Advertisement
Advertisement
Bribe Culture

উৎকোচ তত্ত্ব, কেন সম্পূর্ণ নির্মূল হয় না?

ঘুষ হতে পারে স্পষ্ট, প্রচ্ছন্ন, কখনও-বা নিষ্কাম উপহার।

Corruption and bribe culture

প্রতীকী ছবি।

Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:June 19, 2025 7:56 pm
  • Updated:June 19, 2025 7:57 pm  

ঘুষ হতে পারে স্পষ্ট, প্রচ্ছন্ন, কখনও-বা নিষ্কাম উপহার। লিখেছিলেন পরশুরাম। আটকানোর চেষ্টা সত্ত্বেও ঘুষের প্রবৃত্তিকে নির্মূল করা যায়নি।

মাছ কখন জল খায়, আর রাজপুরুষ কখন ঘুষ খায়, তা নাকি জানতে পারা যায় না। এ-বচন কৌটিল্যের। কিন্তু তা কি সব ক্ষেত্রে ঘটে? পেনশনের ফাইল এগচ্ছে না, কারণ, সরকারিবাবু ঘুষের পয়সা থেকে এক নয়াও কম নেবেন না। এদিকে, যার পেনশন আটকে, সে বেচারি গরিব স্কুলটিচার। ঘুষের টাকা দিতে মন সরে না, আদর্শে বাঁধে। আবার, টাকা যদি দিতেও-বা হয়, সামর্থ্য কোথায়! উপায়হীন পেনশনপ্রার্থী স্কুলমাস্টার ফোন ঘোরায় মুন্নাভাইকে। খুলে বলে– সমস্যা।

একটি জনপ্রিয় এফএম রেডিও স্টেশন থেকে মুন্নাভাই প্রত্যেককে ‘গান্ধীগিরি’-র পাঠ দিচ্ছে তখন। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করো, কিন্তু প্রতিবাদে যেন হিংসার স্পর্শ না থাকে। মুন্নাভাই সব শুনে বাতলে দেয় পথ– কী করতে হবে। সেই মতো অফিস চলাকালীন পেনশনের দরবার করতে হাজির হয় স্কুলশিক্ষক। সরকারিবাবু বলে, টাকা না-দিলে ফাইলে সই করব না, কতবার বলেছি! তা-ও কেন চলে আসেন জ্বালাতে? স্কুলশিক্ষক স্মিত হেসে বলে, টাকা তো নিয়ে এসেছি আজ। তারপর শুরু হয় আশ্চর্য বস্ত্রমোচন পর্ব। জামা ও জুতো, ঘড়ি ও চশমা, বেল্ট ও প্রেশারের ওষুধ একে-একে রাখতে থাকে স্কুলশিক্ষক– সরকারিবাবুর টেবিলে। আর, প্রত্যেকটির দাম কত, তা-ও উল্লেখ করতে ভোলে না।

হাসির হিড়িক পড়ে যায় অফিসজুড়ে। ভিড় জমে। কৌতূহলীরা মন্তব্য ছুড়তে থাকে। চূড়ান্ত বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে চটজলদি পেনশনের ফাইল ‘ক্লিয়ার’ করে দেয় সেই সরকারি কর্মচারী। এখানে অন্যায়ের শনাক্তকরণ ঘটল, প্রতিবাদও হল, তবে অহিংস পন্থায়। সাপের মরা ও লাঠি ভাঙার এমন সকৌতুক ঘটনা দেশবাসীর সামনে উপস্থিত করেছিলেন রাজকুমার হিরানি ‘লাগে রহো মুন্নাভাই’ (২০০৬) সিনেমায়।

এর বিপরীতে, ‘উৎকোচ তত্ত্ব’ গল্পে ‘পরশুরাম’ ওরফে রাজশেখর বসু লেখেন যে, ‘ঘুষগ্রাহী অনেক ক্ষেত্রে নিজেই বুঝতে পারে না যে সে ঘুষ নিচ্ছে।’ কেননা, ঘুষ হতে পারে স্পষ্ট, কখনও প্রচ্ছন্ন, কখনও-বা নিষ্কাম উপহার। যে ঘুষ ‘অফার’, সে ব্যক্তি যদি বুদ্ধিমান হয়, তাহলে এই স্তরভেদ উপলব্ধি করা, আরও দুঃসাধ্য।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় ঘুষ আটকানোর শত চেষ্টা সত্ত্বেও উৎকোচ দানের প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায়নি। বিরাট মাপের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে বাঘা-বাঘা মানুষের নাম। কেস চলে, কিছুর সমাধান হয় অংশত। বাকির হদিশ পেতে-পেতে কারও জীবনের নটেগাছই মুড়িয়ে যায়। জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমায় পুলিশ, প্রশাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার নিবিড় ঘুষ-আঁতাঁতের কথা বলা হয় রাখঢাক না রেখে।

‘দ্য প্রিন্স’ বইটিকে শাসকবর্গের অদ্বিতীয় সংহিতা বলা চলে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শাসকদের কী করণীয় তা বলতে গিয়ে, বইয়ের লেখক মেকিয়াভেলি ঘুষের প্রসঙ্গ টেনেছেন, এবং শাসকের হয়েই তাঁর অবস্থান বাতলেছেন। সম্প্রতি ‘ট্রেড লাইলেন্স’ পাওয়া নিয়ে বেআইনিভাবে টাকা দেওয়া-নেওয়ার অভিযোগে বাতাসের আঁচ তপ্ত। আমরা নীতির প্রশ্নটি এড়িয়ে যাব কি মেকিয়াভেলির মান্য দর্শন মেনে?

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement