শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: লোকসভা নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা। নিজের সংসদীয় এলাকা ঘাটালের তিন প্রশাসনিক পদ থেকে আচমকা ইস্তফা দিলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেব (Dev)। শনিবার ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ঘাটাল (Ghatal) রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের সহ সভাপতি পদও ছেড়েছেন দীপক অধিকারী। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন দেব। কিন্তু কী কারণে তাঁর এই সিদ্ধান্ত, সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, তাঁর পদত্যাগের খবর জানা নেই। উল্লেখ্য, ঘাটালের সাংসদ হওয়ার কারণে এই সব পদে ছিলেন দেব।
ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদানিং দলের সঙ্গে বিশেষ করে ঘাটাল উৎসব থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি বিষয়ে দেবকে বাদ দিয়ে দলেরই একটি গোষ্ঠী কাজ করতে চেয়েছেন। যা তিনি ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি। তার পর থেকে দেবের সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়ছিল। দেব ঘাটালে দলের এই সমস্যা মেটাতে চাইলেও আরেক গোষ্ঠী তা চায়নি বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হওয়ার পর থেকে দেবকে ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া তাঁকে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষীকি মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানও করা হয়। ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানও করা হয় দেবকে। একসময় তাঁকে ঘাটাল কৃষি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানও করা হয়েছিল।
শোনা যায়, ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান হিসাবে দেবকে মেনে নিতে পারেননি তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক শংকর দোলই ও তাঁর অনুগামীরা। দেবের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আদালতে মামলাও করেন শংকরবাবুর অনুগামীরা। এমনকি ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান পদেও মানতে পারেননি তাঁরা। ফলে দেবের উপর চাপ বাড়ছিলই। এই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি মারাত্মক অভিযোগ তুলে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জমা পড়ে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি হঠাৎই ফোন করে জানতে চান দেবের আমলে ঘাটাল কৃষি ব্যাঙ্কে ১০০ জন, ঘাটাল কলেজে ২২ জন ও ঘাটাল হাসপাতালে ৫০ জন কর্মী অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।
এসব জানার পরই ধৈর্যে বাঁধ ভেঙে যায় দেবের। তিনি ডিজিকে বলেন, ”আমি ওই পদগুলি থেকে পদত্যাগ করছি, আপনি তদন্ত করুন।” তার পরই দেব পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এ বিষয়ে দেব কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও তাঁর প্রতিনিধি রামপদ মান্না বলেন, ‘‘দলেরই একটি অংশ সাংসদের বিরুদ্ধে লাগাতার মিথ্যা অভিয়োগ করে চলেছেন। সর্বশেষ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ক, কলেজ ও হাসপাতালে অবৈধভাবে নিয়োগের অভিযোগ জমা পড়েছে। অথচ এই সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে কোনও নিয়োগই হয়নি। নিজের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি দলের একাংশের ভূমিকায় খুবই বিরক্ত। তাই এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ লোকসভা ভোটের মুখে এই পদত্যাগ দলের মধ্যে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এনিয়ে ঘাটাল লোকসভা সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক বিকাশ কর বলেন, ‘‘দেবের পদত্যাগের কথা সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি । কেন তিনি পদত্যাগ করলেন তা আমাদের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.