Advertisement
Advertisement
Civilisation

এক ভারতীয়র নিরীহ প্রশ্নে গুলি! নষ্ট হচ্ছে সভ্যতা ও সহিষ্ণুতার সখ্য

হারিয়ে গিয়েছে সহিষ্ণুতার পাঠ।

Bond of civilisation and tolerance is being destroyed
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 8, 2025 7:41 pm
  • Updated:October 8, 2025 7:41 pm   

‘আপনার লাগেনি তো?’ এক ভারতীয়র এই নিরীহ প্রশ্নে মার্কিনি খুনির তাঁকে হত‌্যা প্রমাণ করে সভ‌্যতা থেকে হারিয়ে গিয়েছে সহিষ্ণুতার পাঠ।

Advertisement

‘সভ্যতা’ ও ‘সহিষ্ণুতা’– এই দু’টি শব্দ একসময়ে আমাদের মনে পাশাপাশি বাস করত বন্ধুর মতো। বিদ্বেষ বিরোধিতা অল্পই ছিল তাদের মধ্যে। যান্ত্রিক আধুনিকতা যত বেশি ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের, মনের মধ্যে তত বেশি নষ্ট হচ্ছে সভ্যতা ও সহিষ্ণুতার সখ্য। আমাদের আচার-ব্যবহার থেকে ঝরে যাচ্ছে সৌজন্য। ভাষা হারাচ্ছে মাধুর্য। সম্পর্কে আবছা হচ্ছে সততা। আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্রমশ ক্ষীয়মান। সভ্যতার মূল্য এখন জৌলুসে, মান্যতা বিলাসে। সভ্যতার মাপ এখন বিত্তের প্রবল প্রকাশে আর তার অভিজ্ঞান এখন ব্র্যান্ডের নিঘোর্ষে। সভ্যতার সংজ্ঞা বদলাতে বদলাতে আমাদের মনের মধ্যে জ্বলে উঠেছে মস্ত বড় একটা বিলবোর্ড। যার বুকে লেখা: ‘সভ্যতা = অহং’!

এই প্রত্যয় ও প্রচারের অহরহ প্রকাশ ঘটছে বিশ্বজুড়ে ব্যক্তিগত জীবনে মারণযজ্ঞে। খবরের কাগজ উপচে বিচিত্র হত্যার খবর প্রায় রোজ। সন্তান কুচি কুচি করছে মা-কে। স্বামী-স্ত্রী খুন করছে পরস্পরকে। প্রেমিক-প্রেমিকা উন্মত্ত ক্রোধে হত্যা করছে একে-অপরকে।
এবার তাকানো যাক পৃথিবীর সবথেকে সভ্য ও ক্ষমতাবান ও ধনী দেশ আমেরিকার দিকে। সামাজিক স্তরে প্রাত্যহিক খুনোখুনির চেহারটা সেখানে সত্যিই ভয়াবহ। কেননা অস্ত্রের খোলাবাজারে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। হাত বাড়ালেই বন্দুক। আর হাতে বন্দুক মানে সব্বার প্রাণ হাতের মুঠোয়। ট্রিগার টানলেই, সমস্ত রাগ-অভিমান, ঈর্ষা-ঘৃণা, প্রতিশোধ-প্রত্যাঘাতের নির্ভুল উচ্চারণ।

চোখের সামনে লুটিয়ে পড়া বহু মৃতদেহ– এই দৃশ্য দেখে হত‌্যাকারীর বিকৃত আত্মতৃপ্তির শেষ থাকে না। সে-ই স্বয়ং ঈশ্বর, এই বোধ ও উন্মাদনা বিদ্ধ করে ঘাতককে। আমেরিকায় ক্লাসরুমে ঢুকে বন্দুকের গুলিতে পালে পালে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাকে হত‌্যার দিশাহারা উন্মত্ততার খবর আমরা পড়েছি। এবং সেই খুনির দেখাও আমরা পেয়েছি সংবাদপত্রের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়।

সম্প্রতি আমেরিকায় ডালাসের এক পেট্রোল পাম্পে বচসা থামাতে গিয়ে রাকেশ এহাগবান নামের এক ভারতীয় এক মার্কিনির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন: আপনার লাগেনি তো? আপনি ঠিক আছেন তো? রাকেশ জানতেন না এই আমেরিকানই একটু আগে এক আমেরিকান মহিলাকে তার বাচ্চার সামনে গুলি করেছে! কোনও কারণে দু’জনের মধ্যে সামান্য তর্ক হয়। কোথাকার কোন নারী তার বক্তব্যকে তর্কাতীত না ভেবে তার সঙ্গে তর্ক করার ধৃষ্টতা, অস্মিতা দেখাচ্ছে? ব্যস! নারীর এই আস্পর্ধা সহ‌্য হবে কেন! স্ট্যানলি চালাল গুলি। মহিলা তার মেয়ের সামনে লুটিয়ে পড়লেন। এই ঘটনার মুহূর্ত পরে রাকেশ সেখানে।

তিনি জানেন না, কে গুলি করেছে। উত্তেজনায় খুনি স্ট্যানলিকেই উদ্বেগভরে প্রশ্ন করে ফেললেন, আপনার লাগেনি তো? ‘কালো ইন্ডিয়ান’-এর এই ভদ্রতা সহ্য হল না স্ট্যানলির। রাকেশের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মুহূর্তে সে চুরমার করে দিল খুলি। তারপর চেষ্টা করল পালাতে। অসম্ভব! এক পুলিশ ছুটতে-ছুটতে এসে ঝঁাপিয়ে পড়ল স্ট্যানলির উপর। তার ‘ঈশ্বর-হওয়া’ শেষ হল।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ