‘চ্যাটজিপিটি’ এবার থেকে ‘অ্যাডাল্ট’ ইউজারদের সঙ্গে ‘ইরোটিক কনটেন্ট’ নিয়ে আলোচনায় সাড়া দেবে! দারুণ প্রগতির ছকে কি নব ব্যবসা? এর মাধ্যমে কত অযুতসংখ্যক ইউজারের মানসপ্রবণতা বিশ্লেষণ করার সুযোগ ও রসদ পেয়ে যাচ্ছে টেক দৈত্যটি, তা মাথায় রাখতে হবে।
‘প্লেমেট অফ দ্য মান্থ’। হিউ হেফনারের ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনের সেন্টারফোল্ডে একজন করে লাস্যময় সুন্দরীর নগ্ন বা অতি স্বল্পবসন ছবি থাকে, যা ‘প্লেমেট’ বলে পরিচিত। ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিন এই ‘প্লেমেট’ ছাড়া অপূর্ণ, খণ্ডিত, রসহারা। জঁরের নিরিখে ‘প্লেবয়’-কে অবশ্যই ‘ইরোটিকা’-র গোত্রে ফেলা যায়। অর্থাৎ এমন ‘কনটেন্ট’, যেখানে যৌনাত্মক অনুভূতি ও উত্তেজনার বিস্তার ঘটানো হয়, যৌনমূলক অভিসন্ধিকে প্রকাশ করা হয় খোলামেলা ঢঙে। অর্থাৎ আগুন জ্বলবে, কোথাও নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টাও থাকবে, যাতে শিখা দ্রুত ফুরিয়ে না গিয়ে রসের বিন্যাসকে অসমঞ্জস করে তোলে।
পর্নোগ্রাফিক ম্যাগাজিন মাত্রই ইরোটিকা। তবে পরিবেশন ও লাগাম ধরে রাখার মুনশিয়ানায় কোনও কোনও ইরোটিকা শিল্পপদবাচ্য হয়ে ওঠে। যেমন, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের লেখা ‘মেমোরিজ অফ মাই মেলানকোলি হোরস’। ২০০৪ সালে স্প্যানিশভাষী দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ করে, পরে ইংরেজি অনুবাদে ছড়িয়ে পড়ে আবিশ্বে ২০০৫ সালে। ৯০ বছরের একজন বৃদ্ধ সাংবাদিক জন্মদিন উদ্যাপন করতে তৎপর। তিনি খুঁজছেন এমন একটি কিশোরীকে, যে চতুর্দশী ও অক্ষতযোনি। এই যৌনমিলন ঘটবে টাকার বিনিময়ে। তারপর কী হল?
জন আপডাইক পাঠ্যগুণে মোহিত হয়েও সমালোচনা করে বলেছিলেন, কিছু-কিছু অংশের সঙ্গে সহমত নন। মিচিকো কাকুতানি আবার ‘আধো-আধো হৃদয়ে লেখা ভঙ্গুর গল্পকথন’ বলে দেগে দিয়েছেন গাবোর এই নভেলাকে। ইরানে এই বইয়ের পঁাচ হাজার কপি ‘নিষিদ্ধ’ করে দেওয়া হয়েছিল নামের কারণে। পরে ‘হোরস’ বা ‘বেশ্যাগণ’ কথাটিকে বদলে করে দেওয়া হয় ‘সুইটহার্টস’। তবেই ছাড়পত্র মেলে বিক্রির। মোদ্দা কথা, ইরোটিকার প্রতি দৃষ্টিকোণ কখনওই নির্ভার নয়, বরং সংকুচিত। সংশয় অথচ আগ্রহ, আহ্বান অথচ কুণ্ঠা, প্রশ্রয় অথচ লোকলাজ মিলেমিশে ‘ইরোটিকা’-কে করে তুলছে দুষ্প্রাচ্য, বা খেতে ভাল তবে হজমের পক্ষে গুরুপাক। উল্লেখ থাকুক, গার্সিয়া মার্কেস এই নভেলা লিখেছিলেন সত্তরোর্ধ্ব বয়সে। বিখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক খুশবন্ত সিং ৮৪ বছরে লেখেন ‘দ্য কোম্পানি অফ উইমেন’। ১৯৯৯ সালে বইটি প্রকাশিত। তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বর্ষীয়ান লেখক। এখানে খোলামেলা যৌনতার কথা রয়েছে। কিন্তু বইটি শেষপাতে যৌনতাভিমুখ বদলে প্রবেশ করে অন্য কোনও গোলার্ধে।
সম্প্রতি, ‘ওপেনএআই’ সাড়ম্বরে জানিয়েছে, ‘চ্যাটজিপিটি’-র উপর থেকে বিধিনিষেধ সরিয়ে দেওয়া হবে, ফলে এই চ্যাটবট এবার থেকে ‘ইরোটিক কনটেন্ট’ নিয়ে সংযোগে সাড়া দেবে। ‘ট্রিট অ্যাডাল্ট ইউজার্স লাইক অ্যাডাল্ট’– এই হল ঘোষণা। যারা ‘অ্যাডাল্ট’ তারা ইরোটিকা নিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে কথা বলতে পারবে, ভালো কথা। কিন্তু এর মাধ্যমে কত অযুতসংখ্যক ইউজারের মানসপ্রবণতা বিশ্লেষণ করার সুযোগ ও রসদ পেয়ে যাচ্ছে টেক দৈত্যটি, তাও মাথায় রাখতে হবে। মুক্তকচ্ছ হওয়ার নেপথ্যে ব্যবসায়িক স্বার্থবুদ্ধি নেই– বলা কি যায়?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.