বাড়ির সামনেই রাখা হয় কফিনবন্দি দেহ। নিজস্ব চিত্র
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সকাল থেকেই ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন বাবা-মা-সহ পরিবারের সদস্যরা। এদিন বিকেলে ছেলে গ্রামে এল কফিনবন্দি হয়ে। উপরে মোড়া আছে ভারতের জাতীয় পতাকা। কফিন দেখে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন প্রৌঢ় বাবা-মা। প্রায় লক্ষাধিক গ্রামের মানুষ সেসময় কার্যত ভিড় করেছেন বীরভূমের রাজনগর কুন্ডিরা এলাকায়। সেনাবাহিনীর গার্ড অফ অনার ও সাধারণ মানুষ, পরিবারের সদস্যদের চোখের জলে একসময় বিদায় নিলেন শহিদ জওয়ান, লালমাটির ছেলে সুজয় ঘোষ। মাত্র ২৮ বছর বয়সে কাশ্মীরের দক্ষিণ অনন্তনাগের গাদুলেতে তুষারঝড়ের কবলে প্রাণ হারালেন এই জওয়ান। মুর্শিদাবাদের সন্তান ভারতীয় জওয়ান পলাশ ঘোষও প্রাণ হারিয়েছেন ওই ঘটনায়।
গত বুধবার কাশ্মীরের দক্ষিণ অনন্তনাগের গাদুলে সন্ত্রাসদমন অপারেশন চালায় ভারতীয় সেনা। সেই অভিযান দলে ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ ছাড়াও ছিলেন ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষ। অভিযান চলাকালীন তুষারঝড়ের কবলে পড়েন তাঁরা। নিখোঁজ হয়ে যান পলাশ ও সুজয়। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাতে থাকে সেনাবাহিনী। পরে উদ্ধার করা হলেও দু’জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। গতকাল, শুক্রবারই বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে দুই জওয়ানের বাড়িতে ওই দুঃসংবাদ জানানো হয়। আজ, শনিবার দেহ আসবে সেই কথাও বলা হয়েছিল।
আজ, শনিবার সকাল থেকেই বীরভূমের রাজনগর কুন্ডিরা এলাকায় ভিড় করেছিলেন সাধারণ মানুষ। আশপাশের বহু গ্রাম থেকেও লোকজন আসতে থাকে। কাশ্মীর থেকে দুর্গাপুরের অণ্ডাল বিমানবন্দরে প্রথমে কফিনবন্দি মৃতদেহ আনা হয়। সেখান থেকে পানাগড়ের সেনাঘাঁটি হয়ে সুজয়ের কফিনবন্দি দেহ পৌঁছয় কুন্ডিরায়। এদিন বিকেলে সেনাবাহিনী দেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির সামনে আসে। বাড়ির সামনের মাঠে রাখা হয়েছিল সুজয়ের কফিনবন্দি দেহ। সুজয় বাড়ির মেজো ছেলে। পরিবারে আছেন ঠাকুরদা, বাবা, মা, দাদা ও ভাই। কফিন দেখে চোখের জল বাঁধ মানে বাবা-মায়ের। ওই পরিবার মূলত কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। ছোট থেকেই সুজয় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। পরে সেই স্বপ্ন বাস্তবও হয়। তবে মাত্র ২৮ বছর বয়সেই শেষ হয়ে গেল তাঁর জীবন।
সেনাবাহিনীর তরফে এদিন গান স্যালুট দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ থেকে পরিবারের সদস্যরা শহিদ জওয়ানকে শেষশ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় ও তৃণমূল নেতা কাজল শেখ-সহ অন্যান্যরা। এরপর বক্রেশ্বর মহাশ্মশানে জওয়ানের শেষকৃত্য হয়। জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “সুজয় ঘোষের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি। সকলেই ব্যথিত। তাঁর অকালপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ এলাকা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.