Advertisement
Advertisement

Breaking News

Education Policy

শিক্ষার মান ও পরিসর, কোন পথে রাষ্ট্রীয় নীতি?

ভারতের শিক্ষানীতির গভীর সংকট ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

Editorial on Education policy of India
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:July 16, 2025 9:44 pm
  • Updated:July 16, 2025 9:44 pm  

সংবিধান শিক্ষাকে সমানাধিকারের ভিত্তি হিসাবে চিহ্নিত করলেও রাষ্ট্রীয় নীতি তা অস্বীকার করায় উদ্যোগী। ক্ষতিগ্রস্ত সার্বিক শিক্ষার মান ও পরিসর।

Advertisement

ভারতের শিক্ষানীতির এক সূক্ষ্ম অথচ গভীর সংকট ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে– যা ভাষাকেন্দ্রিক বৈষম্যের একটি ছদ্মবেশী রূপ। ‘মাধ্যম’ ভাষাসংক্রান্ত যে-দ্বন্দ্ব দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রবল হয়ে উঠেছে, তা মূলত রাজনৈতিক ভাষাবিদ্বেষ, সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং শ্রেণিচ্যুতি– এই তিনের ঘুণে ধরা জটিল যোগফল।

ভারতের মতো দেশে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা বহু দিন ধরেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক। কিন্তু রাষ্ট্রের নীতিতে এই বাস্তব স্বীকৃতি পায় না, এবং একাধিক সময় সচেতনভাবে অস্বীকার করা হয়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ত্রিভাষা নীতি’-র যে আগ্রাসী প্রয়োগে নেমেছে, তা জাতীয় ঐক্য গড়ার নামে ভাষাগত জোরজুলুমের এক রাষ্ট্রীয় রূপ। অথচ শিক্ষাবিদদের মত,
শিশুর মাতৃভাষায় শিক্ষা তার মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই অভিমত যথেষ্ট গবেষণালব্ধ এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কেবল গবেষণার মুখাপেক্ষী নয়। ভারতে কার মাতৃভাষা কী, তা-ও অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্কিত। তার উপর রয়েছে সংবিধান-স্বীকৃত মতপ্রকাশের অধিকার ও শিক্ষার মাধ্যম বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে কর্নাটক সরকার এক নির্দেশ জারি করে, যেখানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কন্নড় ভাষায় শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এই নির্দেশ সংবিধানবিরোধী। কারণ, শিশুদেরও নিজের ভাষা বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। রাষ্ট্র তার নিজস্ব ভাষানীতি কোনও শিশুর উপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এখানেই প্রশ্ন উঠে আসে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকার সংক্রান্ত। যে প্রতিষ্ঠান বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চায়, রাষ্ট্র কি তাকে আটকাতে পারে কখনও?

আদতে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’-র (এনইপি) ভিতরেই লুকিয়ে এক ধরনের ইংরেজি-বিরোধিতা, যা জনমানসের চাহিদার বিপ্রতীপ। স্থানীয় ভাষাকে রক্ষা করার সঙ্গে-সঙ্গে সেসব রাজ্যই কিন্তু ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রবর্তনেও উদ্যোগী। জনগণের বাস্তব চাহিদাও সেদিকেই ইঙ্গিত করে। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণ করছে মূলত ব্যয়বহুল ও বেসরকারি ইংরেজি মাধ‌্যম স্কুল। সরকারি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ অপ্রতুল হওয়ায় তুলনামূলক সচ্ছল শ্রেণি বেসরকারি শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। দরিদ্র ও অনগ্রসর শ্রেণির কাছে সে-পথও বন্ধ। এই ব্যবধানের ফলেই জন্ম নিচ্ছে শিক্ষাবৈষম্য– যা কেবল ভাষাগত নয়, সামাজিক-অর্থনৈতিক শ্রেণি নির্মাণের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে।

সংবিধান শিক্ষাকে একটি সমানাধিকারের ভিত্তি হিসাবে চিহ্নিত করলেও, রাষ্ট্রীয় নীতি তা অস্বীকার করার প্রয়াসে নেমেছে। এতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ছেলেমেয়েরা, যারা ইংরেজিকে আত্মমুক্তির হাতিয়ার বলে মনে করে। কারণ, এই একটি ভাষাই তাদের জন্য গ্লোবাল সার্ভিস সেক্টরে প্রবেশের দরজা খুলে দেয়। সেটিই বর্তমান রাষ্ট্রনীতি সচেতনভাবে সংকুচিত করছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement