Advertisement
Advertisement
Jayant Vishnu Narlikar

বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্বের অনন্ত অবস্থানে! জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকারের মতো জনপ্রিয় বিজ্ঞানী বিরল

সদ্যই প্রয়াত হয়েছেন বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী।

A write up about Jayant Vishnu Narlikar
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 30, 2025 5:04 pm
  • Updated:May 30, 2025 5:04 pm  

চলে গেলেন ‘স্টেডি স্টেট’ মডেল-খ্যাত বিজ্ঞানী জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকার। তঁার ব্যতিক্রমী বক্তব্যগুলোকে সেভাবে আমল দেওয়া হয় না বলে মনে চাপা অভিমান ছিল। বলতে শুনেছি, ‘বিগ ব্যাং’ মডেল জনপ্রিয় হোক না, কিন্তু কেউ যদি ‘বিকল্প মডেল’ নিয়ে কাজ করে তাতে আপত্তি কীসের? বিজ্ঞানে অন্য প্রস্তাবগুলোকে ভুল প্রমাণ করে যেগুলো বাকি রয়ে যায়, সেগুলোও তো ‘সম্ভাব্য’! লিখছেন বিমান নাথ।

Advertisement

তাঁর কল্পনায় মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে বহমান। শুরু নেই, শেষ নেই। এই স্থিতাবস্থাশীল ‘স্টেডি স্টেট’ মহাবিশ্বের কোনও বিকারও নেই। তবে মানুষ নশ্বর। তাই চিরন্তন মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীরও অন্তিম কাল ঘনিয়ে আসে। চলে গেলেন ‘স্টেডি স্টেট’ মডেল-খ্যাত বিজ্ঞানী জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকার। রেখে গেলেন তঁার সৃষ্টির অপার সম্ভার। এক সমগ্র মহাবিশ্বের মতোই বিশাল তঁার কাজের বিস্তৃতি।

শুধু বিজ্ঞানের গবেষণায় আঙিনায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। লিখেছেন প্রচুর। মারাঠি এবং ইংরেজি দু’ভাষাতেই সমান দড়। তঁার লেখা কল্পবিজ্ঞানের গল্প পাঠ্যপুস্তকেও ঠঁাই পেয়েছে। একসময় পশ্চিমবঙ্গে প্রকাশিত পত্রিকার শারদীয় সংখ্যাতেও তঁার লেখা অনূদিত হত বাংলায়। বিজ্ঞান ছাড়াও দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, বিজ্ঞানের ইতিহাস ইত্যাদি হরেক বিষয় নিয়ে লিখেছেন তিনি। কাজের জন্য তঁার পুরস্কারের সংখ‌্য‌া অগুনতি। তবে একটি বিশেষ পুরস্কারের কথা বলতেই হয়। সেটি হল ইউনেসকো ‘কলিঙ্গ পুরস্কার’। বিজ্ঞানের কথা আমজনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজের স্বীকৃতিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। জয়ন্ত বিষ্ণু সেই আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হন ১৯৯৬ সালে।

বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির উদ্দেশ্য এক-এক বিজ্ঞানীর ক্ষেত্রে এক-এক রকমের। কেউ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে লেখেন, যাতে বিজ্ঞানের প্রতি ছাত্রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। আবার কেউ লেখেন নিজের গবেষণার কথা সবাইকে জানানোর জন্য। জয়ন্ত বিষ্ণুর মূল উদ্দেশ্য ছিল আমজনতাকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা। তাই বিজ্ঞানের কথা সাধারণ পাঠকের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার।
সৌভাগ‌্যক্রমে আমার তঁার সঙ্গে আলাপের সুযোগ হয়। এমন নম্রস্বভাব অথচ স্পষ্টবক্তা মানুষ খুব কম দেখেছি। একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। একবার কেন্দ্রীয় সরকার মনস্থ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতিষবিদ্যা পড়ানোর ব্যবস্থা করবে, এমন উদ্ভট প্রস্তাব শুনে বেশিরভাগ বিজ্ঞানী চুপ। একটা নয়, তিন-তিনটে বিজ্ঞান আকাদেমি। কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠানই রা কাটেনি সেবার। প্রতিবাদের কোনও ঘোষণাপত্রও প্রকাশ করেনি এসব আকাদেমি। আমার জ্ঞানে মাত্র দু’জন প্রতিষ্ঠিত জ্যোতির্বিজ্ঞানী কাগজে এর বিরুদ্ধ সমালোচনা করেন– জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকার ও গণেশন শ্রীনিবাসন। সেবার চাপে পড়ে সরকার বাধ্য হয় পিছু হটতে।
শুধু লেখালেখিতেই নিজেকে সীমিত রাখেননি নারলিকার। জ্যোতিষ ফলাফল যে স্ট্যাটিসটিক্সের হিসাবে ধোপে টেকে না, সেটা হাতেনাতে প্রমাণ করে গবেষণা-প্রবন্ধও লিখেছেন তিনি। আমার লেখকজীবনের প্রথম পর্বে যখন ইংরেজি দৈনিক কাগজে লেখালেখি রপ্ত করছি, তখন একবার জ্যোতিষ নিয়ে আমাদের সমাজের কুসংস্কারের বিষয়ে লিখেছিলাম। আমি তখন পুনেতে তঁার প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এ (আই-ইউ-কা) পোস্ট-ডক্টর বিজ্ঞানী হিসাবে যোগ দিয়েছি। নারলিকার তখন সেই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। সাধারণত কমবয়সি বিজ্ঞানীরা গবেষণার বাইরে অন্য কিছু করার সময় পান না। থাকলেও তা খুব একটা ভাল নজরে দেখা হয় না। উঁচুতলার বিজ্ঞানীরা ভেবে নেন যে এঁর হয়তো গবেষণায় মন নেই, কারণ তঁাদের কাছে গবেষণার ইঁদুরদৌড়ে সামিল হওয়ার বাইরে কিছু করার অর্থই হল ‘যথেষ্ট মনোযোগের অভাব’। তবে নারলিকার ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। আগেই বললাম, আমি সেই সময় কয়েকটি ইংরেজি দৈনিক কাগজে লিখতে শুরু করি। সেই খবর পেয়ে তিনি নিজে থেকে উৎসাহী হয়ে পড়েন। পেপার কাটিংয়ের মার্জিনে উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যও লিখে দেন আমাকে।

আমার বেড়ে ওঠা অসমের প্রান্তিক শহরে। তখন বিভিন্ন পত্রিকায় নারলিকারের নাম চোখে পড়ত। তিনি কখনও আমার লেখা পড়তে পারেন, এই স্বপ্ন দেখার সাহস হয়নি কখনও। বাস্তবে কিন্তু তাই ঘটল! আমি অবশ‌্যই তঁার স্নেহধন‌্য, কিন্তু তঁার কাছ থেকে লেখার ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র উৎসাহ পেয়েছি, তা নয়। আমি পড়াতে ভালবাসি জানতে পেরে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে যে স্নাতকোত্তর কোর্স সেই সময় উনি নিজে পড়াতেন, তার পুরো দায়িত্ব আমার কঁাধে সঁপে দিয়েছিলেন। আমি তখনও সেই অর্থে ‘অধ্যাপক’ হইনি, তবুও।
আমাদের দেশে বিজ্ঞানীদের হরদম এক ধরনের তর্ক চালিয়ে যেতে হয়। মোকাবিলা করতে হয় এমন এক মানসিকতার যার মূল বক্তব্য হল ‘সব বেদে আছে’, এবং যা কিনা এখন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের পক্ষে বলার জন্য সামনের সারিতে ছিলেন নারলিকার। প্রাচীন ইতিহাসে ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কে তর্কে তঁার সঙ্গে কেউ এঁটে উঠতে পারতেন না। অনুবাদে নয়, প্রাচীন যুগে লেখা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বইগুলো তিনি মূল ভাষা সংস্কৃতেই পড়েছিলেন। কারণ ছোটবেলাতেই সংস্কৃত শেখার সুযোগ হয়েছিল তঁার। তাই আর্যভট্ট আসলে কী বলেছিলেন আর বলেননি, সেই নিয়ে তঁার সামনে কোনও আজগুবি কথা বলার সাহস ছিল না কারও।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রাচীন শাস্ত্রকে পর্যালোচনা করার তঁার এই অনন্য ক্ষমতার উৎস বোধহয় তঁার ছোটবেলার দিকে একনজর দিলেই বোঝা যেতে পারে। জন্ম কাশীতে, ১৯৩৮ সালে। স্কুল-কলেজ সেখানেই। বাবা বিষ্ণু বাসুদেব নারলিকার ছিলেন গণিতের অধ্যাপক ও পদার্থবিদ। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। এদিকে মা সুমতি নারলিকার ছিলেন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত।

শুধু এই পারিবারিক পরিচয়েই হয়তো অনেকের জীবন ধন্য হয়ে যেত। কিন্তু জয়ন্ত বিষ্ণুর নজর ছিল আরও কঠিন পরীক্ষায় নিজেকে মগ্ন করে রাখার দিকে। কেমব্রিজে গণিতের ট্রাইপস্‌ পরীক্ষায় প্রথম হন তিনি, যে-পরীক্ষার নাম শুনলে ছাত্রদের জ্বর আসত। ফলে তিনি পরিচিত হন কেমব্রিজের ‘সিনিয়র র‍্যাঙ্গলার’, অর্থাৎ গণিতের শ্রেষ্ঠ ছাত্র হিসাবে! এর সুবাদেই বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েলের কাছে গবেষণার পাঠ নেওয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন।
ফ্রেড হয়েলের গবেষণা ছিল তাক লাগানোর মতো। জ্যোতির্বিজ্ঞানের হেন কোনও জমি ছিল না, যেখানে বিচরণ করেননি হয়েল। আর হেরমান বন্ডি, টমাস গোল্ড এবং হয়েল, এই তিনজন মিলে মহাবিশ্বের এক নতুন তত্ত্বের প্রস্তাব দেন।

‘বিগ ব্যাং’ অর্থাৎ এক মহাবিস্ফোরণে জন্ম হয়নি এই মহাবিশ্বের– এটাই ছিল মূল বক্তব্য। প্রসঙ্গত, ‘বিগ ব্যাং আখ্যাটি একসময় ফ্রেড হয়েলই ব্যঙ্গ করে দিয়েছিলেন, ‘বিবিসি’-তে এক বেতার বক্তৃতার সময়। সে যাই হোক, বলা নেই কওয়া নেই হুট করে একটা মহাবিশ্বের জন্ম হয়ে গেল, এই মডেলটি অনেকেরই অপছন্দের ছিল। এই মডেল অনুযায়ী মহাবিস্ফোরণের আগে সময় বলেও কিছু ছিল না, ছিল না স্পেসের আভাস। এই বিদঘুটে চিন্তার বাইরে গিয়ে বন্ডি-গোল্ড-হয়েল তৈরি করলেন ‘স্টেডি স্টেট মডেল’। এঁদের ধারণায় মহাবিশ্বের কোনও শুরু নেই, শেষ নেই। পরিবর্তনশীল নয় এই মহাবিশ্ব। সেই গবেষণায় হয়েল সামিল করে নিয়েছিলেন তরুণ জয়ন্ত বিষ্ণুকে। কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। পরিবর্তন হবে না, অথচ মহাবিশ্ব যে আয়তনে বড় হচ্ছে সেই পর্যবেক্ষণকেও ঠঁাই দিতে হবে মডেলে। সুতরাং আইনস্টাইনের প্রবর্তিত মহাকর্ষের তত্ত্বটিকে বদলাতে হয়েছিল। এসেছিল ‘নারলিকার-হয়েল তত্ত্ব’।

তবে জয়ন্ত বিষ্ণু কেমব্রিজে থাকাকালীন বিশ্বতত্ত্বের গবেষণায় মোড় ঘুরে গিয়েছিল। কেমব্রিজের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্টিন রাইল, যিনি পরে রেডিও টেলিস্কোপ তৈরির ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পান– দেখিয়েছিলেন– অতীতের মহাবিশ্বর অবস্থার সঙ্গে বর্তমানের ছবি মিলছে না। তঁাদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে, মহাবিশ্ব পরিবর্তনশীল। অতএব, মহাবিশ্বের ‘স্থিতাবস্থার মডেল’ নাকচ হয়ে যায়।

বিজ্ঞানে সেটা হতেই পারে। এখানেই বিজ্ঞানের জয়। তবে এক্ষেত্রে প্রশংসা করতে হয় সেই তাত্ত্বিকদেরও, যঁারা তঁাদের তত্ত্বটিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছিলেন যে পরীক্ষা করে বলা যেতে পারে সেটা ঠিক কি না। মনে হতে পারে, এ আবার এমন কী! অথচ এটাই বিজ্ঞানের গবেষণায় সবচেয়ে কঠিন কাজ। একটি তত্ত্বের মূল সূত্রগুলি ধরে যুক্তি সহকারে এমন স্তরে পৌঁছনো প্রয়োজন, যাতে অন্য বিজ্ঞানীদের বলা যেতে পারে, অমুক পরীক্ষা করলে এই তত্ত্ব অনুযায়ী তমুক ফলাফল পাওয়া যাবে। সেটা করতে সক্ষম হয়েছিলেন নারলিকার ও হয়েল। আমরা সাধারণত একজন বিজ্ঞানীর সাফল্য শুধু তঁার তত্ত্ব পরীক্ষায় পাশ করল কি না তার নিরিখেই বিচার করে থাকি। তা ঠিক নয়। জয়ন্ত বিষ্ণুকে ‘একটি ব্যর্থ মডেলের প্রবক্তা’ হিসাবে মনে রাখলে শুধু তঁার প্রতি অবিচার করা হয় না, বিজ্ঞানের দর্শনের প্রতিও তা অবিচার।

ফ্রেড হয়েলের সঙ্গে কাজ করার সময়ই পদার্থবিজ্ঞানে তঁার বহুমুখী প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। যেমন গুরু, তেমন শিষ্য। দু’জন মিলে বিশ্বতত্ত্বে যেমন আমূল পরিবর্তনের কথা ভেবেছিলেন, তেমনই জ্যোতির্বিজ্ঞানের আরও অনেক বিষয়ে এমন সব কাজ করেছিলেন, যার ধরন ছিল অন্য সবার কাজের তুলনায় আলাদা। এর জন্য হয়তো অনেক কুকথা শুনতে হয়েছে জয়ন্ত বিষ্ণুকে। যেমন, মনু জোসেফের হালকা চালের উপন্যাস ‘সিরিয়াস মেন’-এ নারলিকারের আদলে তৈরি এক বিজ্ঞানীর চরিত্রকে মহাকাশে জীবাণু নিয়ে গবেষণার করার জন্য হাসির পাত্র হিসাবে দেখানো হয়। অবশ্য হয়েলের এই বিষয়ের গবেষণার মূল বক্তব্যগুলো না জেনেই করেছিলেন এই লেখক।

তঁার ব্যতিক্রমী বক্তব্যগুলোকে সেভাবে আমল দেওয়া হয় না বলে জয়ন্ত বিষ্ণুর মনে একটা চাপা অভিমান ছিল। অনেকবার বলতে শুনেছি, ‘বিগ ব্যাং’ মডেল জনপ্রিয় হোক না, কিন্তু অন্য কোনও ‘বিকল্প’ মডেল নিয়ে কেউ কাজ করলে তাতে আপত্তি কীসের? মনে রাখা দরকার, বিজ্ঞানে কোনও তত্ত্বকে কখনওই ‘নির্ভুল’ প্রমাণ করা যায় না। ‘বিগ ব্যাং’-এর মতো মডেল তো নয়-ই। বিজ্ঞানে অন্য প্রস্তাবগুলোকে ভুল প্রমাণ করে যেগুলো বাকি রয়ে যায়, সেগুলোকে ‘সম্ভাব্য’ থিওরির আখ্যা দেওয়া হয়। নেতি-নেতি করে সত্যের দিকে এগন বিজ্ঞানীরা। এই প্রক্রিয়ায় কোনও ‘বিকল্প’ থিওরি নিয়ে কাজ করলেই যদি আওয়াজ দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়, তাহলে বিজ্ঞানের পদ্ধতিতেই ঘুণ ধরে। মুষ্টিমেয় কিছু চিন্তাধারণা একচেটিয়া হয়ে বিজ্ঞানীদের মনে বসত করে। তঁারা এর বাইরে ভাবতেই ভয় পান, কারণ তখন আর বিজ্ঞানিমহলে কল্কে পাওয়া যায় না। বরং বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলো হোক বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনার আদানপ্রদানের জায়গা, এইটাই ছিল জয়ন্ত বিষ্ণুর বক্তব্য।

তঁার ইচ্ছা ছিল, ভারতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পাঠ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এই সুবাদে কয়েকজন সমমনোভাবাপন্ন ছাত্র এবং সহকর্মীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘আই-ইউ-কা’। এখানে গবেষণা তো হবেই, এছাড়া যাতে ছাত্রছাত্রী তথা জনসাধারণের কাছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের কথা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টাও জারি থাকে, সেদিকে নজর ছিল তঁার। সেই উপলক্ষেই তঁাকে মারাঠিতে বক্তৃতা দিতে দেখেছিলাম। এবং তঁার উদাহরণ থেকেই আমি বুঝেছিলাম, এ-দেশের মানুষের কাছে বিজ্ঞানের কথা জানাতে গেলে শুধু ইংরেজি ভাষার মধ্যে নিজের লেখালেখি সীমাবদ্ধ করে রেখে লাভ নেই। মাতৃভাষাতেও লিখতে
হবে আমাদের।

এখন তঁার সেই প্রতিষ্ঠান ভারতের বিভিন্ন শিক্ষায়তনে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে সাহায্য করে চলেছে। তিনি নিজে এই প্রচেষ্টার পুরোধা থেকে বহু বছর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মানুষের মনে তঁার বিজ্ঞানীসত্তা যে কী রূপ নিয়ে পৌঁছেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যেত পুনে স্টেশনের দেওয়ালে তঁার প্রতিকৃতির মুরাল দেখে। আর কোনও ভারতীয় বিজ্ঞানীকে জীবিত অবস্থায় সাধারণ লোকজন এভাবে এতখানি আপন করে নিয়েছিল বলে আমার জানা নেই।

(মতামত নিজস্ব)

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement