Advertisement
Advertisement
Bonedi Barir Durga Puja

বলি বন্ধের আবেদন করেন চৈতন্য! হুগলির চৌধুরীবাড়িতে আজও অভয়া রূপে পূজিত দুর্গা

পুজোর দিনে ২৩ রকমের নৈবেদ্য দেওয়া হয় উমাকে।

Bonedi Barir Durga Puja, Durga worshipped in form of Abhaya at Chowdhurybari in Bhandarhati, Hooghly
Published by: Suhrid Das
  • Posted:September 10, 2025 5:58 pm
  • Updated:September 10, 2025 5:58 pm   

সুমন করাতি, হুগলি: ধনেখালির চৌধুরীবাড়িতে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। ভাণ্ডারহাটির বাড়িতে চলছে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ। পুজোর আগেই দূরে থাকা আত্মীয়রা সবাই হাজির হয়ে যান বাড়িতে। এই পুজো নাকি প্রায় সাড়ে সাতশো বছরের পুরনো। কথিত আছে, চৌধুরী পরিবারের পূর্বপুরুষ রামচন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে এই পুজো শুরু হয়েছিল। তখনও জীবিত চৈতন্যদেব। 

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রামচন্দ্র চৌধুরী ছিলেন উত্তরপ্রদেশের কনৌজের বাসিন্দা, জমিদার বংশের সন্তান। ১২১৯ শকাব্দে তিনি হুগলির ধনেখালির ভাণ্ডারহাটিতে এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেও একইভাবে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। রামচন্দ্র নিজের উদ্যোগে শুরু করেন দুর্গাপুজো। সেই পুজো ধারাবাহিকভাবে আজও চলছে চৌধুরীবাড়িতে। এখানে অভয়া রূপে পূজিত হন দেবী দুর্গা। একচালার কাঠামোয় দেবীর দু’পাশে থাকেন লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী। তবে দেবীর সঙ্গে দেখা যায় না পশুরাজ সিংহ, মহিষাসুর, মহিষকে। উমা এখানে দ্বিভুজা, সিংহাসনের উপর বিরাজমান। প্রথম থেকেই ডাকের সাজে সজ্জিত হন উমা। প্রথমে খড়ের চালের ছাউনির মন্দিরে এই পুজো শুরু হয়। পরে সেটি সংস্কার করে নির্মিত হয় নাটমন্দির। রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর পাশাপাশি রাধাগোবিন্দের পুজোও শুরু করেছিলেন। বর্তমানে দুর্গা মন্দিরের পাশেই রাধাগোবিন্দের মন্দিরও রয়েছে। নিত্যপুজো হয় সেখানে।

Bonedi Barir Durga Puja, Durga worshipped in form of Abhaya at Chowdhurybari in Bhandarhati, Hooghly
চৌধুরীবাড়ির নাটমন্দির। নিজস্ব চিত্র

প্রতি বছর মহালয়ার পরদিন থেকে রাধাগোবিন্দের মন্দিরে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। প্রথমে রাধাগোবিন্দের পুজো হয়। তারপর শুরু হয় দেবী দুর্গার পুজো। সপ্তমীতে আঁখ, ছাঁচি কুমড়ো ও বাতাবি লেবু বলি দেওয়া হয়। অষ্টমী ও নবমীতে ছাগবলি সেই অতীত থেকে হয়ে আসছে। এই বলির প্রসঙ্গে একটি কাহিনিও চর্চিত আছে। কথিত আছে, পশুবলি বন্ধের আবেদন জানিয়ে চৌধুরীবাড়িতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এক শিষ্যকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন চৌধুরী পরিবারের তৎকালীন বংশধরদের তরফে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে মহাপ্রভুর সম্মানরক্ষায় সেই বছর থেকেই বলির সময় শুরু হয় হরিনাম। এখনও সেই রেওয়াজ আছে। পুজোর দিনে ২৩ রকমের নৈবেদ্য দেওয়া হয় উমাকে।

পরিবারের বর্তমান সদস্যরা কর্মসূত্রে অনেকেই বাইরে থাকেন। পুজো শুরুর আগেই পরিবারের লোকজন, আত্মীয়স্বজনরা চলে আসেন চৌধুরীবাড়িতে। তবে এখন এই পুজো ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে। পুজোর সব দায়িত্ব, খরচ ট্রাস্টের। ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, “পুজোর সমস্ত খরচ সেবাইতরাই করেন। দেবোত্তর জমি বিভিন্ন কাজের জন্য মানুষকে দেওয়া রয়েছে।” পুজো ঘিরে জাঁকজমক দেখা যায় প্রতি বছরই। তবে পুজোর দিনগুলিতে এই বাড়িতে ঢাক বাজানোর রীতি নেই। বাজানো হয় না কোনও মাইকও। চৌধুরী বংশের বর্তমান সদস্য জ্যোতিপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, “এই পুজোয় মহিলারা কোনও কাজ করেন না। তবে যাদের দীক্ষা হয়েছে, তাঁরা শুধু ভোগ রান্না করেন। উমাকে অন্ন ও খিচুড়ি, দু’রকমের ভোগ নিবেদন করা হয়। পুজোর চারটে দিন খুব আনন্দে কাটে।”

Bonedi Barir Durga Puja, Durga worshipped in form of Abhaya at Chowdhurybari in Bhandarhati, Hooghly
ধনেখালির চৌধুরীবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

দশমীতে সন্ধায় দেবীর বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের হয়। তবে এই বিসর্জন ঘিরে কাহিনি কথিত রয়েছে। অতীতে জেনারেটরের আলোয় প্রতিমা নিরঞ্জন হত চৌধুরী পরিবারের। কিন্তু অতীতে দু’বছর প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় সেই জেনারেটরের আলো নিভে গিয়েছিল। অনেক চেষ্টার পরও সেই আলো আর জ্বালানো সম্ভব হয়নি। তারপর থেকে হ্যাজাকের আলোতেই প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে থাকে। কাঁধে করে প্রতিমাকে গোটা এলাকা ঘোরানো হয়। পরে এলাকারই তালপুকুরে প্রতিমার নিরঞ্জন হয়। চৌধুরীবাড়ির প্রতিমা বিসর্জনের পরই এলাকার অন্যান্য বাড়ির ও বারোয়ারি প্রতিমা বিসর্জন হয়ে থাকে। সেটাই দীর্ঘদিনের রীতি। পুজোর দিনগুলিতে প্রচুর সংখ্যায় শাড়ি, ধুতি, মিষ্টি প্রণামীতে জমা পড়ে। সেসব সারা বছর সেবাকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ