প্রতীকী ছবি।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মোবাইল চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় পুরুলিয়ায় নাম জড়িয়ে গিয়েছে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের। ঘর থেকে টেনে বার করে থানায় নিয়ে যাচ্ছি বলে রাস্তায় ফেলে ওই যুবককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তারপর পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই যুবক বিষ খেয়ে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে টামনা থানার চাকোলতোড় গ্রামের এই ঘটনায় বুধবার ওই সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ মোট ৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ৬ জনকেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে টামনা থানা ও পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম তাপস মহাপাত্র। তার বয়স ২০। তার বাড়ি টামনা থানার চাকলতোড় গ্রামে। ওই অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম মলয় পুইতন্ডি। তিনি টামনা থানায় কর্মরত। তার বাড়ি ওই চাকলতোড় গ্রামেই। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই যুবকের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্ত ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। এই ঘটনায় মোট ৬ জনের নামে অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সমগ্র ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তার পেশাগত পরিচয় যাই হোক না কেন বিধি মোতাবেক কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার। ওই দিন বিকাল ৫ টা নাগাদ পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার উরমা এলাকার তিনজন। সেই সঙ্গে টামনা থানার ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সহ চাকলতোড় গ্রামের বাপন মহাপাত্র ও আকাশ কৈবর্ত নিহত তাপসকে ঘর থেকে মারধর করতে করতে টেনে বার করে। তারপর মোটরবাইকে চাপিয়ে নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। মৃত তাপসের মা ভাদু মহাপাত্র টামনা থানার পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছেন, ” ৭ই জুলাই বিকাল ৫ টা নাগাদ সোমবার আমার ছেলে তাপস বাড়িতে ছিল। সেই সময় চাকলতোড় গ্রামের তিনজন, সঙ্গে আরও তিনজন যাদেরকে আমরা চিনি না। তারা বাড়িতে ঢুকে আমার ছেলেকে মারতে শুরু করে দেয়। বাড়ি থেকে বের করে একটি মোটরবাইকে অজানা দু’জন আমার ছেলেকে নিয়ে চলে যায়। রীতিমতো রক্তাক্ত অবস্থায় বাইকে কোথায় নিয়ে চলে যায় আমরা কিছুই বুঝতে পারি না। মঙ্গলবার আমরা জানতে পারি আমার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি আছে। ওই দিন রাতে আমরা হাসপাতালে যখন তাকে দেখতে যায়। তখন ছেলে আর বেঁচে নেই।”
মৃতের পিসতুতো দাদা অজয় মাহান্তি বলেন, ” মোবাইল ‘চোর’ বলে আমার মামাতো ভাইকে ঘর থেকে মারতে মারতে বের করে। থানায় নিয়ে যাবে বলে জানায়। সিভিক ভলান্টিয়ার থাকায় আমাদের সেটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু সিভিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা থানায় খোঁজ করলে কোন খবর পাইনি। পরে রাস্তায় ফেলে তাকে মারধোর করা হয় বলে শুনেছি। আমাদেরকে পরবর্তীকালে জানানো হয় তাপস নাকি বিষ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আমরা আমরা এই খবর পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখি তার শরীর জুড়ে কালশিটে দাগ। মারধর বা পেটানো হলে যে দাগ হয় সেই দাগ রয়েছে ওর শরীরে। ওই কালশিটে দাগের আমাদের ছবি তোলা আছে। কিন্তু ভাইকে আর বাঁচাতে পারলাম না।” তাপসের মায়ের অভিযোগ তার ছেলের মৃত্যুর পর অভিযুক্তরা এই ঘটনা মীমাংসা করার জন্য তাদেরকে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় রীতিমত পরিকল্পনা করে ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ছেলেকে খুন করা হয় বলে ভাদু দেবী জানিয়েছেন। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের ছেলে কোনভাবেই মোবাইল ‘চোর’ হতে পারে না। অপবাদ দিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.