স্টাফ রিপোর্টার: চাকরি ফেরতের দাবিতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ রাজ্যের চাকরিহারা শিক্ষকরা। দেশের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক প্রধানের কাছে চিঠি দিলেন শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল। স্বরাষ্ট্রদপ্তরের চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি বাংলা থেকেও পাঠানো হচ্ছে চিঠি। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেগঘন আবেদন, ‘হয় সুবিচার দিন, নয়তো সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিন।’ পাশাপাশি প্রতিনিধি দল কংগ্রেস, বিজেপি, জনতা দল ইউনাইটেড-সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনার করার দাবি তুলেছেন।
সুপ্রিম রায়ে বাতিল হয়েছে ১৭,২০৬ জন শিক্ষকের চাকরি। এর মধ্যে প্রায় ১৫,৪০৩ জন শিক্ষককে ‘নট-টেনটেড’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-র রিপোর্ট ও নিয়োগকারী এসএসসি-র বক্তব্যও এই শিক্ষকদের ‘নির্দোষ’ বলেই স্বীকৃতি দিয়েছে। তবুও আদালতের রায়ে তাঁরা চাকরিহারা।
শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল রাজধানীতে গিয়ে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা করে সংসদে আলোচনা করার দাবি তুলছেন। একই সময় বাংলা থেকে হাজার হাজার চিঠি যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে। চিঠিতে যোগ্য শিক্ষকরা লিখেছেন, ‘আমি এবং আমার মতো আরও অনেকেই যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির প্রমাণ নেই। তাঁদের দীর্ঘ সাত বছরের চাকরি জীবনের পর বিনা বিচারে চাকরি হারিয়েছি। এখন আবার নতুন করে পরীক্ষা দিতে বলা হচ্ছে। বয়স, পরিস্থিতি ও সময়ের বিচারে তা কার্যত অসম্ভব।’ যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের তরফে পাঠানো ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পথ খুঁজে না পেয়ে একাধিক সহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন। মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহননের চেষ্টা করেছেন।’
তাঁদের কথায়, “যখন নির্দোষদের দণ্ড দেওয়া হয়, তখন তা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়। দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপরও গভীর আঘাত।” রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা আরও লিখেছেন, ‘আপনি এই দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রধান। আপনি দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও ক্ষমা করার অধিকার রাখেন। আমি বিনীত অনুরোধ করছি, আমাকে এই দণ্ড থেকে মুক্তি দিন। অথবা স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিন। অথবা এমন একটি নির্দেশ দিন যাতে এই রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ হয়।’ চিঠির শেষে নাম, তারিখ, নিজেদের ঠিকানা দিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, পরিবারের ভরণপোষণ কঠিন হয়ে পড়েছে। সন্তানের শিক্ষার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে। এই রায়ে সামাজিক সম্মান নষ্ট হয়েছে।
যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে শুভাশিস পান, মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “যখন আদালত নিজেই কাউকে ‘নট-টেনটেড’ ঘোষণা করছে তখন কেন সেই ব্যক্তি চাকরি হারাচ্ছে? দুর্নীতি করে দোষ করেছে যারা, তাদের বদলে যাদের দোষ নেই, তাঁরা সাজা পাবেন কেন? এবার যে পরীক্ষা দিতে বলা হচ্ছে তাতে যে বেনিয়ম হবে না তার গ্যারেন্টি কে দেবে? সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আমাদের কাছে মৃত্যুদণ্ডের শামিল। ভারতবর্ষের ইতিহাসে বোধহয় এই প্রথম রায়ে যাঁদের দোষী বলা নেই, তাঁদের সাজা দেওয়া হল। আমরা এখন রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে রইলাম।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.