Advertisement
Advertisement
Jhargram

নকল সিও, গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে চলছে দেদার মাফিয়ারাজ! রাজস্বের ‘গুড়ে বালি’

বালি পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

West Bengal Govt deprived from huge revenue which may come from sand Jhargram
Published by: Kousik Sinha
  • Posted:September 9, 2025 6:34 pm
  • Updated:September 9, 2025 8:06 pm  

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: নকল সিও, গাড়ির নম্বর প্লেট বদলের মতো বিষয়গুলি বালি মাফিয়াদের তুরুপের তাস! নদী ঘাটে ‘ইধার কা মাল উধার’ করে অবাধে চলছে বালি পাচার। সবার নজর এড়িয়েই সেই বালি চলে যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। এমনকী ভিন রাজ্যেও এই বালির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘টাকা মাটি-মাটি টাকা’, কিন্তু বালি মাফিয়াদের কাছে এই উক্তি শুধুই ‘বালি টাকা, টাকা বালি’। যদিও মাঝে মধ্যেই পুলিশি অভিযানে অবৈধভাবে বালির গাড়ি ধরা পড়ছে।

Advertisement

কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের চোখে দিয়ে চলছে দেদার বালির কারবার। আর তাতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। যদিও গত এক বছরে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ে সর্বকালীন রেকর্ড করেছে। আর এর মধ্যে রয়েছে বালিও! সব থেকে বেশি রাজস্ব বালি থেকেও আদায় করেছে প্রশাসন। কিন্তু যেভাবে জেলার সুবর্ণরেখা, কংসাবতী নদীর পার থেকে বিধি নিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বালি তোলা হচ্ছে তাতে পুলিশ, প্রশাসনের লাগাম আরও কড়ার দাবি উঠছে। আর তা হলে রাজস্ব আরও কয়েক গুণ বেশি আসত বলেই মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু কীভাবে চলছে বালি পাচার? জানা গিয়েছে, এক নদীর ক্যারিং অর্ডার দেখিয়ে অন্য নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে। গাড়ির নম্বর প্লেটের ক্ষেত্রেও কারচুপি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, অভিযোগ, একই নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে বহু গাড়িতে। এর সঙ্গেই বালি খাদানগুলিকে বালি তোলার ক্ষেত্রে যে অনুমতি দেওয়া হয়, সেই অনুমতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবাধে অতিরিক্ত আরও বালি তোলা হয় বলেও অভিযোগ। কয়েক মাস আগেও নকল সিও, ভুয়ো নম্বর প্লেট লাগিয়ে বালি নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের জালে ধরা পড়েছিল একটি গাড়ি। পুলিশের জালে ধরা পড়ে চারজন। কিন্তু এরপরেও কোথায় কোথাও নজরদারিতে গাফিলতি রয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

এই বিষয়ে পুলিশ, প্রশাসনের একাংশকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, বালি পাচারকারীদের উপর এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী পুলিশ, সরকারি আধিকারিকদের হাত রয়েছে। আর তাতেই চলছে বেআইনি কারবার। একেবারে রাতের অন্ধকারে সমস্ত নজরদারি এড়িয়ে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ট্রাকের পর ট্রাক বালি লোড হয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আদায় হওয়া রাজস্বের ক্ষেত্রে রেকর্ড জায়গায় স্থান করে নিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ থেকে ২০২৫ সালে ১৫ এপ্রিল এই এক বছরে জেলার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩. ৪৯ কোটি টাকা। সেই জায়গা থেকে এই লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৫৩১.৮৫ কোটি টাকা। যা কিনা লক্ষমাত্রার থেকে প্রায় সাড়ে সাতগুণ বেশি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে বালির রাজস্ব, জরিমানা থেকে প্রায় ৪৮৭ কোটি। মাটি ও মোরাম থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন ক্ষুদ্র খনিজ এবং এর থেকে জরিমানা বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪০,৪৩,২৯,১৮৩ টাকা। হাট এবং বাজারের ভাড়া বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯,৯৮,৮৮৪ টাকা। জমির দীর্ঘ মেয়াদী এবং স্বল্প মেয়াদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১,৪৭,১২,২১১ টাকা। জমির রুপান্তরের ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,১৬,৮৭০ টাকা। জমির মিউটেশন ফি বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ১,৩৮,২৮,৪৫৪ টাকা। ঝাড়গ্রামের ইতিহাসে সর্বকালীন রাজস্ব আদায়ের এই সাফল্য বেনজির।

তবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতসকাচের নিচে এখন ঝাড়গ্রাম জেলার বহু রাঘব বোয়াল।জেলা বিভিন্ন নদীর বালি তোলা,পরিবহন ঘিরে ব্যাপক বে নিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এখন দেখার কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে ক’টা কেউটে বের হয়। যদিও এই বিষয়ে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, “প্রশাসনিক নজরদারি যথেষ্ট রয়েছে। প্রায় অভিযান চালানো হয়। বিভিন্ন সময়ে বেনিয়ম ধরা পড়েছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। আর সেই কারণেই গত এক বছরে বালি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ে ঝাড়গ্রাম সর্বকালীন রেকর্ড করছে। যেটুকু ফাঁকফোকর রয়েছে সেই দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। “

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement