Advertisement
Advertisement

ইছামতীর পাড়ে বেআইনি নির্মাণে এবার আইনি জট! হাই কোর্টে দায়ের হচ্ছে জনস্বার্থ মামলা

নিয়ম না মেনে হোটেল তৈরি হয়েছে, তা মেনে নিয়েছে সেচদপ্তর।

PIL at calcutta HC on illegal construction on Icchamati banks
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:July 15, 2025 1:43 pm
  • Updated:July 15, 2025 1:43 pm   

গোবিন্দ রায়: পরিবেশ ও পুরআইনকে থোড়াই কেয়ার! টাকিতে ইছামতির ধারে গজিয়ে উঠেছে বিলাসবহুল হোটেল-রেস্তোরাঁ। সম্প্রতি এই অভিযোগে সরব হয়েছিল পরিবেশপ্রেমীরা। হাই কোর্টের এক আইনজীবী এনিয়ে অভিযোগও জানিয়েছিলেন সর্বত্র। এবার সেই অভিযোগেই সিলমোহর দিল সেচ দপ্তর। এনিয়ে এবার জনস্বার্থ মামলা দায়ের হতে চলেছে কলকাতা হাই কোর্টে।

Advertisement

সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইচ্ছামতী নদী বাঁধের ধারে ওই নির্মাণের জন্য সেচ দপ্তর থেকে কোনও এনওসি (আপত্তি সার্টিফিকেট)-ই নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি, গজিয়ে ওঠা ওই হোটেল-রিসোর্ট নদী সীমানা অতিক্রম করেছে। একইসঙ্গে, নির্মাণের জন্য পুরসভা কর্তৃক জারি করা সাইট প্ল্যান, অনুমোদিত নীলনকশা অনুসারে নির্ধারিত স্থানে কোনও কাঠামো তৈরি করা হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী মালিকানায় যে জমি রয়েছে তার থেকে অতিরিক্ত ১ শতকের বেশি জমি দখল করে ওই নির্মাণ গড়ে উঠেছে বলেই দাবি। এছাড়াও পুরআইনে বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে যে জায়গা ছাড়ার বিধি রয়েছে তাও মানা হয়নি। যা ১৯৯৩ সালের রাজ্য পুর আইনের ১১৮ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে।

 

প্রসঙ্গত, গত মাসে টাকিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন জনৈক আইনজীবী তথা তন্ময় বসু। গোটা এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে গিয়েই এনিয়ে রাজ্যের পরিবেশ দপ্তর থেকে শুরু করে সেচ দপ্তর, এমনকি টাকি পুরসভা, বসিরহাট মহকুমা শাসকের দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ গিয়েছে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ও হাসনাবাদ থানার কাছেও। এই সমস্ত নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবীর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এইভাবে ইছামতি নদীর পাড়ে তৈরি করছে বিলাসবহুল হোটেল। নিয়ম অনুযায়ী জোয়ারের জল যতদূর পৌঁছয় সেখান থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে নির্মাণ হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে, প্রায় নদীর গর্ভে তৈরি হয়েছে হোটেলগুলি। এতে নদীর জোয়ারের জল প্রতিদিন ধাক্কা মারছে হোটেলের দেয়ালে। ইতিমধ্যেই একটি হোটেলের একাংশ হেলে পড়েছে বলেও দাবি স্থানীয়দের। যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। যদিও হোটেল মালিক শাহানুর মণ্ডলের দাবি, তিনি আইন মেনে সবটা করেছেন। ওই নির্মাণ সংক্রান্ত সব নথি তাঁর কাছে আছে। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলেই তাঁকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে।

Hotel is constructed in the banks of Ichamati river

এদিকে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নদী বাঁচাও কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নদীর পাড়ে যেভাবে হোটেলগুলো হয়েছে তা অবৈধ। আগামী দিনে যদি সমস্ত নির্মাণ ভেঙে নদীর গতিপথে প্রবাহমানতা ফেরানো যায় তাহলে প্রকৃতি বাঁচবে বাস্তুতন্ত্র রক্ষা পাবে।” আইনজীবীর দাবি, তাজপুরের মতোই পরিবেশ ও পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে টাকিতেও এই অবৈধ হোটেল-রিসর্ট ভাঙতে পদক্ষেপ নিক প্রশাসন। এতে শুধু ইছামতি নদী রক্ষাই নয়, হাজার হাজার পর্যটকের জীবন রক্ষার পাশাপাশি টাকি ও ইছামতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও ফিরে আসবে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরাও। সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালত দিঘার তাজপুরে সমুদ্র তীরবর্তী অবৈধ হোটেল ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের (গ্রিন ট্রাইব্যুনাল) নির্দেশের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টে মামলাও বিচারাধীন। এবার একই ছবি টাকিতেও। টাকি রাজবাড়ি ঘাট সংলগ্ন এই হোটেল-রিসর্টগুলি নিয়ে অবশ্য টাকি পুরসভার পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটা নিয়ে বসিরহাটে ন্যাশনাল ট্রাইবুনাল পলিউশন বোর্ডের একটি মিটিং হয়েছিল। সেখানে সীমারেখা ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। নদীর পাড় থেকে কত দূরত্বে নির্মাণ করা যেতে পারে তাও বলা হয়েছিল। আদালত যদি ভাঙার নির্দেশ দেয় আমরা নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নেব।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ