বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য: ক্রমশ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করলেও কিছুতেই আতঙ্ক কাটছে না। পুজোয় নেপাল ভ্রমণের বুকিং বাতিলের হিড়িক। এই মরশুমে পর্যটন শিল্পে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে নেপাল। শঙ্কা পর্যটন ব্যবসায়ী মহলের।
নেপাল ইমিগ্রেশন বিভাগ এবং নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত নেপাল ভ্রমণ করেছে ৮৮,৬৮০ জন বিদেশি পর্যটক। তাদের মধ্যে ৪৭,১৩৭ জন পর্যটক দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে গিয়েছেন। ওই পর্যটকদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৫০৫ জন ভারতীয়। বাকি পর্যটকরা বাংলাদেশ, ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার। ভারতীয় পর্যটকদের বড় অংশ ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি ও মিরিকের পশুপতি দিয়ে যাতায়াত করেছেন। পর্যটন ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপাল বাঙালিদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় কারণ সেখানে ভ্রমণের জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না। ওই কারণে উত্তরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রায় ৫০ শতাংশ নেপাল ভ্রমণে যান। এবার পুজোয় নেপাল ভ্রমণে পর্যটকদের সংখ্যা অনেকটাই বাড়বে আশা ছিল পর্যটন ব্যবসায়ীদের। কিন্তু ৮ সেপ্টেম্বর থেকে চলা অশান্তির জেরে পুরো ছবি পালটে গিয়েছে।
হোটেল ভাঙচুর, পর্যটকদের উপরে হামলা, যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা এবং বুকিং বাতিলের ফলে ইতিমধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে নেপাল। ওই দেশের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিমালয়ান টাইমস’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২৪টির বেশি হোটেল ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও পোখারা, ভৈরহাওয়া, বিরাটনগর ও ধানগঢী-সহ অন্য পর্যটনকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে সেখান থেকে একরকম পালিয়ে দেশে ফিরেছেন আটকে পড়া কয়েক হাজার পর্যটক। এরপরই পুজোর মরশুমে নেপাল ভ্রমণের বুকিং বাতিলের হিড়িক শুরু হয়ে যায়। হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, “মানুষ আতঙ্কিত। এখনও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। ওই পরিস্থিতিতে কে যেতে চাইবে! প্রত্যেকে নেপালের বুকিং বাতিল করছে।”
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, লুম্বিনী থেকে বুদ্ধগয়া পর্যন্ত একটি ট্যুরিস্ট সার্কিট রয়েছে। প্রতি বছর সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তীর্থযাত্রার যান। গত বছর প্রায় ১২ লক্ষ বৌদ্ধ পর্যটক ওই সার্কিট ভ্রমণ করেছেন। তাদের বড় অংশ সিকিম ও ভুটানের। এছাড়াও রয়েছে ট্রেকিং, পশুপতি মন্দির দর্শন। সব মিলিয়ে নেপালের জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। ওই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিরাট সংখ্যক স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা। কিন্তু আতঙ্কের আবহ না কাটলে পর্যটকরা সেখানে যেতে চাইবে না। সেটাই হয়েছে। এর ফলে বিরাট ধাক্কার মুখে পড়তে পারে ওই দেশের পর্যটন শিল্প ও অর্থনীতি। রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, “আপাতত আমাদের কিছু করার নেই। নেপাল যত দ্রুত স্বাভাবিক হয় ততই মঙ্গল। সেখানকার পর্যটন শিল্প বাঁচবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.