জ্যোতির্ময় ইজারাদার: সেদেশে হয়তো আশ্বিন এমন রূপ-রস নিয়ে আসে না! তবু সারা পৃথিবীতে যেখানেই বাঙালি, সেখানেই ভেসে আসে পুজোর গন্ধ। তাই জার্মানিই বা বাদ যায় কেন! এখানকার অনেক এলাকার মতোই ড্রেসডেনে আসেন মা দুর্গা। এক এক পা চলতে চলতে যে পুজো পেরিয়ে গিয়েছে ৬ বছর। সেই ২০১৯ থেকে শুরু হয়েছে পুজো। মাত্র ৫০ জন মিলে যে পুজো শুরু করে, আজ পথ চলতে চলতে সেই পুজো অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমানে সেই পুজো দেখতে হাজির হন দূর-দূরান্তের মানুষ। না ছিল কোনও সংগঠন, না ছিল কোনও আয়োজন। শুধুমাত্র এক ছোট্ট বাঙালি সমাজের উৎসাহেই শুরু হয়ে যায় এই পুজো। তাঁরা শুধু চেয়েছিলেন বাড়ি থেকে বহুদূরে যেন একটু পুজোর আমেজটা পাওয়া যায়। এ দেশের মতো করে শরৎ নাই আসুক, আমেজটুকু যেন পাওয়া যায়।
২০১৯-এ পুজো শুরু হলেও ২০২১-এ ড্রেসডেনের এই পুজো একটা আলাদা মাত্রা নেয়। ‘বঙ্গ উৎসব ড্রেসডেন’ নামে পুজোর রেজিস্ট্রেশন হয়। প্রথমে সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০। যেখানে বাংলাদেশ এবং ভারতের বহু বাঙালি প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন। কর্মসূত্রে কাজে গিয়েছেন এমন বহু মানুষ যেমন রয়েছেন, আবার বহু পড়ুয়াও বঙ্গ উৎসব ড্রেসডেনের প্রতিনিধি। ক্রমে ক্রমে এটাই হয়ে উঠেছে পূর্ব জার্মানির সবথেকে বড় পুজো।
তবে ২০২৩-এ এই পুজোয় আলাদা মাত্রা যোগ করে কুমোরটুলির দুর্গা প্রতিমা। আরও মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দেবী বন্দনায়। বর্তমানে এই পুজোর সঙ্গে জড়িত সদস্যসংখ্যা বেড়ে ৬০ ছাড়িয়েছে। ২০ থেকে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দিন-রাত কাজ করছেন। বর্তমানে এই উৎসবে শুধু প্রবাসীদের মধ্যেই সীমাবন্ধ নয়! ড্রেসডেনের বহু মানুষও এই পুজো দেখতে আসেন।
তবে ২০২৪ সালে কার্যত এই পুজোর মোড় ঘুরে যায়। গত বছর প্রায় ১৪০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। জার্মানির অন্যান্য শহর যেমন, লেপজিং, চেমনিজ, হালে, কটবাস থেকেও পুজোর দিনগুলিতে বহু মানুষ আসেন। এমনকী ইটালি, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের বাঙালিরাও সামিল হয়ে থাকেন এই পুজোয়।
এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল স্ট্রিট ফুডের সমাহার। আসল বাঙালি খাবারের স্বাদ থাকে সেখানে। জার্মানির বুকে উঠে আসে এক টুকরো কলকাতা। এই পুজোয় প্রবেশ করতে কোনও টাকা দিতে হয় না। কারও প্রবেশে কোনও বাধা নেই। শুধুউ পুজো নয়, সেইসঙ্গে সংস্কৃতির এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধনও দেখা যায় এই পুজোতে। বাংলা নাটক, গান, নাচ অনুষ্ঠিত হয় এই পুজোকে কেন্দ্র করে। খুব কম দিনেই জার্মানির বুকে বাঙালিদের এক অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এই পুজো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.