সরসংঘ প্রধান মোহন ভাগবতের সাম্প্রতিক ‘হাম দো, হামারে তিন’ স্লোগান হিন্দুদের ভাবাবেগকে উসকে দিতেই। মেরুকরণের এ-ও এক অনন্য অস্ত্র। কোনও দায়িত্বশীল ব্যক্তি কীভাবে তিন সন্তানের পক্ষে বারবার সওয়াল করে যাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও একবার ‘হাম দো, হামারে তিন’ নিদান দিয়ে বিতর্ক বাঁধালেন আরএসএসের সরসংঘচালক মোহন ভাগবত। দেশে জনসংখ্যার অনুপাত ধরে রাখতে কিছু দিন আগেই তিনি পরিবারপিছু তিন সন্তানের কথা বলেছিলেন। আরএসএসের শতবর্ষ উপলক্ষে দিল্লিতে তাদের যে তিনদিনের সম্মেলন হচ্ছে সেখানে তিনি প্রশ্নোত্তর পর্বে ফের তিন সন্তানের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন। ১৪০ কোটির দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণটাই যেখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে ভাগবতের মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তি কীভাবে তিন সন্তানের পক্ষে বারবার সওয়াল করে যাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০২৭ সালে ভারতে জনগণনা হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে। সে-সময় ভারতের জনসংখ্যা চিনকে ছাপিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণাকারীদের ধারণা, ২০৬২ সাল পর্যন্ত ভারতের জনসংখ্যা বাড়তেই থাকবে। তারপর কমবে। দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষ গরিব। জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়লে দারিদ্র মোকাবিলার কাজ কঠিনতর হবে।
চিন তাদের অার্থিক প্রগতির প্রথম সোপান হিসাবে রেখেছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে। সাতের দশকের গোড়ায় ইন্দিরা গান্ধীও ‘গরিবি হটাও’ স্লোগান দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। তখন থেকেই সরকারি স্তরে ‘হাম দো, হামারে দো’ স্লোগান দেওয়া হয়। এই স্লোগান থেকে যে সরকার সরে এসেছে তেমন নয়, বরং অারএসএসের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি বরাবর দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেই দায়ী করে এসেছে। সম্প্রতি, ভিন্ন সুর অারএসএস প্রধানের মুখে। আসলে সংঘপ্রধান যে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেই তিন সন্তানের নিদান দিয়ে চলেছেন তা নিয়ে সংশয় নেই। অারএসএস ও বিজেপি সবসময় এই রাজনৈতিক প্রচার করে থাকে যে, ভারতে হিন্দুরা কালক্রমে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। তাদের বক্তব্য, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধে্য জন্মহার হিন্দুদের তুলনায় বেশি। এই বক্তব্যের পক্ষে তথ্যগত প্রমাণ সে-অর্থে না মিললেও মেরুকরণের রাজনীতির স্বার্থেই আরএসএস ও বিজেপির নেতাদের এহেন প্রচার।
পরিবারপিছু তিন সন্তানের নিদান বস্তুত হিন্দুদের অাবেগকেই উসকে দিতেই। স্লোগানটির পুনরাবৃত্তির মধ্য দিয়ে ভাগবত বলেছেন, জনসংখ্যার হার কমতে থাকলে সমাজ থাকবে না। জনসংখ্যার হার ঠিক রাখতে ২.১ সন্তান নীতি নিয়ে দেশকে চলতে হয়। সন্তানের ক্ষেত্রে ভগ্নাংশ হওয়া সম্ভব নয়। সে-কারণে তিনি দুয়ের পর তিনের কথা বলছেন।
বলা বাহুল্য, বাস্তবে স্লোগানটি সামনে অানার মধ্য দিয়ে মেরুকরণকেই জোরদার করতে চায় সংঘ পরিবার। সামনে বিহার-সহ অনেক রাজে্য বিধানসভা ভোট। গুরুত্বপূর্ণ এই ভোটগুলির অাগে বিজেপি ও সংঘ পরিবার যে কোনও উপায় মেরুকরণ চায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.