Advertisement
Advertisement
Purulia

ভগ্নপ্রায় কাঁচা বাড়ি, ভরা বর্ষায় এখনও কালো ত্রিপলই মাথার ছাদ পদ্মশ্রী ‘গাছদাদু’র

বাসস্থানের চিন্তা সত্ত্বেও বর্ষায় নানা গাছের পরিচর্যায় মগ্ন 'গাছদাদু' দুখু মাঝি।

Padmasree awardee old Dukhu Majhi in Purulia is in distress for not having proper shelter home
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 22, 2025 2:51 pm
  • Updated:July 22, 2025 3:52 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ থেকে ২১ জুলাই, ২০২৫। ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান পাওয়ার পর পেরিয়েছে এক বছরের বেশি সময়। কিন্তু এখনও সেই ক্ষয়প্রাপ্ত কাঁচা বাড়িতে দিন কাটছে পুরুলিয়ার ‘গাছদাদু’ দুখু মাঝির। চলতি বর্ষায় ওই ঘরের এমনই দশা, যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে তাঁর বাস্তুভিটে। তাই গ্রামের মানুষের সাহায্য নিয়ে সেই কাঁচা বাড়িকে বাঁচাতে এক চিলতে ঘরের ডানদিকে বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। একইভাবে ঘরের ভিতরেও বহুদিন আগে থেকেই বড় খুঁটি দিয়ে ওই কাঁচা বাড়িকে যেন ভেঙে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর ওই কুঁড়ে ঘরের মাথার উপরে টালি-খাপরা একেবারে ভেঙে যাওয়ায় ত্রিপল দিয়ে বৃষ্টির জল আটকাচ্ছেন। ওই কালো ত্রিপলই যেন তাঁর কাঁচা বাড়ির মাথার ছাদ!

Advertisement

কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি হলে সেই ত্রিপল চুঁইয়ে জল পড়ছে ঘরেই। বৃষ্টির জল মেঝেতে পড়ে যাতে কাদা না হয়ে যায়, তাই একটি পাত্রে জল জমছে। ছোট্ট কাঁচা বাড়ির দুটি ঘরে সূর্যের আলো পর্যন্ত আসে না। তাই বাল্ব জ্বালিয়ে প্রবেশ করতে হয়। ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার পর জনপ্রতিনিধি থেকে আধিকারিক অনেকেই এই ঘরে পা দিয়ে পাকা ছাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। এই বর্ষায় দুখুর কীভাবে দিন কাটছে, তার খোঁজ রাখে না কেউ। তবে বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসন বলছে, অতীতে তাঁর হাউসহোল্ডে সরকারের তরফে একটি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘পদ্মশ্রী’ দুখু বলছেন, সে তো ছেলের নামে। বড় ছেলে সেই ঘরে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে আলাদা থাকেন।

ভেঙে পড়া একচিলতে মাটির বাড়িতেই থাকেন ‘পদ্মশ্রী’ দুখু মাঝি। ছবি: প্রতিবেদক।

বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার আগেই সম্ভবত ২০২১-২২ আর্থিক বছরে দুখু মাঝির একই হাউসহোল্ডে কেন্দ্রের বাড়ি মিলেছে। বাঘমুন্ডির বিডিও আর্য তা বলেন, “ওই প্রবীণ মানুষটির হাউসহোল্ডে আগেই একটি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। আলাদা জব কার্ড, আলাদা রেশন কার্ড এসব থাকলে তখনই নতুনভাবে বাড়ির দেওয়ার বিষয়টি আসতো। যে হাউসহোল্ডে তাঁকে বাড়ি দেওয়া হয়েছে সেখানে তিনি পরিবারের কর্তা।” প্রশাসনের এই ব্যাখ্যায় ভীষণ হতাশ দুখু মাঝি। তাঁর কথায়, “আমি এই পুরস্কার পাওয়ার পর জনপ্রতিনিধি থেকে আধিকারিক – কত মানুষ আমার কাছে এসে বলে গিয়েছিলেন, তারা একটা বাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু কেউ কোনও কথা রাখেননি। আমি যখন প্রশাসনের কাছে বাড়ির জন্য আবেদন করলাম, আমাকে একবারও ব্লক প্রশাসনের তরফে এরকম কথা বলা হয়নি যে বাড়ি পাব না। সবাই আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাই ভেবেছিলাম এবার বর্ষাতে হয়তো আর কষ্ট করতে হবে না। কিন্তু কোথায় কী? কখন এই বাড়ি ধসে পড়বে, কে জানে! বাঁশ দিয়ে কোনওভাবে আটকে রাখা হয়েছে।” তাঁর আক্ষেপ, “প্রশাসন বলছে আমার নামে বাড়ি দেওয়া রয়েছে। কিন্তু এই কথা একেবারেই ঠিক নয়। কষ্ট হলেও সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে আমার, আমার পরিবারের। প্রশাসন থেকে সরকার যদি সঠিক মনে করে তাহলে বাড়ি মিলবে। সেই আশাতেই থাকি না কেন!”

‘পদ্মশ্রী’ পদকটিই একমাত্র সম্বল। ছবি: প্রতিবেদক।

বৃষ্টির জল শরীরে মেখে ভাঙা ঘরে দিনযাপন ‘পদ্মশ্রী’র যে নিয়তি হয়ে গিয়েছে। তা তাঁর কথা থেকেই পরিষ্কার। কিন্তু ওই জাতীয় পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’র মেডেল ওই ভগ্নপ্রায় ঘরে ‘গাছদাদু’ রক্ষা করতে পারবেন তো? সেটাই বড় প্রশ্ন। তাঁর স্ত্রী চুমকি মাঝি বলেন, “কী আর করব? পুরস্কারটাই তো এখন আমাদের প্রধান সম্বল। তাই যেখানে আমরা যাই, ব্যাগে করে ওই পুরস্কারটা নিয়ে যাই।” বিধিমতো ২৬ জানুয়ারি পদ্মশ্রী পুরস্কারে ওই ‘গাছদাদু’কে ভূষিত করা হলেও ওই বছরের ২২ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির হাত থেকে তিনি এই জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেন। কিন্তু ওই পুরস্কার মেলার পর থেমে থাকেনি তাঁর বৃক্ষরোপণের কাজ।

এই বর্ষাতেও তিনি শাল, শিমূল, কুসুম, কূলের পাশাপাশি আম, পেয়ারা, জামের মতো ফলের গাছ বসিয়ে যাচ্ছেন ওই ‘বৃক্ষসাথী’। ১২ বছর বয়স থেকে যে কাজ শুরু করেছিলেন আজ পর্যন্ত হিসাব করলে বৃক্ষরোপণের সংখ্যাটা ১০ হাজার ছুঁয়ে যাবে বলে তিনি জানান। তাই তো ওই এলাকার মানুষজন তাঁকে ‘বৃক্ষমানব’ও বলে থাকেন। তিনি যে সাইকেলে গাছের চারা নিয়ে বৃক্ষরোপন করে ‘সেভ অযোধ্যা হিলস’-এর বার্তা বয়ে যাচ্ছেন – ‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়।’

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement