Advertisement
Advertisement
Amitav Ghosh

পাণ্ডুলিপিকে ‘বন্দি’ রাখতে চান ৯০ বছর! কেন এমন ইচ্ছে বাঙালি লেখক অমিতাভ ঘোষের?

তাঁর পাণ্ডুলিপির সঙ্গে থাকবে ওশা‌ন ভুয়ং, মার্গারেট অ‌্যাট্‌উড এবং নোবেলজয়ী হান কাংয়ের তিনটি পাণ্ডুলিপি।

Amitav Ghosh want s to keep manuscripts 'imprisoned' for 90 years
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:August 20, 2025 2:22 pm
  • Updated:August 20, 2025 2:22 pm   

বিখ্যাত লেখক অমিতাভ ঘোষ তাঁর লেখা একটি পাণ্ডুলিপিকে ৯০ বছর ‘বন্দি’ রাখতে চান। কেন? নিজের সৃষ্টিকে কি যাচাই করতে তৎপর তিনি?

Advertisement

অনন্তকালের প্রেক্ষিতে ৯০ বছর এতই ক্ষুদ্র যে, সে আসবে আর যাবে। কিন্তু মানবেতিহাসে ৯০ বছরের পথ এতটাই দীর্ঘ যে, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ সেই পথ পেরতে পারে না। ক’জন মানুষের কীর্তিই বা বেঁচে থাকে ৯০ বছর! যত দিন যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন তত দ্রুত হচ্ছে। বাড়ছে ভোগবিলাস এবং দৈনন্দিন যাপনের আরাম এবং গতি। বাড়ছে পৃথিবীজুড়ে সভ্যতার সংকট, জীবনের অনিশ্চয়তা, প্রত্যয় ও সংশয়ের, মূল্যবোধ ও আদর্শের বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জাগছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের নতুন প্রশ্ন। পাওয়া যাচ্ছে সেসব প্রশ্নের অবিশ্বাস্য উত্তর কিংবা নিরুপায় নিরুত্তর।

এমন এক সর্বগ্রাসী দ্রুত বিবর্তনের প্রেক্ষিতে প্রাচীন সময়ের ‘ক্লাসিক’ কীর্তির স্থায়িত্ব আমাদের সাধারণ ভাবনায় আসে না। আজ যা লিখছি, আগামিকাল তা ঠোঙা– এই ভাবনার ভরসাতেই আমরা যে-যার কাজ করে যাচ্ছি। মিলান কুন্দেরা সেজন‌্যই তো তঁার ‘ইম্‌মর্ট‌্যালিটি’ বইতে উড়িয়ে দিয়েছেন অনন্তজীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, এবং ঝাড়া হাত-পা হয়েছেন ‘অস্তিত্বের অসহনীয় হালকামি’ বা ‘দ্য আন্‌বেয়ারেব্‌ল লাইটনেস অফ বিয়িং’ দর্শনে। তবে কাফকা আরও বেপরোয়া জীবন ও সাহিত্যবোধের পরিচয় দিয়ে বন্ধুকে বলেছিলেন, যা ছাইপঁাশ লিখেছি, সব পুড়িয়ে ফেলো। কিছুই যেন না থাকে।

বাঙালি লেখক অমিতাভ ঘোষ– যিনি লেখেন ইংরেজি ভাষায়, তঁার কল্পনা এবং আত্মবিশ্বাস উড়েছে ভিন্ন আকাশে। তিনি বলেছেন, তঁার একটি পাণ্ডুলিপি তিনি ‘বন্দি’ রাখতে চান আগামী ৯০ বছর। তবে তিনি তঁার এই পাণ্ডুলিপিটিকে ৯০ বছরের নিটোল নিঃসঙ্গতায় নির্বাসিত করতে চান না। তঁার পাণ্ডুলিপির সঙ্গে থাকবে ওশা‌ন ভুয়ং, মার্গারেট অ‌্যাট্‌উড এবং নোবেলজয়ী হান কাংয়ের তিনটি পাণ্ডুলিপি। ৯০ বছর পরে, ২১১৪ সালে এই চারটি পাণ্ডুলিপি পড়ার সুযোগ পাবে এই চারজন লেখকের ভক্ত-পাঠকরা।

কেন ৯০? কারণ সহজ। স্কটল‌্যান্ডের প্রকৃতিপ্রেমিক, দৃশ‌্যশিল্পী কেটি প‌্যাটারসনের রোপণ করা এক হাজারটি স্প্রুস গাছ ৯০ বছরে পৌঁছবে পূর্ণ যৌবনে। এবং এই ঘটনাটি ঘটবে নরওয়ের অস্‌লোতে, যেখানে নোবেল কমিটির অফিস। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কোথায় ৯০ বছরের ধূসর পাণ্ডুলিপি, আর কোথায় ৯০ বছর পর সবে যৌবনপ্রাপ্ত স্প্রুস-বৃক্ষসারি? কিন্তু ওদের রক্তের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এবং মূলে অস্‌লো নগর কর্তৃপক্ষ। অমিতাভ ঘোষের ‘ফিউচার লাইব্রেরি প্রোজেক্ট’-এর সঙ্গে অস্‌লো নগর কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি এই মর্মে স্বাক্ষরিত হয়েছে যে, অস্‌লো সাধারণ গ্রন্থাগারে এই পাণ্ডুলিপিগুলি একটি কক্ষে সংরক্ষিত থাকবে ৯০ বছর। এবং তারপরে সেগুলি ছাপা হবে এই স্প্রুস গাছের শরীর-প্রসূত কাগজ থেকে। রক্তের সম্পর্ক হল কি না?

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ