Advertisement
Advertisement
শৌচালয়ে কোয়ারেন্টাইনে যুবক

ঘরের অভাব, রেড জোন থেকে বাড়ি ফিরে শৌচালয়েই কোয়ারেন্টাইনে পরিযায়ী শ্রমিক

ঘটনা মর্মস্পর্শী হলেও যুবকের সচেতনতা নজিরবিহীন, মানছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

Youth came from Red Zone to Green Zone quarantined in toilet
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 14, 2020 8:18 pm
  • Updated:May 14, 2020 8:44 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাড়িতে ঘরের অভাব। তাই করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নিজের বাড়ির পৃথক শৌচালয়েই কোয়ারেন্টাইনে গেলেন এক পরিযায়ী শ্রমিক। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া কুঁচিয়ার এই ঘটনা প্রশাসনকে রীতিমত নাড়া দিয়ে গেল। তা সত্বেও এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পরিবারকে বাঁচাতে রেড জোন থেকে আসা ওই শ্রমিকের সচেতনতাকে নজির বলে মানলেন প্রশাসনিক কর্তারা।

Advertisement

করোনা সংক্রমণ রুখতে কোয়ারেন্টাইন বা নিভৃতবাসই অন্যতম হাতিয়ার। তাই বাইরের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের কোথাও গাছের ডালে, কোথাও আবার নৌকা, কিংবা ফাঁকা গাছতলায় থাকার ছবি দেখা গিয়েছে। কিন্তু হোম কোয়ারেন্টাইনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে ঘরের অভাবে ‘মিশন নির্মল বাংলা’র শৌচালয়েই কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড কাটাতে শুরু করলেন বান্দোয়ানের যুবক মহাদেব সিং। আর তাতেই প্রশাসনের অন্দরমহলে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে। বান্দোয়ানের বিডিও শুভঙ্কর দাস বলেন, “শুনলাম ঘরের অভাব। তাই ওই পরিযায়ী শ্রমিককে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার চিন্তাভাবনা করছি। এই বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ কথাও হয়েছে।”

[আরও পড়ুন: বাসের অপেক্ষায় ট্রানজিট সেন্টারে ৫ ঘণ্টা, জল-খাবার না পেয়ে ক্ষোভ রোগীর পরিবারের]

দিন সাতেক আগে সাইকেল নিয়ে রেড জোন হাওড়ার আন্দুল থানার লালকুঠি এলাকা থেকে বান্দোয়ানে ফেরেন মহাদেব সিং। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও সাত জন। মহাদেবের কথায়, “ওখানে আমরা বেত ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। লকডাউনে কাজ বন্ধ যায়। ফলে উপার্জনহীন হয়ে থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষই আমাদের খাবার দিত। কিন্তু গত মাস খানেক থেকে সেভাবে খাবার মিলছিল না। তাই আমরা সাইকেলে যে যার বাড়ি চলে আসি।” তবে বান্দোয়ানে ফিরেই তাঁরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। সেখানে তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা হলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষজন তাঁদের ঘরে ঢুকতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। তাই গ্রাম থেকে দূরে আলাদা ভাবে থাকার কথা বললে কুঁচিয়ার পাঁচ শ্রমিক ফাঁকা মাঠে ত্রিপল খাটিয়ে থাকা শুরু করেন।

Bathroom-quarantine1

কিন্তু তাতেও বিপত্তি। দিন চারেক আগে কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টিতে সেই ত্রিপল উড়ে গেলে তখন সকলকে বাড়িতে থাকার কথা বলেন গ্রামের বাসিন্দারাই। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় মহাদেবের। তার কুঁড়ে ঘরে আলাদা হয়ে থাকার জায়গা নেই। বাড়িতে স্ত্রী, ছোট মেয়ে, বাবা ও দুই অবিবাহিত বোন থাকায় তিনি ঠিক করেন, বাড়ির একপাশে থাকা মিশন নির্মল বাংলার শৌচালয়েই নিভৃতবাস করবেন। গত চার দিন ধরে সেখানেই তাঁর পরিবারের লোক খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। সেই শৌচালয়েই খাটিয়া পেতে রাত কাটাচ্ছেন।

[আরও পড়ুন: কনভেন্ট শিক্ষিকার ঠাঁই আজ ফুটপাথে, লকডাউনে বদলে যাওয়া জীবনের করুণ কাহিনি]

পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহ–সভাধিপতি প্রতিমা সরেন বলেন, “এই ঘটনা একেবারে হৃদয়স্পর্শী। সকলকেই নাড়িয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু ওই শ্রমিকের সচেতনতার তারিফ না করে পারছি না। তিনি সচেতনতার উদাহরণ হয়ে থাকবেন। তবে প্রশাসনকে বলেছি দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করে দিতে।”

ছবি: অমিত সিং দেও।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement