অর্ণব দাস, বারাকপুর: বহু টানাপোড়েনের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে শনিবার সন্ধ্যার পর ২০১৬ সালে বাতিল হওয়ার প্যানেলের পর ‘দাগি’দের তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। মধ্যরাতে আবার সেই তালিকায় একাধিক নাম জুড়েছে। রবিবার সকালে দেখা যাচ্ছে, ‘দাগি’র তালিকায় রয়েছে পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষের পুত্রবধূ শম্পা ঘোষের নাম। এনিয়ে শোরগোল শুরু হতেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন বিধায়ক। তাঁর সাফ কথা, ”এনিয়ে বিশেষ কিছু বলা যায়নি। সবটাই তো আদালতের নির্দেশে হয়েছে। এবার আদালতেই সত্য-মিথ্যা বেরিয়ে আসবে। আইন আইনের পথে চলবে।”
নৈহাটির মহেন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শম্পা ঘোষ। সম্পর্কে তিনি পানিহাটির বিধায়কের পুত্রবধূ, বড় ছেলে দীপঙ্কর ঘোষেরে স্ত্রী। এসএসসি-র প্রকাশিত ‘দাগি’র তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকায় তাঁর নামপ্রকাশ হওয়ার আবহে প্রকাশ্যে এসেছে অন্য একটি বিষয়। পানিহাটি মহাবিদ্যালয় ফর গার্লস স্কুলে শম্পার সরকারি নমিনি হিসেবে স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি হওয়ার চিঠি। গত ৮ আগস্ট স্কুল শিক্ষা দপ্তর থেকে সেই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলেই খবর। চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষককে নতুন কমিটিতে আগেকার কমিটির থেকে চার্জ বুঝে নিতে বলা হয়েছে। এনিয়ে সেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সোমা লোধ জানিয়েছেন, ”ওই চিঠি আমার কাছেও যেমন এসেছে তেমন শিক্ষা দপ্তর, প্রশাসনের সর্বস্তরে ও শম্পা ঘোষের কাছেও গিয়েছি। উনি কবে দায়িত্ব নেবেন জানতে ফোন করলেও উনি ধরেননি। আমি নিয়ম মেনে সোমবার ওনাকে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব কবে গ্রহণ করবেন, জানতে চাইব।” তবে, অযোগ্য শিক্ষকের তালিকায় নাম থাকা প্রসঙ্গে তিনি কোনও বক্তব্য নেই।
তালিকায় নাম রয়েছে শাসকদলের আরও বেশ কয়েকজনের এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদেরও। সেই তালিকা নিয়ে অবশ্য সংশয়ও প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতারা। পুত্রবধূ আদৌ ‘দাগি’ শিক্ষক কি না, তা নিয়ে পানিহাটির বিধায়ক সন্দেহের সুরেই জানিয়েছেন, সত্যিটা কী, তা যেমন প্রকাশ্যে আসবে, তেমনই মিথ্যেটাও প্রমাণিত হবে। আর তারপর আইন অনুযায়ী যা পদক্ষেপ হওয়ার, তাই হবে।
এদিকে, ‘দাগি’র তালিকায় নাম রয়েছে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার কাউন্সিলর কুহেলি ঘোষের। তিনি চৌহাটি হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা। ২০২২ সালে সিবিআই এই মামলার তদন্ত শুরুর সময় থেকেই কুহেলিদেবীকে ‘অযোগ্য’ বলে দাগিয়ে দিয়েছিল। তা নিয়ে কাউন্সিলর চ্যালেঞ্জও করেছেন। শনিবার এসএসসি-র তালিকায় তাঁর নাম দেখে রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কুহেলি ঘোষ। তিনি বলেন, ”আমি সিবিআইকে চ্যালেঞ্জ করে জানিয়েছিলাম যে আমি কাকে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছি, তা প্রমাণ করুক। তিনি আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ ডেকে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। জানি না কেন। আমাকে যারা দাগি বলে চিহ্নিত করেছে, তাদের দায়িত্ব আমার ত্রুটি প্রমাণ করার।” এভাবেই ‘দাগি’দের সঙ্গে শাসকশিবিরের নাম জুড়ে যাওয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে সিবিআই ও এসএসসি-কে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.