজার’ খুলে দরিদ্রদের পাশে নিমতার যুবক

মাত্র ৫ টাকা থেকে মেলে জামা।

Nimta man started Gariber Bazar for needy people
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:June 8, 2025 7:46 pm
  • Updated:June 8, 2025 7:46 pm   

অর্ণব দাস, বারাকপুর: বয়স হবে তখন সাত-আট বছর। দুর্গাপূজায় নতুন জামা উপহার মেলেনি। হত দরিদ্র মা-বাবাও কিনে দিতে পারেননি। তাই পুরোনো জামা পড়ায় বন্ধুরা ঠাকুর দেখতে নিয়ে যায়নি। শিশুমনের তা বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। নিমতা থানার বিরাটি তেঁতুলতলার বাসিন্দা অমিত সরকারের মনে সেই ক্ষত আজও টাটকা। তারই ফলস্বরূপ খানিকটা জেদ করেই গরিব শিশুদের বস্ত্রের দায়িত্ব নিচ্ছেন অমিত। পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার যুবক খুলেছেন ‘গরিবের বাজার’। যেখানে ৬ মাস থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের পোশাক মিলছে মাত্র ৫ টাকা থেকে সর্বাধিক ৩০ টাকায়। ভর্তুকি দিয়ে এই পোশাক বিক্রির জন্য অমিত নিজেই কাটিং থেকে স্টিচিং সবটাই করেন। তবে, থান কাপড় কিনে নয়, কাটা কাপড় কিনেই সে তৈরি করেন বাচ্চাদের গেঞ্জি-প্যান্ট।

Advertisement

দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়েই অনেক ছোট বয়সে অমিতের পোশাক তৈরি শেখা। হাতে খড়ি হয়েছিল সুতো কাটা দিয়ে। তারপর কাপড় কাটা শিখে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালাতেন অমিত। এরপর আস্তে আস্তে সেলাই শিখে, মেশিন কিনে নিজের বাড়িতেই পোশাক তৈরি করে বিক্রি শুরু করেছিলেন। লাভের সেই অর্থে তখনও ইটভাটা বা রেললাইনের ধারের দুঃস্থ শিশুদের পোশাক বিলি করতেন তিনি। তখনই তিনি অনুভব করেন, দানের বস্ত্র নিতে অনেকেই লজ্জা বোধ করছেন। এরইমধ্যে নিমতা থানার অধীনে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। বিয়ে হয় বারাসত জেলা পুলিশের অধীনে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার মধুমিতার সঙ্গে। এরপরই স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজের পাড়া বিরাটি তেঁতুলতলায় দরিদ্র শিশুদের জন্য জামাকাপড়ের দোকান খোলেন। নাম দেন ‘গরিবের বাজার’।

জানা গিয়েছে, সেখানে শিশুদের পোশাকের দাম শুরু মাত্র ৫টাকা থেকে। বিরাটি, বিশরপাড়া, নিউবারাকপুর এলাকার গেঞ্জি কারখানার থেকে কাটা কাপড় কিনে এনে নিজেই কেটে, সেলাই করে পোশাক তৈরি করে অমিত। সহকারী হিসাবে থাকেন তাঁর স্ত্রী মধুরিমা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে ‘গরিবের বাজার’। এই দোকানে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের প্যান্ট বিক্রি করা হয় ৫ থেকে ১০টাকায়। আর গেঞ্জি বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫টাকায়। ৩বছর থেকে ১০বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের প্যান্ট মেলে ১৫ থেকে ২০টাকায়। আর গেঞ্জি পাওয়া যায় ২০ থেকে ৩০ টাকায়।

অমিত বলেন, “খুব কষ্টে শৈশব কেটেছে। পুজোয় নতুন জামা না থানায় বন্ধুরা ঠাকুর দেখতে নিয়ে যায়নি। তাই ঠিক করি দান নয়, সম্মানের সঙ্গে দুঃস্থ শিশুদের সাহায্য করব। আমরা দম্পতি মিলে যা রোজগার করি, তাতে সংসার চলে যায়। বাজে খরচ কমিয়ে, টাকা জমিয়ে সেই অর্থ দিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে ৬ বছর ধরে গরিবের বাজার চালাচ্ছি।” তাঁর উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। অমিতের এই উদ্যোগ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কমিশনারেটে পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ