টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: স্কুলে কি পাঠদান হয় নাকি ইদানিং তা লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের ভেন্যু? শ্রেণিকক্ষগুলো সব মেকআপ আর রিহার্সালের রুম? এই প্রশ্নে আপাতত তুমুল তর্ক-বিতর্ক বাঁকুড়া জেলার শিক্ষামহলে। বাঁকুড়া টাউন গার্লস স্কুলে এক বেসরকারি বিনোদন সংস্থার ‘অডিশন ক্যাম্প’ বসেছে, আর সেটা স্কুলে পড়াশোনার সময়ে! শুধু তাই নয়, এমনকী প্রধান শিক্ষিকা নিজেই স্কুল বন্ধ করে ওই ‘শো’র প্রচার করেছেন নিজের ফেসবুক পেজে। বিদ্যালয় নয়, বাঁকুড়া টাউন গার্লস স্কুল যেন কোনও শ্যুটিং স্পট। শিক্ষার মন্দিরে এমন এক দৃশ্য দেখে বিস্মিত অভিভাবক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যখন এই ঘটনা নিয়ে জোর চর্চা চলছে, তখন প্রধান শিক্ষিকা মুকুলবালা মান্ডি ‘নিরুদ্দেশ’। তাঁর মোবাইল সুইচড অফ, কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। অভিযোগ উঠছে, পুরো বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে। এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল শিক্ষা সেলের বাঁকুড়া জেলার সভাপতি গোরাচাঁদ কান্ত। তিনি বলেন, “স্কুলের চৌহদ্দিতে এমন নোংরামো বরদাস্ত করা হবে না। এই ঘটনার তদন্ত চাই।”
এদিকে, বামপন্থী ও বিজেপি ঘনিষ্ঠ শিক্ষক সংগঠনগুলিও এই ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘শিক্ষার অপমান’ বলে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে। এক শিক্ষক সংগঠনের মন্তব্য, “এটা স্কুল নয়, যেন এক চটুল বাজার! শিক্ষার নামে বাণিজ্যের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।” শিক্ষা দপ্তরের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া না এলেও, জেলার স্কুল পরিদর্শক পীযূষকান্তি বেরার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সাড়া মেলেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে, কেবল পরিকাঠামো নয়, শিক্ষার নৈতিক ভিতটাই আজ ভেঙে পড়ছে। বাঁকুড়ার এই স্কুল যেন হয়ে উঠেছে এক দৃষ্টান্ত – কীভাবে এক ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ ধীরে ধীরে মেকআপের আড়ালে হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার আসল আলো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.