Advertisement
Advertisement
Kurmi

কোটশিলায় কুড়মি হামলায় জখম ২ আইপিএস, ২৯ জনকে গ্রেপ্তার পুরুলিয়া জেলা পুলিশের

৫ অক্টোবর সন্ত্রাসবিরোধী সভার ডাক দিয়েছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ।

Two IPS officer injured due to Kurmi protest in Purulia

স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে কোটশিলা স্টেশন। রবিবার বিকালে। ছবি: সুমিত বিশ্বাস

Published by: Arpan Das
  • Posted:September 22, 2025 12:37 am
  • Updated:September 22, 2025 12:37 am   

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শিশু ও মহিলাদের সামনে রেখে কোটশিলায় পুলিশের উপর হামলা করে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সেই কারণেই পুরুলিয়া জেলা পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে একটু দেরি হয়। আর তাতেই দুই আইপিএস অফিসার-সহ মোট ৫ জন পুলিশ কর্মী-আধিকারিক জখম হন। এরপরেও কোটশিলার রেললাইনের ট্র্যাকে কোনও রকম অবরোধ করতে পারেনি ওই সামাজিক সংগঠন। আটকে পড়েনি কোনও ট্রেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সামাল দিতে রবিবার বিকালে কোটশিলা স্টেশনে দাঁড়িয়ে এই কথা জানান পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

এই ঘটনায় পুরুলিয়া জেলা পুলিশ মোট ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া আলাদাভাবে জিআরপির হাতেও গ্রেপ্তার হয়েছে। ধৃতদের সকলকেই রবিবার পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হয়। তাদের মধ্যে বেশ কিছু কুড়মি নেতা-কর্মী- সমর্থকদের যেমন পুলিশ হেফাজত হয়েছে। তেমনই জেল হেফাজত হয়। জখম ৫ পুলিশ কর্মী-আধিকারিকের মধ্যে ২ জন আইপিএস রয়েছেন। তারা হলেন শিলিগুড়ি ডিসি কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ ও আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল ধ্রুব দাস। আদিবাসী কুড়মি সমাজের অভিযোগ, রেল অবরোধ রুখে দেওয়ার নামে তাদের উপর পুলিশি সন্ত্রাস চলেছে। এই কারণে তারা সন্ত্রাস বিরোধী সভা ও স্মারকলিপি কর্মসূচি সংঘঠিত করবেন। আদিবাসী কুড়মি সমাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর পর ৫ অক্টোবর পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ওই সন্ত্রাসবিরোধী সভা হবে। সেই দিনই ডিএম ও এসপি-র কাছে স্মারকলিপি দেবে ওই সামাজিক সংগঠন।

এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের কোটশিলা স্টেশনে পুলিশের উপর হামলার পর ক্রমেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ওই স্টেশন। শনিবার সকালে কোটশিলা থানার যে জিউদারু গ্রাম থেকে পুলিশের সঙ্গে কুড়মিদের সংঘাত বেঁধেছিল সেই গ্রাম সহ লাগোয়া চয়াডি এখনও থমথমে। তার কারণ যে ২৯ জন পুরুলিয়া জেলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে, তাদের অধিকাংশ জিউদারু ও চয়াডির বাসিন্দা। এছাড়া জয়পুর ও ঝালদা এলাকার বাসিন্দাও রয়েছে। কোটশিলা থানা এলাকার বাসিন্দা সবচেয়ে বেশি। সেই সংখ্যাটা ২১ জন। এছাড়া আড়শার ২ জন এবং ঝালদার তুলিনের একজন রয়েছে। পাঁচজন রয়েছে জয়পুর থানা এলাকার। পুলিশের উপর হামলার ঘটনার পর পুলিশ যে লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। সেই বিষয়টিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পুলিশি তাণ্ডব বলে ব্যাখ্যা করেন।

রবিবার আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো জানান, “আমাদের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের উপর ব্যাপক পুলিশি সন্ত্রাস চলছে। সেই জন্য নেতা-কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। কান্টাডিতে যেসব গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেই গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা।” তার অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায় নাকা চেকিং-র নামে তাদের নেতা, কর্মী, সমর্থকদেরকে পথ অবরোধস্থলে যেতে বাধা দিয়েছিল পুলিশ। সেই জন্যই তারা অবরোধ করতে পারেননি। এছাড়া গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঢুকে সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। নেতাদেরকে ডাকা হয়েছে। গাড়ি না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় মালিকদেরকে। তাই আমরা আগামী ৫ অক্টোবর পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী সভা করব পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে।”

অন্যদিকে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শনিবার সন্ধ্যার আগে থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কোথাও কোনো অবরোধ হয়নি। ফলে কোন ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে নি। আন্দোলনকারীরা শিশু এবং মহিলাদেরকে সামনে রেখে আমাদের উপর রেল লাইনের ট্র্যাকে থাকা পাথর ছুঁড়ে আঘাত করা হয়। সেই কারণেই আমাদের পদক্ষেপ নিতে দেরি হয়। আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী জখম হন।” এদিন সকাল থেকে আদিবাসী কুড়মি সমাজের তরফে সমাজ মাধ্যমে পুলিশি নির্যাতনে একটি শিশুর মাথা ফাটার ছবি দেখিয়ে নিন্দা করা হয়। এই প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার বলেন, “এই বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কিন্তু কোথায় কোন শিশু জখম হয়েছে, এই ব্যাপারে আমরা সকাল থেকে নানান খোঁজখবর করার পরেও কোনও কিছু খোঁজ পাইনি। অনুরোধ করছি কোন সহৃদয় ব্যক্তি যদি আমাদেরকে এই বিষয়টি জানান আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেব। কিন্তু অযথা বিভ্রান্তিমূলক যদি সমাজ মাধ্যমে ছড়ানো হয় তাহলে আইনত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

Two IPS officer injured due to Kurmi protest in Purulia
থমথমে কোটশিলার সেই জিউদারু গ্রাম। রবিবার। ছবি: সুমিত বিশ্বাস।

এই জেলা দিয়ে প্রায় ২৫০ কিমি রেল লাইনের ট্র্যাক গিয়েছে। যেখানে স্টেশন রয়েছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ টি। তার মধ্যে কোটশিলা স্টেশন বাদ দিয়ে সবকটি স্টেশনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ছিল। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে তারা কাজ করেন বলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে। তাদের কথায় কেউ যদি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেন সেটাতে তাদের বাধা দেওয়ার কোন প্রশ্ন-ই ওঠে না। অতীতেও এই সংগঠন হুলহুলিটাড়ে সমাবেশ করেছিল। সেখানে তাদের সব রকম সহায়তা করা হয় বলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়।

এদিন জিউদারু গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রাম একেবারে থমথমে। তবে ওই সামাজিক সংগঠনের তরফে পুরুষশূন্য গ্রাম বলে অভিযোগ করা হলেও বাস্তবে তা ছিল না। বহু যুবক তথা পুরুষ মানুষকে এদিন ওই গ্রামে ঘুরতে দেখা যায়। তবে উৎসবের মরশুমে যেমন আমেজ থাকে তা ছিল না। গ্রামের কুড়মি জনজাতি ছাড়াও ওই সম্প্রদায়ের মানুষজনও জানিয়েছেন তাদের এই অবরোধকে হাইকোর্ট মান্যতা দেয়নি। বেআইনি বলেছিল। জিউদারুর পাশে চয়াডি গ্রামের বাসিন্দা রাজশ্রী মাহাতো বলেন, “আমাদের আন্দোলনকে বেআইনি বলেছিল হাই কোর্ট। কিন্তু পুলিশ তো আগে থেকে আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে।” অন্যদিকে জিউদারু গ্রামের বাসিন্দা মণীন্দ্র ঘাসি বলেন, “পুজোর মুখে এরকম রেল অবরোধ আমরা সমর্থন করি না। যারা অন্যায় ভাবে এই অবরোধ করেছিল তাদের জন্যই আজকে গ্রামের অবস্থা ঠিক নেই।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ