Advertisement
Advertisement
Kalyani JNM Hospital

গর্ভেই বাস মৃত ‘পেপার ভ্রূণে’র, একই মায়ের আরও এক সন্তানকে বাঁচিয়ে রেকর্ড চিকিৎসকদের

অসাধ্য সাধন কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের।

Pregnant Woman Loses One Twin, Doctors Save Other in Rare ‘Paper Foetus’ Case
Published by: Ramen Das
  • Posted:August 12, 2025 11:08 pm
  • Updated:August 12, 2025 11:56 pm  

রমেন দাস: পেপার ভ্রূণ! গর্ভেই যেন পড়ে রয়েছে খবরের কাগজ! আর সেই মৃত যমজের সঙ্গে গর্ভেই প্রায় তিনমাস বেঁচে আর এক ভ্রূণ! মৃতদেহের পাশেই সহবাস তার! চিকিৎসাশাস্ত্রে এমন বিরল ঘটনা এবার ঘটেছে নদিয়ার কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন কাণ্ড প্রায় এক লক্ষ ডেলিভারির মধ্যে একবার দেখা যায়! যা ঘটে যমজ সন্তানের মধ্যে এক জনের মৃত্যু যদি গর্ভেই হয়। তবে এক্ষেত্রে জীবিত থাকে বাকি আর এক সন্তান!

Advertisement

গত ১০ অগাস্ট প্রায় এক ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে প্রাণে বেঁচেছেন নবদ্বীপের বাসিন্দা, পেশায় বিএসএফ জওয়ান ওই মহিলা। যাঁর এই মুহূর্তে চিকিৎসা চলছে ওই হাসপাতালেরই স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতি বিভাগে।

ঠিক কী হয়েছে আসলে? স্পষ্ট করে বললে কী এই ‘পেপার ভ্রূণ’? গর্ভেই মৃত এক জনের সঙ্গে কীভাবে বেঁচে ছিল এই সদ্যোজাত?

সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মৈনাক নাথ। যাঁর নেতৃত্বেই মূলত হয়েছে ওই অস্ত্রোপচার।

চিকিৎসক নাথ বলছেন, ‘পেশায় বিএসএফ জওয়ান ওই রোগিনী যখন ৬ মাসের গর্ভবতী, তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, ওঁর গর্ভের যমজ সন্তানের মধ্যে একটির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু অপরটি বেঁচে আছে।’ তাঁর কথায়, ‘এর পরেই চেষ্টা শুরু হয় জীবন্ত সন্তানকে ‘সারভাইভ’ করানোর। যদিও সেটা ওই রোগিণীর অনুমতি নিয়ে। এই কাজ কিন্তু যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এই চেষ্টায় ক্রমশ গর্ভবতীর কিডনি, লিভারে চাপ পড়ছিল। সমস্যা শুরু হচ্ছিল।’ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মৈনাক নাথ বলছেন, ‘তবুও চেষ্টা চলে। অবশেষে গত ১০ অগাস্ট ৯ মাস পর ওই প্রসূতির সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারি করানো হয়।’

কিন্তু এই অস্ত্রোপচারের পরেও ছিল চমক! চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেন, মৃত ভ্রূণটি দেখতে প্রায় কাগজের মতো হয়ে গিয়েছে। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘পেপার ভ্রূণ’। যে বিষয়টিকে বলা হয়, ‘ফেটাল প্যাপিরাসিয়স’ (Fetal Papyraceous), এই অবস্থায় গর্ভস্থ মৃত বাচ্চাটি অন্য ভ্রূণের বা বাচ্চার চাপে কাগজের মতো বা পেপারের মতো হয়ে যায়! যা বিরলের মধ্যে বিরলতম বলেই দাবি করেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। প্রায় এক লাখ গর্ভবতীর মধ্যে এই ঘটনা একবার হতে পারে!

এই ঘটনায় যেন যুদ্ধজয়ের হাসি হাসছেন ওই বিভাগের চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারে ছিলেন ডাঃ মৈনাক নাথ, ডাঃ সুলগ্না লালা, ডাঃ সঞ্চিতা বিশ্বাস, ডাঃ শ্রেষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। অ্যানাস্থেসিয়ার ডাঃ রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তাঁদের পরামর্শ দেন ডাঃ অভিজিৎ হালদার, ডাঃ সব্যসাচী সরকাররা। এই মুহূর্তে স্থিতিশীল আছেন ওই রোগিনী। কন্যাসন্তান নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত নবজাতকের মা। চিকিৎসকদের একাংশ ওই সদ্যোজাতকে দেখে বলছেন, গর্ভেই মৃত ভাই বা বোনের সঙ্গে বসবাস করেও পৃথিবীর আলো দেখার চ্যালেঞ্জ যে নিতে পারে, সে তো অগ্নিকন্যা!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement