Advertisement
Advertisement
Supreme Court

‘নো কেয়ার, নো প্রপার্টি’, সন্তানদের বৃদ্ধ অভিভাবকদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়েছে শীর্ষ আদালত

ওড়ার আকাশ বড় হলে মনের আকাশ যেন বুজে না যায়!

Children will not inherit property if they do not take responsibility of parents, says Supreme Court
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 26, 2025 6:46 pm
  • Updated:September 26, 2025 6:48 pm   

‘নো কেয়ার। নো প্রপার্টি।’ বৃদ্ধ মা-বাবার দায়িত্ব না নিলে, তাঁদের সেবাযত্নে তৎপরতা না দেখালে, সম্পত্তিও পাবে না সন্তানেরা। সুপ্রিম রায়। জানিয়েছে, দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক সন্তানকে পৈতৃক বাড়ি-সম্পত্তি থেকে বেদখল করা হবে।

Advertisement

পাখির ছানা যখন বড় হয়ে যায়, একা-একা উড়ে যায় আকাশে। আমাদের ছেলেমেয়েদেরও কি অধিকার নেই একা-একা আকাশভ্রমণে যাওয়ার? নিশ্চয়ই আছে। তবে তফাত হল, মানুষের সন্তানদের জন্য ওড়ার আকাশ ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।

এ-কথা বলতে বলতে মায়ের চোখ ভরে ওঠে জলে। হয়তো সন্তানের মঙ্গলকামনায়, বা ভবিষ্য-ভাবনায়? আসলে, এত কথার অবতারণা হয়েছিল, যখন বড় ছেলেটি পুরনো সংসার ছেড়ে উঠে যেতে চাইছে অফিস থেকে পাওয়া নতুন ফ্ল্যাটে। ছিমছাম, সুন্দরী তন্বীর কোমরের মতো সেই ফ্ল্যাট। সেখানে পড়বে না ছায়া ফেলে আসা জীবনের, অতীতের, দাগ ও কলঙ্কের। মা-বাবার সঙ্গে চিলতে ভাড়াবাড়িতে কেটেছে তার কৈশোর-যৌবন। এজমালি বারান্দা, বাথরুমও।
এখানে প্রচুর বন্ধু ছিল, এখন নেই। কারণ, নিম্নমধ্যবিত্তের এই ‘খোলি’-তে দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে গিয়েই আয়ু কেটে যায়, লেখাপড়া করার স্বপ্ন ক’জন দেখে, বা দেখলেও, ক’জনের স্বপ্নপূরণ হয়! বন্ধুদের লেখাপড়া হয়নি। এই নিরক্ষর, হুল্লোড়সর্বস্ব, গ্রাম্য রুচির বন্ধুদের তাই এড়িয়েই চলতে চায় ছেলেটি। এমনকী, সম্পর্ক রাখতে চায় না সহোদরের সঙ্গে। মায়ের পেটের ভাইটি ঘটনাচক্রে বাহুবলী ‘ডন’ হয়ে উঠেছে। মুম্বইয়ের অন্ধকার জগতের বেতাজ বাদশা। তারই হুমকির জোরে ইন্টারভিউয়ে উতরেছিল বটে, তবে ফ্ল্যাট সে পেয়েছে আপন কর্মদক্ষতায়– এমনই মনে করে ছেলেটি।

বাবা, চলে যাবে শুনে– তাকে ভর্ৎসনা করে। মা, রেগে যায় না। পুত্রবধূটিও এই ‘খোলি’-র মেয়ে। সে-ও চায়, যেখানে যাবে, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে যেতে। তবে ছেলেটি চায় না। মা তখন ক্রন্দররতা পুত্রবধূকে স্নেহাশিস করে বলে: তোদের হৃদয়ে জায়গা দিস, তোদের বাড়িতে থাকলাম কি থাকলাম না, বড় কথা নয়। ‘ডন’ হয়ে ওঠা ভাই চাইলেও পুলিশের ভয়ে বাড়িতে আসতে পারে না। ব্যক্তিত্বময়ী মা চায়ও না, ছেলের অসৎ পথে উপার্জন করা টাকায় ভোগ করতে। যেটুকু সম্বল সেটুকু দিয়েই দু’জনে চালিয়ে নেবে। অবশ্যই ভরসা ছিল বড় ছেলেটি। কিন্তু সেও চলে গেল এবার।

মহেশ মঞ্জরেকর পরিচালিত ‘বাস্তব’ মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে। সাদাসিধে ‘খোলি’-র ছেলের ঘাতক ডন হয়ে ওঠার পরিক্রমা সেলুলয়েডে তুলে ধরে সঞ্জয় দত্ত নন্দিত হয়েছিলেন সর্বস্তরে। স্বয়ং দিলীপ কুমার মনে করেছিলেন, এ রোলে সঞ্জয়ের পরিবর্তে কাউকে ভাবাই যায় না, এমনই ছিল সর্বগ্রাসী উপস্থিতি। কিন্তু বাস্তবময়ী ‘মা’-র ভূমিকায় রিমা লাগুর অভিনয়ও কি ভোলা সম্ভব? ছেলে বুড়ো মা-বাবাকে দেখছে না, পালাচ্ছে দায়িত্ব ছেড়ে, কিন্তু কেমন শান্ত স্বরে, অভিমান গোপন করে, মা কষ্ট পরিপাক করছে!

অবশ্য ২০২৫ সালে, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে, অসহায় মা-বাবা যদি আদালতের দ্বারস্থ হন, তাহলে বিচার হবে বইকি। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক সন্তানকে পৈতৃক বাড়ি-সম্পত্তি থেকে বেদখল করা হবে। ‘মানুষ-ছানা’, কী চাও? ওড়ার আকাশ বড় হোক, তবে মনের আকাশটি যেন বুজে না যায় বাপু।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ