Advertisement
Advertisement

Breaking News

Deganga

লাস্ট বেঞ্চের গ্লানি মুছে ক্লাসে সাম্যবাদ! দেগঙ্গার স্কুলে ‘নো মোর ব্যাক বেঞ্চার’ সিস্টেম

কোনওকিছুই যে অসম্ভব নয়, তাই দেখিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মফঃস্বল এলাকার এক ছাপোষা স্কুলশিক্ষক।

'No more back bencher' system in Deganga school
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:July 17, 2025 1:57 pm
  • Updated:July 17, 2025 1:57 pm  

অর্ণব দাস, বারাসত: ক্লাসে অবাধ‌্য, অমনোযোগী, পিছনের বেঞ্চে বসা চার ছাত্রকে বাগে আনতে শাসন নয়, অভিনব এক পদ্ধতি অনুসরণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মালয়ালম চলচ্চিত্র ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’-এর শিক্ষক থুড়ি পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথ। কিন্তু, সে তো কেবলই রুপোলি পর্দায়। প্রশ্ন উঠেছিল, বাস্তবে এমনটা হওয়া সম্ভব? কোনওকিছুই যে অসম্ভব নয়, তাই দেখিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মফঃস্বল এলাকার এক ছাপোষা স্কুলশিক্ষক।

Advertisement

চলচ্চিত্রের মতোই বাস্তবে স্কুলের ক্লাসরুমেই তিনি তুলে এনেছেন সেই অভিনব সিস্টেম। যার ফলে, এবার থেকে কোনও পড়ুয়া বসবে না পিছনের বেঞ্চে। সকলেই বসবে ফার্স্ট বেঞ্চে, সকলেই সমানভাবে পাবে শিক্ষক-শিক্ষিকার মনোযোগ।

কথা হচ্ছে দেগঙ্গার শ্বেতপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। মালয়ালম চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত এই ‘নয়া বেঞ্চিং সিস্টেম’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মঙ্গলবার থেকে ‘নো মোর ব্যাক বেঞ্চার’ মডেলে ক্লাস চালু হল সেই স্কুলে। আগে মালদহের বার্লো গার্লস স্কুলে নয়া এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ছাত্রীদের বসার ব‌্যবস্থা করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারপর দেগঙ্গার এই প্রাথমিক স্কুল। কিন্তু, কী এই নয়া বেঞ্চিং সিস্টেম?

আসলে এটি বেঞ্চের অবস্থান অদলবদল করে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘ব্যাকবেঞ্চার’ বলতে আমরা সোজা বাংলায় যা বুঝি, তা হল পিছনের বেঞ্চে বসা ছাত্রছাত্রী। সাধারণত মনে করা হয়, পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাই স্কুলে পিছনের দিকের বেঞ্চে গিয়ে বসে। এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক না হলেও, পিছনের দিকের বেঞ্চে বসা শিক্ষার্থীরা যে অনেক সময়েই শিক্ষক-শিক্ষিকার নজর এড়িয়ে যায়, একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই।

সেই ধারণা পরিবর্তন করতে প্রথম উদ্যোগী হন চারবছর আগে স্কুলে যোগ দেওয়া অ্যাসিস্ট‌্যান্ট টিচার রুহুল আমিন। তিনি মালয়ালম ছবিটি দেখার পর স্কুলের সকলের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলির অবস্থান বদলে  ‘ইউ’ আকৃতির করে দেওয়ার কথা বলেন। এর ফলে প্রতিটি ক্লাসরুমের ব্ল্যাক বোর্ডের ডানদিক ও বাঁদিকে সমান্তরাল ভাবে পাশাপাশি বেঞ্চগুলি পাতা হবে।

 শিক্ষকের টেবিলের সামনে থাকবে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা। সেখানেই শিক্ষকের মুখোমুখি থাকবে আরও একটি বেঞ্চ।  অর্থাৎ, ইউ আকৃতির। ক্লাসে কোনও ব‌্যাক বেঞ্চ না থাকায় প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীই শিক্ষক-শিক্ষিকার চোখের সামনে, প্রথম বেঞ্চে থাকছে। এর ফলে শিক্ষকরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দিকে সমান নজর দিতে পারবেন। মঙ্গলবার থেকে দেগঙ্গার ওই স্কুলে এই পদ্ধতিতেই চালু হল পঠন-পাঠন। স্কুলের অ্যাসিস্ট‌্যান্ট টিচার রুহুল আমিন বলেন, ‘‘মালয়ালম সিনেমাটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এর থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের স্কুলেও পদ্ধতিটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেন প্রধান শিক্ষক। পড়ুয়ারাও খুব উৎসাহিত।’’

'No more back bencher' system in Deganga school

স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ পাল বলেন, “আগে পিছনের বেঞ্চে বসা ছাত্রছাত্রীরা টিচারদের পড়া ধরার ভয়ে মাথা নিচু করে থাকত। আমাদের অলক্ষ্যেই থাকত বিষয়টি। কিন্তু এই মডেল চালু হওয়ার ফলে ক্লাসের সব পড়ুয়ারাই শিক্ষক-শিক্ষিকার সামনে বসছে। ফলে ক্লাসের সকলের প্রতি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।” ব্লকের বিডিও ফাহিম আলম বলেন, “এটা একদম নতুন কনসেপ্ট। ব্লকের আরও ৪-৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই পদ্ধতিতে ক্লাস চালু হবে। আগামিদিনে হাই স্কুলগুলিতেও এই পদ্ধতি চালু করার ভাবনা রয়েছে।”

পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান বিদেশ জানিয়েছেন, “স্কুলের এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ। আগামিদিনে ব্লকের অন্যান্য স্কুলেও এই পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতি উদ্যোগ নেবে।” নয়া এই পদ্ধতি চালু হলে রাজ্যের সমস্ত স্কুল থেকেই হয়তো ‘ব‌্যাকবেঞ্চার’ শব্দটি চিরতরে মুুছে যাবে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement