Advertisement
Advertisement

Breaking News

Social Media Guidelines

সোশাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ন্ত্রণে ‘গাইডলাইন’! কেমন হবে জনগণতন্ত্র?

ভারতের সংবিধান নাগরিকদের মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার দিয়েছে।

Center's 'guidelines' now regulate social media posts
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:September 2, 2025 8:13 pm
  • Updated:September 2, 2025 8:13 pm  

বিজেপি সরকারের হাতে সেন্সরশিপ তুলে দিলে গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুপ্রিম কোর্ট বিবেচনা করুক।

Advertisement

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট নিয়ন্ত্রণে একটি স্পষ্ট ‘গাইডলাইন’ তৈরি করার জন‌্য সম্প্রতি কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। শারীরিকভাবে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিক মাধ‌্যমে পোস্টে কটূক্তি করার ঘটনা কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া একটি মামলায় এ নির্দেশ দেওয়া হলেও– এর অন্তর্নিহিত অর্থ গভীরভাবে ‘রাজনৈতিক’, মত নাগরিক সমাজের। এই ধরনের রায়ে কার্যত কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হাতে আরও একটি নতুন অস্ত্র উঠে এল, যে-সরকার কিনা গত এক দশকে ধারাবাহিকভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য নানা আইনি ফাঁদ ব্যবহার করে এসেছে।

এখানে প্রশ্নটি শুধু অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বা কটূক্তির নয়। সমস্যাটি অনেক গভীরে। গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। ইতিহাস সাক্ষী, যে-ক্ষমতা বক্তব‌্য বা শিল্পকে দমন করতে পারে, তা পরবর্তীতে রাজনৈতিক বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতেও ব্যবহৃত হয়। বিজেপি ইতিমধ্যেই ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংশোধনীর মাধ্যমে ডিজিটাল পরিসরে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের অতি আগ্রাসী ব্যবস্থা চালু করেছে। সরকারের নির্দেশে– সামাজিক মাধ‌্যম প্ল্যাটফর্মগুলিকে ব্যবহারকারীদের ‘কনটেন্ট’ সরিয়ে ফেলতে বা দায় স্বীকার করতে বাধ্য করার বিষয়টি ভয়ংকর বার্তা দেয়। এর ফলে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি হতে পারে, হয়েওছে। যেখানে মুক্তচিন্তার বদলে আত্মনিয়ন্ত্রণই হয়ে উটেছে টিকে থাকার কৌশল।

ভারতের সংবিধান নাগরিকদের মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার দিয়েছে, আর সেই অধিকারেই গণতন্ত্রের প্রাণ নিহিত। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সংখ্যালঘু বা প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণাত্মক বক্তব্য দমন করা, কিন্তু তার নামে সব মতামতকে এক ছাতার নিচে নিয়ে দমন করা কেবলমাত্র শাসকের স্বার্থে কাজ করে। মনে রাখা জরুরি, গণতন্ত্র তখনই সুস্থ থাকে, যখন আদালত সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নাগরিক অধিকারকে রক্ষা করে। হালে, দেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা, চলচ্চিত্রনির্মাতাদের চিত্রনাট্য পরিবর্তনে বাধ্য করা, কিংবা লেখকদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়া– ভয়ংকর এক নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বিজেপি সরকারের হাতে সেন্সরশিপ কেবল আইনি সীমারেখা নয়, বরং এক রাজনৈতিক হাতিয়ার, যার মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। আদালত যদি এই প্রক্রিয়াকে আরও বৈধতা দেয়, তবে তা গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিকেই নষ্ট করবে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজকেই সতর্ক হতে হবে, নইলে ভারত এক অদৃশ্য সেন্সরশিপের অন্ধকারে প্রবেশ করবে, যেখানে প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি চিন্তা হবে ক্ষমতার দড়ি দিয়ে বঁাধা। বিজেপি সরকারের এই কৌশলী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ– প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকে বজায় রাখা এবং অস্তিত্বের প্রশ্ন। সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণাবাচক ‘পোস্ট’ বা কটূক্তিতে ভরা মন্তব্যকে আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের নামে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্কুরকেও আমরা সমূলে বিনষ্ট করার পক্ষপাতী।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement