কেন্দ্রের কাছে বাংলার বকেয়া পৌনে দু’লক্ষ কোটি টাকা। রাজনৈতিক মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে এ-রাজ্যকে ভাতে মারার চক্রান্ত, নয় কি?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে ভারত নামমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির অধিকার ও পাওনা সম্পর্কে ক্রমশ উদাসীন হয়ে পড়ছে। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে কর ও অন্যান্য রাজস্বের বণ্টন নিয়ে অর্থ কমিশনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার সেসব নির্দেশের তোয়াক্কা করছে না। রাজনৈতিকভাবে ঠিক করা হচ্ছে কোন রাজ্য কত টাকা পাবে। বাংলার ক্ষেত্রে উপরন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত পাওনা টাকা আটকে রেখেছে।
কেন্দ্রের কাছে বাংলার বকেয়া পৌনে দু’-লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি নজির। অন্যান্য অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই অার্থিক বঞ্চনার পরিমাণ এত বিপুল অঙ্কে পৌঁছয়নি। গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্র বাংলাকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। বন্ধ গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্পে টাকা দেওয়াও। গ্রামীণ রাস্তা তৈরির জন্য কেন্দ্র যে-টাকা দেয়, তা-ও রাজ্যের ক্ষেত্রে বন্ধ। রাজ্য সরকার তার সীমাবদ্ধ আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে দাঁড়িয়ে জনস্বার্থে প্রকল্পগুলি চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই কেন্দ্র বাংলার পাওনা আটকাচ্ছে, বলা বাহুল্য।
তৃণমূলের অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে বিজেপি তাদের সরকারকে ভাতে মারার চক্রান্তে নেমেছে। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের-পর-এক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। কিছু প্রকল্প প্রকৃত অর্থেই অভিনব। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’-র মতো প্রকল্প অন্যান্য রাজ্য, এমনকী, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিও অনুসরণ করছে। অথচ, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলি নিয়ে বিজেপির যত আপত্তি! তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্যের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি বন্ধ করতেই কেন্দ্রীয় সরকার নানা বাহানায় আর্থিক অবরোধ তৈরি করছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যা কখনওই করা যায় না।
এমনিতেই গত ১১ বছর ধরে মোদি সরকারের বিভিন্ন নীতি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী হিসাবে কাজ করছে। জিএসটি চালু করার পর রাজ্যের আর্থিক ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছে। আগে রাজ্য বিক্রয়কর বসিয়ে নিজের প্রয়োজনমতো আয় বাড়াতে পারত। এখন আর সেটা সম্ভব নয়। জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকার জন্যও রাজ্যকে কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়।
সংবিধানপ্রণেতারা এমন যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নির্মাণ করেছিলেন, যেখানে রাজ্যগুলির আর্থিক দায় কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি। যদিও আয় করার সুযোগ তাদের কম। আয় কর, কর্পোরেট কর ইত্যাদি আয়ের প্রধান উৎসগুলি কেন্দ্রের হাতে। এবার কেন্দ্র যদি তাদের আয়কে রাজনীতি করার হাতিয়ার বানিয়ে ফেলে তাহলে তা জনগণের জন্য দুর্ভাগ্যের। কেন্দ্রের এই বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ অাচরণের প্রতিবাদে প্রত্যেকের সরব হওয়া উচিত। মানুষের বোঝা উচিত, প্রতি পদে কেমন করে ‘প্রাপ্য’ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজ্য সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.