Advertisement
Advertisement

স্কুলে দিনবদলের ডাক, রাজধানীতে সম্মানিত ‘জাতীয় শিক্ষক’ অমিতাভ মিশ্র

প্রিয় মাস্টারমশাইয়ের সাফল্যে আপ্লুত পুরুলিয়া।

Purulia teacher honoured in Delhi on Techers’ Day

 ছবিতে পড়ুয়াদের সঙ্গে অমিতাভ মিশ্র, ছবি :সুমিতা সিং

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:September 5, 2018 6:54 pm
  • Updated:September 5, 2018 7:13 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সাজিয়ে গুছিয়ে স্কুলকে শিশুর আলোয় করে তুলেছিলেন অমিতাভ মিশ্র। পুরুলিয়ার মানবাজার এক নম্বর ব্লকের গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ কেন্দ্রীয় সরকার অমিতাভবাবুকে জাতীয় শিক্ষকের সম্মাননা প্রদান করল। শিক্ষক দিবসে রাজধানীর বিজ্ঞান ভবনে তাঁকে সম্মানিত করলেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু। এদিন তাঁর হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক ও রূপোর মেডেল তুলে দিলেন উপরাষ্ট্রপতি। প্রিয় শিক্ষকের এই সম্মানপ্রাপ্তিতে খুশি তাঁর কর্মক্ষেত্র গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক সহকর্মী।

Advertisement

সন্তান-সম পড়ুয়ারা এই সম্মাননার মর্মার্থ না বুঝলেও, এটুকু জানে তাঁদের প্রিয় মাস্টারমশাই পুরস্কার আনতে দিল্লি গিয়েছেন। মানবাজার শহরের টিচার্স কলোনির দীর্ঘদিনের বাসিন্দা অমিতাভ মিশ্রের ধ্যানজ্ঞান ওই স্কুল। কী থেকে কী করলে স্কুলটি আরও সুন্দর ও শিশুদের উপযোগী হয়ে উঠবে তানিয়েই দিনরাত খেটে চলেছেন মানুষটি। অমিতাভ মিশ্রের কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার নিতে রাজধানীতে আসা প্রত্যেক শিক্ষকের সঙ্গেই দেখা করবেন তিনি। এমনটাই ঠিক ছিল। তবে কার্যক্ষেত্রে অন্য কিছুই ঘটল। প্রধানমমন্ত্রী একান্তে কথাও সারলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক অমিতাভ মিশ্রের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর টুইটেই সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ হতেই নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

[১৫ বছর ধরে ১ টাকা বেতন রেখে সমস্তটাই স্কুলে দান শিক্ষকের]

অমিতাভ মিশ্র একদশকেরও বেশি সময় ধরে গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যাতে ভালবেসে স্কুলে আসতে চায় সেদিকে তাঁর তীক্ষ্ণ নজর। এখানে যখন কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তখন টালির চালে শ্যাওলা পড়া। স্কুল চত্বরে আগাছার জঙ্গল। রীতিমতো সাধ্য সাধনা করে পড়ুয়াদের স্কুলে আনতে হয়। এহেন চিত্র বদলে দিতে সময় নেননি অমিতাভবাবু। তাঁর প্রচেষ্টায় টালির জায়গায় এল কংক্রিট। ভবন তৈরি হল। স্কুল ভবনের দেওয়ালে বিভিন্ন মহাপুরুষের প্রতিকৃতি, সঙ্গে তাঁদের বাণী। ক্লাসের দেওয়ালে রংবেরঙের সংখ্যা নামতার আকারে বসে আছে। দেখলেই পড়তে ইচ্ছে করবে। দেওয়ালে ঝুলছে পশুপাখির ছবি। সঙ্গে তাদের নাম ও বিবরণী। বাংলা বর্ণমালা। বই খুলে পড়তে না চাইলেও দেওয়াল দেখিয়ে খুদে পড়ুয়ার থেকে পড়া আদায় করে নেবেন শিক্ষক। পরিষ্কার জামা কাপড় পরে লাল কার্পেটে বসে শিক্ষকের পড়া শুনছে খুদেরা। সবার সামনে একটা করে ডেস্ক। তাতে রাখা বই খাতা। বলা বাহুল্য এখনও পর্যন্ত রাজ্যের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতরঞ্চি, কিম্বা বাড়ি থেকে আসন এনে বসার রেওয়াজ চালু রয়েছে। শিশুরাই আসন নিয়ে আসে বাড়ি থেকে। সেই জায়গায় ব্যাতিক্রম প্রধান শিক্ষক অমিতাভ মিশ্রের স্কুল। এ যেন স্বপ্নের বাগান। চোখ মুছে বাইরে বেরিয়ে এলেই বাগানের দিকে নজর পড়বে। সেখানে মহাপুরুষদের মূর্তি। স্কুল চত্বর যেন আস্ত পুরুলিয়া জেলা। কী নেই সেখানে। হাত বাড়ালেই ধামসা মাদলের প্রতিকৃতি। দেওয়াল জুড়ে ছৌ নাচের মুখোশ। বিভিন্ন গাছের সমারোহে জঙ্গলমহলের হাতছানি অনুভূত হবে গোবিন্দপুরের ওই স্কুলেই। একবুক ঔৎসুক্য নিয়ে প্রবেশ করলে মন ভরে অক্সিজেন নিয়ে ফিরবেন, হলফ করে বলা যায়। যাঁর সৌজন্যে ছবির মতো এই স্কুল, তিনি যদি ‘জাতীয় শিক্ষক’ না হন তো কে হবেন?

 

 

তবে পড়াশোনার পাঠেই থেমে থাকেননি তিনি। পড়ুয়াদের সংস্কৃতি চর্চাতেও মনোযোগী করিয়েছেন। একই সঙ্গে দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিধির পাঠ। সহ-শিক্ষকরাও তালমিলিয়ে কাজ করে গিয়েছেন। শৌচালয় ব্যবহার, হাত ধোয়ার কর্মসূচি, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। কী নেই সেই তালিকায়। শুধু স্কুলে এসে পড়ুয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে বাড়িতে গেলে ভুলে যাবে। তা হতে পারে না। তাই মাঝেমাঝে আচমকা পরিদর্শনে পড়ুয়ার বাড়িতেও চলে গিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রদত্ত শিক্ষা আদৌ কাজে এল কি না তা দেখতেই এই আগমন। রাজ্যের প্রত্যন্ত জেলা পুরুলিয়াতে কুসংস্কারের শেষ নেই তা বাল্যবিবাহ হোক, বা ডাইনি অপবাদে কাউকে মেরে ফেলা। এসব যে সমাজের বড় ব্যধি তা বোঝানোর দায়িত্ব নিয়েছেন গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। যাতে শিশুদের থেকেই সমাজ বদলায়। আগামীর পুরুলিয়া কুসংস্কার মুক্ত হয়।

[মধ্যরাতে ছাত্রের বাড়িতে কড়া নাড়েন, ‘খেপা মাস্টার’-কে চেনেন?]

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement