Advertisement
Advertisement

Breaking News

Madhya Pradesh

চারাগাছ লাগানোর শর্তে মুক্তি! মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের নির্দেশ ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’ নয় তো?

আদালত পর্যবেক্ষণে যে-কথাগুলি বলেছে তা এক শিক্ষণীয় দিকনির্দেশ বলে মনে করা হচ্ছে।

Accused released on condition of planting saplings in Madhya Pradesh

প্রতীকী ছবি

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 23, 2025 3:01 pm
  • Updated:September 23, 2025 3:01 pm   

খুনের অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চারাগাছ লাগানোর শর্তে মুক্তি! মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’ নয় তো? আপাতত এটুকু বলা যায়– মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের এই নির্দেশ সমাজকে ভিন্ন এক দিশা দেখাল, যেখানে অপরাধীর শাস্তি একইসঙ্গে সৃজনশীল ও প্রতীকী হয়ে উঠল।

Advertisement

মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের সাম্প্রতিক এক নির্দেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি দিয়ে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে– তাকে ১০টি নিম অথবা পিপলের চারা রোপণ করতে হবে এবং যত্নে বড় করে তুলতে হবে। নিয়ম মেনে ৩০ দিন পর সেই চারাগুলির ছবি আদালতে জমা দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে এই রায়ে অনেকেই অবাক হয়েছে। খুনের মতো গুরুতর অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চারা লাগানোর শর্তে মুক্তি দেওয়া, এ যেন ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’। কিন্তু গভীরভাবে বিচার করলে বোঝা যায়, আদালত শাস্তির প্রচলিত কাঠামো ভেঙে নতুন এক মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছে।

আদালতের যুক্তি পরিষ্কার– কারাগারে দশ বছরেরও বেশি সময় কাটানো এক ব্যক্তির সামনে নতুন জীবনের দরজা খুলে দেওয়া দরকার। তবে মুক্তির শর্ত শুধুই দণ্ড লঘু করা নয়, বরং নতুন দায়িত্ব আরোপ করে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো। অনেকে এমনও বলছে, গাছ লাগানোকে এখানে প্রতীকী হিসাবে দেখা উচিত। প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, সৃষ্টি আর পুনর্জন্মের অনুভূতি– সবটাই এই রায়ের মধ্যে প্রতিফলিত। আদালত পর্যবেক্ষণে যে-কথাগুলি বলেছে, করুণা, সেবা, ভালবাসা ও দয়ার মতো মানবিক গুণগুলিকে জাগিয়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা, তা শুধু একজন আসামির জন্য নয়, সমগ্র সমাজের জন্য এক শিক্ষণীয় দিকনির্দেশ বলে মনে করা যেতে পারে।

বছর দশেক আগে একটি খুনের মামলায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয় মহেশ শর্মা নামে এক যুবক। সেই থেকে এত দিন জেলেই কাটিয়েছে সে। ২০২১ সালে নিম্ন আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল মহেশ। পাশাপাশি, যে কোনও শর্তে মুক্তির আর্জিও জানিয়েছিল সে। সেই মামলার শুনানিতেই এমন নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের যুক্তি, ইতিমধ্যে এক দশকেরও বেশি সময় কারাগারে কাটিয়ে ফেলেছে ওই আসামি। তাই তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। খুনের মতো অপরাধে রক্তের দাগ মুছে যায় না। শাস্তি শুধু দোষীর অনুতাপ বা শোধনের মাধ্যম নয়, তা সমাজের কাছে ন্যায়বোধেরও প্রতীক। তাই আদালতের এ রায় নিয়ে নানা মত থাকতেই পারে।

একদিকে সামাজিক পুনর্বাসন ও মানবিকতার দিক, অন্যদিকে শাস্তির ভয় ও প্রতিরোধমূলক ভূমিকা, দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে নেওয়াই বিচার ব্যবস্থার দায়িত্ব। এই রায়ে হাই কোর্ট যে ‘বিকল্প’ ভাবনার পথ দেখাল, তা অবশ্যই এক সাহসী উদ্যোগ। গুরু অপরাধের জন্য শাস্তি লঘু হলেও আদালত তার সঙ্গে পরিবেশ ও মানবিকতার দায় যুক্ত করেছে। এতে শাস্তি শুধু দণ্ডবিধির অঙ্কে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজসচেতনতার রূপ পেয়েছে। প্রশ্ন থেকে গেল, এই দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতে আরও প্রসারিত হবে কি না। তবে আপাতত এটুকু বলা যায়– মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের এই নির্দেশ সমাজকে ভিন্ন এক দিশা দেখাল, যেখানে অপরাধীর শাস্তি একইসঙ্গে সৃজনশীল ও প্রতীকী হয়ে উঠল।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ