Advertisement
Advertisement
Seasonal Farewell

ক্ষণস্থায়িত্বের মধ্যেই বৈচিত্র, বাঙালির ঋতু বিদায় সম্ভাষণ

ঋতু উপভোগ করার মতো বাঙালির সংখ্যা কমেছে?

Editorial of Bengali seasonal farewell greetings
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 12, 2025 9:50 pm
  • Updated:October 12, 2025 9:50 pm   

বাঙালি না পারে কোনও ঋতুকে বেশি দিন সহ্য করতে, না পারে উপভোগ করতে। বর্ষা যাক, এখন চাইছে। এই ক্ষণস্থায়িত্বের মধ্যেই বৈচিত্র।

Advertisement

সম্প্রতি, আবহাওয়া দপ্তর এই ‘আশ্বাস’ দিয়েছে, আর মাত্র দু’দিন বৃষ্টির পরে বর্ষার মেয়াদ ফুরচ্ছে। সে বিদায় নিচ্ছে। এই পূর্বাভাসে ‘আশ্বাস’ শব্দটি জরুরি। এবং বর্ষার যদি কোনও মন থাকত, ওই শব্দটিকে রূঢ় বলতেও দ্বিধা করতাম না। কেন না, বর্ষার মন বুঝত, বাঙালি চাইছে বাংলা থেকে এবার বর্ষা গেলে বাঁচে। অথচ ক’-মাস আগে বর্ষা যখন আসি-আসি করেও আটকে, বাঙালির সে কী আকুল প্রতীক্ষা বর্ষার জন্য! আর বর্ষা এসে পড়তেই বাঙালির সে কী উচ্ছ্বাস। বর্ষার মজলিশ। গান-কবিতার বর্ষাবরণ। ইলিশে-খিচুড়িতে বর্ষার উৎসব। এত দিন শুষ্কতাপের দৈত্যপুরে দগ্ধ হচ্ছিলাম আমরা। এবার তপের তাপের বাঁধন কাটল রসের বর্ষণে।

কিন্তু অধিকাংশ বাঙালির মন কোনও ঋতুকেই বেশি দিন সহ্য করতে পারে না। উপভোগ করা তো দূরের কথা। ঋতুর ভ্যারাইটি স্টোর্সেই বাঙালির অফুরন্ত আহ্লাদ। শীত পড়লে প্রথম প্রথম বাঙালির বেশ লাগে। কিন্তু যেই না ক’দিনের জন্য জাঁকিয়ে পড়ে শীত, অধিকাংশ বাঙালি শীতে কাতর হয়ে পড়ে। শীত উপভোগের মনোভাব যে তার নেই, তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ বাঙালিই শীত কাতুরে। শীতে কুঁকড়ে থাকতে ভালবাসে। শীতের কুয়াশায় তার রুচি নেই। শীতের বৃষ্টি তাকে রোম্যান্টিক করে না। শীতের হিমশীতল জ্যোৎস্নায় সে চড়ুইভাতি করে না। কলকাতার শীতেও বহু বাঙালি মাঙ্কিক্যাপ পরে গলায় মাফলার জড়িয়ে ঘোরে। ঠান্ডা লাগার ভয় তাকে তাড়া করে সর্বক্ষণ।

শীতের বাঙালির একমাত্র ভাবনা, কখন পোড়া শীতকাল গিয়ে সূর্যের তাপ ফিরবে। বাতের ব্যথায় সেক দেওয়া যাবে। গা থেকে গরম জামার চাপ নামানো যাবে। কিন্তু গ্রীষ্মও বেশি দিন সহ্য হয় না! গরমি থেকে সে চিরকালের পলাতক। এসি-র ঠান্ডাতেই বেশি আরাম পায়। এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথকে। তিনিই একমাত্র বাঙালি, যিনি মনেপ্রাণে বীরভূমের ভয়াবহ গ্রীষ্মকে উপভোগ করতেন।

১ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন হত শান্তিনিকেতনে। কেননা ২৫ বৈশাখের বিপুল গ্রীষ্মে শান্তিনিকেতনের আশ্রম গ্রীষ্মের ছুটিতে। রবীন্দ্রনাথ একা থেকে যেতেন প্রবল গ্রীষ্মের দহন উপভোগ করতে। এবং সেই উপভোগপ্রসূত এক অসাধারণ গান তঁার পক্ষেই লেখা সম্ভব হয়েছে: ‘রজনী নিদ্রাহীন, দীর্ঘ দগ্ধ দিন/ আরাম নাহি যে জানে রে।’ তবু আরাম পেতে কলকাতায় ফেরেননি।

বসন্ত-শরৎ এসব ঋতু উপভোগ করার মতো বাঙালির সংখ্যাও ক্রমশ কমেছে। এখনকার বাঙালির শরৎ মানেই পুজোর হিড়িক। শপিং। ভিড়। এবং অহেতুক খরচের বিলাস। কিংবা বাংলা থেকে বাইরে যাওয়ার ট্রেন বা প্লেন ধরার ঊর্ধ্বশ্বাস বাতিক। কলকাতার বাঙালির কাছে হেমন্ত ঋতুটাকেও আলাদা করে চেনার উপায় কি আর সত্যি আছে? হালের বাঙালি চেনে বাংলার শুধু তিনটি প্রকট ঋতু– শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। এ-বছরের বর্ষা হয়তো তার মাত্রাজ্ঞান হারিয়েছে। এমন বেয়াদপ বর্ষা বাঙালির আর সহ্য হচ্ছে না। যাক, এবার সে যাচ্ছে। বাঁচা গেল!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ