Advertisement
Advertisement
Asansol

স্কুলে রাত কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা! শিকেয় পড়াশোনা, প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করতেই জুটল হুঁশিয়ারি

ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

Some labours are spending night at a school, raises controversy in Asansol
Published by: Kousik Sinha
  • Posted:September 10, 2025 5:07 pm
  • Updated:September 10, 2025 5:07 pm   

শেখর চন্দ্র, আসানসোল: স্কুলের মধ্যেই গত সাতদিন ধরে রয়েছেন ১৩ থেকে ১৪ জন নির্মাণকর্মী। স্কুল চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে একের পর এক পিচের ড্রাম সহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী। শুধু তাই নয়, স্কুলের মধ্যে চলছে রান্নাবান্নাও। কার্যত শিকেয় পঠনপাঠন! কোনও রকমে একটি ক্লাসে চলছে পড়াশোনা। ঘটনাস্থল বারাবনি ব্লকের জনার্দন সায়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, স্কুলভবনের মধ্যেই কীভাবে দিনের পর দিন নির্মাণ শ্রমিকরা রয়েছেন। এমনকী কে তাঁদের থাকতে দিয়েছেন, তা নিয়েও উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।

Advertisement

যদিও এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতেই একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। কেন সেখানে খবর করতে যাওয়া হয়েছে তা নিয়ে পাল্টা সংবাদমাধ্যমকেই আক্রমণ করে বসেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এমনকী হুঁশিয়ারি দিতেও শোনা যায়।

আসানসোলের জনার্দন সায়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাতায় কলমে ১৫ জন পড়ুয়া বর্তমানে। রয়েছেন দু’জন শিক্ষক। নিয়মিত পড়তে আসে ৪ থেকে ৫ জন পড়ুয়া। তবে প্রত্যেকদিন স্কুলে আসেন না প্রধান শিক্ষক। ফলে স্কুলের মধ্যেই দিনের পর দিন শ্রমিকরা কীভাবে থাকছেন, তা জানতে সংবাদমাধ্যমের তরফে ওই প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হয়। যদিও প্রথমে কবীর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ” কথা বলতে বাধ্য নন। পরে বলেন চারটের পর কথা বলবো।” এরপর বিকেল চারটের পর ফের একবার ফোন করা হয় তাঁকে। সেই সময়ে ওই প্রধান শিক্ষক জানান, ডিউটি আওয়ার্স শেষ। আর কথা বলবেন না।

হাল ছাড়েননি সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। ফের বারাবনি ব্লকের জনার্দন সায়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করা হয়। কেন শ্রমিকরা স্কুলের মধ্যে রয়েছেন? এই বিষয়ে জানতে চাওয়া মাত্রই একেবারে জ্বলে ওঠেন। সম্পূর্ণ ঘটনা এড়িয়ে একেবারে সংবাদমাধ্যমকেই একহাত নেন। কীভাবে স্কুলে সংবাদমাধ্যম ঢুকল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ”সংবাদমাধ্যম কী করে স্কুলে ঢুকলো। কার অনুমতি নিয়েছেন? মুখ্যমন্ত্রী নাকি শিক্ষামন্ত্রী? আপনারা আতঙ্কবাদী বা জঙ্গি নন তার কি প্রমাণ ? আপনাদের বাঁশ করে দেবো।”

কিন্তু কোন কাজের জন্য শ্রমিকরা সেখানে রয়েছেন? জানা যায়, বারাবনির লালগঞ্জ থেকে সালানপুর যাওয়ার রাস্তা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সেই কাজ করা হচ্ছে। সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদেরই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ওই স্কুলের মধ্যে। পাশাপাশি পিচের ড্রাম রাখা, কাঁচামাল রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে স্কুলে। যদিও এই ঘটনা জানার পরেই চরম ক্ষুব্ধ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ”স্কুল ভবন এরকম ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে না।” তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি। শুধু তাই নয়, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও এদিন আশ্বাস দেন রথীন্দ্রনাথ মজুমদার।

অন্যদিকে এই ঘটনায় ময়দানে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি জেলা সম্পাদক অভিজিৎ রায় বলেন, ”শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনেকদিন আগেই পর্যদুস্ত করেছে।” কোন অধিকার থেকে ১৪ জন শ্রমিক সেখানে থাকছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিজেপি নেতা। একইসঙ্গে কে এই অনুমতি দিল তা নিয়ে প্রশ্ন তাঁর। এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন স্থানীয় প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক প্রসেনজিৎ পুইতন্ডিও। তাঁর দাবি, ”শিক্ষা ব্যবস্থা লাটে উঠে গিয়েছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ।” যদিও এই বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলে জানিয়েছেন বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত সিং। তিনি বলেন, ”বিষয়টি তার জানা নেই। একেবারে অন্যায় কাজ।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ