সুমন করাতি, হুগলি: বেহাল রাস্তা। নিকাশি ব্যবস্থার অবস্থাও দুর্বিষহ। দিনের পর দিন একেবারে নরক যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে হুগলি জেলার কোন্নগরের নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের, যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষজন। অভিযোগ, এই বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এমনকী পুজোর আগে রাস্তার কাজ যে সম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয় তাও জানিয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান। একইসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে স্কুলে যাওয়ার নিদান তাঁর। খোদ পঞ্চায়েত প্রধানের এহেন মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা। দায়িত্ব পালনে প্রধান সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে কটাক্ষ বিরোধীদের।
সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আপামর বাঙালি মেতে উঠবেন এই উৎসবে। কিন্তু মন ভালো নেই নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মানুষের। তাঁদের কাছে দুর্গাপুজো একেবারে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার রাস্তা বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অল্প বৃষ্টি হলেই একেবারে হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। সেই সময় একেবারে বিপদ হাতে নিয়ে ওই এলাকায় চলাফেরা করতে হয় বলে দাবি স্থানীয়দের। শুধু তাই নয়, এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় স্কুল রয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রছাত্রীরা ওই সমস্ত স্কুলে পড়াশোনা করতে আসেন। কিন্তু রাস্তার যা বেহাল অবস্থা তাতে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় সে এলাকার মানুষজন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা অরিত্র সাহা বলেন, ”সামনেই পুজো আর এলাকার রাস্তা ঘাটের যা অবস্থা অবিলম্বে সব ঠিক করা দরকার। প্রত্যেক মানুষ সমস্যায় পড়ছেন।” যদিও নবগ্রাম এলাকার বেহাল অবস্থা নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান সোমা দাসকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ”হ্যাঁ, এই কথাটা সত্যি যে এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। এই এলাকায় বেশ কয়েকটা স্কুল রয়েছে যেকোনও সময় হয়তো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, যেটা খুবই আতঙ্কের। তাই স্কুলের বাচ্ছারা এখন একটু যদি অন্য কোনও রাস্তা দিয়ে ঘুরে স্কুলে যায় সেটাই ভালো।”
এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধানের আরও দাবি, ”অনেক রাস্তা ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু এই বছর বৃষ্টি খুবই বেশি হয়েছে। তাই ঠিক ভাবে কাজ করা যাচ্ছে না।” ফলে চেষ্টা করলেও পুজোর আগে রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করা হয়তো সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য সোমা দাসের। যদিও দ্রুত কাজ করার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য তাঁর।
পঞ্চায়েত প্রধানের এহেন বক্তব্যের পরেই শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা! তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে বিরোধীরা। এই বিষয়ে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি রাজেশ রজক বলেন, ”নবগ্রাম পঞ্চায়েত তোলাবাজি আর মানুষের থেকে ট্যাক্স কালেকশনে ফার্স্ট, কিন্তু মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার বিষয়ে লাস্ট। এলাকায় দেখা যাচ্ছে যে এখন যিনি প্রধান রয়েছেন তিনি সিপিএম আর প্রোমোটারদের নিয়ে পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন। আগে কখনও নবগ্রাম এলাকার এত খারাপ অবস্থা হয়নি।”
অন্যদিকে সিপিএম দলের পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ”এই পঞ্চায়েত প্রধান পঞ্চায়েত চালানোর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাঁরা পঞ্চায়েতের বোর্ড মিটিং থেকে এলাকায় মিছিল সহ বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এলাকার রাস্তাঘাট আর নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আর প্রধান তো ব্যর্থই। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকেও এর দায় নিতে হবে। পঞ্চায়েত সমিতি, জেলাপরিষদ, বিধায়ক, সাংসদ সব তৃণমূলের তাহলে দায় সম্পূর্ণ তৃণমূলকে নিতে হবে এই বেহাল অবস্থার জন্য।” শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত প্রধান যেভাবে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের ঘুরে স্কুলে যেতে বলছেন সেটি খুবই নিন্দনীয় বলেও মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা।
নবগ্রাম এলাকার রাস্তার অবস্থা যে বেহাল তা মেনে নিয়েছেন স্থানীয় স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব মজুমদারও। তিনি বলেন, ”এটা সত্যি কথা আগে কখনও নবগ্রাম এলাকার রাস্তাঘাট এত বেহাল অবস্থায় থাকেনি।” তবে এজন্য কেন্দ্রকেই একহাত নিয়েছেন অপূর্ববাবু। তাঁর কথায়, ”কেন্দ্রের কিছু টাকা আটকে আছে। আর এটাও তিনি বুঝতে পারছেন না যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় অনলাইনে ট্যাক্স নেওয়া শুরু হয়ে গেলেও নবগ্রাম পঞ্চায়েতের কীসের সমস্যা হচ্ছে।” তবে প্রধান যেভাবে স্কুলের বাচ্চাদের ঘুরে স্কুলে যাওয়ার নিদান দিয়েছেন তা কোনওভাবেই ঠিক নয় বলেও মন্তব্য তৃণমূলনেতার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.