খাবার অপচয়ে জরিমানা ধার্য করেছে পুণের একটি রেস্তরাঁ। অভুক্ত দেশে সচেনতা বৃদ্ধির একমাত্র পথ কি এটাই? আলোচনা শুরু ভালো-মন্দ নিয়ে।
খাবার অপচয়ের ঘটনা পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই দৃশ্যমান। খাদ্যশৃঙ্খলের সর্বত্র যেমন উৎপাদন, বিতরণ, খুচরো বিক্রি এবং উপভোক্তা– বিভিন্ন স্তরে এই অপচয় দেখা যায়। উন্নত দেশগুলিতে উপভোক্তা পর্যায়ে প্রতি বছর জনপ্রতি প্রায় ১০০ কিলোগ্রাম হারে খাদে্যর অপচয় ঘটে। বাদ নেই উন্নয়নশীল এবং গরিব দেশগুলিও। রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির (ইউএনইপি) ওয়েবসাইটে ‘খাবার অপচয় সূচক প্রতিবেদন ২০২৪’ শীর্ষক রিপোর্ট সে-বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত। রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে ২০২২ সালে মোট খাদ্য অপচয় ১০০ কোটি টনের বেশি, যা বিশ্ববাজারে আসা মোট খাবারের পঁাচ ভাগের এক ভাগ!
রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি গড়ে বছরে ৮২ কেজি খাবার অপচয় করে। একজন ব্যক্তি বছরে গড়ে সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় করে মালদ্বীপে– ২০৭ কেজি। ভারতে যার পরিমাণ ৫৫ কেজি। বাড়িতে অপচয়ের কারণ, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রান্না, অতিরিক্ত খাবার কিনে তা ব্যবহার না-করা, খাবার যথাযথ সংরক্ষণের অভাব। অতিরিক্ত অর্ডার এবং সমস্ত খাবার চেখে দেখার প্রবণতাও রেস্তোরঁাগুলিতে খাবার অপচয়ের কারণ। অথচ একটু সচেতন হলেই এই অপচয়ের হার অনেক কমিয়ে আনা যায়। যা দিয়ে পেট ভরতে পারে অজস্র অভুক্তর।
এই অবস্থায় পুনের একটি রেস্তোরঁার সিদ্ধান্ত রীতিমতো ‘নজির’ তৈরি করার পথে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, খাবার নষ্ট করলে ২০ টাকা জরিমানা ধার্য। রেস্তোরঁার নিয়ম-সহ মেনুকার্ডের ছবি ‘ভাইরাল’ হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা শুরু হয়েছে ভাল-মন্দ নিয়ে। যে-দেশে ভাল কথায় কাজ হয় না, জরিমানা বা শাস্তির ভয়ে কিছুটা সমঝে চলে মানুষ, সেখানে হয়তো এটাই পথ।
অনেকেই মনে করছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানবাড়িতেও এই নিয়ম চালু হওয়া উচিত। তবেই অপচয় কমানো যাবে, বাড়বে মানুষের দায়িত্ববোধ। অনেকের মত, টাকার অঙ্কটা নিতান্তই কম। তা বাড়ানোর প্রয়োজন। তবে কারও কারও পালটা প্রশ্ন, খাবারের মান যদি যথোপযুক্ত না হয়, সেক্ষেত্রে উপায় কী। ফলে, খাবারের অপচয় রুখতে জরিমানা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ওই রেস্তরাঁর নিয়ম।
জরিমানা হয়তো এই প্রবণতা কিছুটা কমাতে পারে, তবে তা একমাত্র পথ নয়। সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। আমাদের বুঝতে হবে, খাদ্য অপচয় কতখানি গুরুতর সমস্যা এবং তা পরিবেশ ও সমাজের উপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। খাদ্য সংরক্ষণের কৌশল সম্পর্কেও ভাবনা প্রয়োজন। স্থানীয় বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বেঁচে যাওয়া খাবার বিতরণ করা যেতে পারে। তবে শিক্ষা, সচেতনতা ও সঠিক পরিকল্পনার পাশাপাশি জরিমানা যে অত্যন্ত কার্যকর উপায়, তা সন্দেহাতীত। ‘অপচয় চিরকাল আছে’– কবিই যতই লিখুন, গায়ে লাগে অপচয় ঘটলে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.