করোনা-উত্তর সামাজিক নিষ্ক্রিয়তাই ‘জেন জি’-র অসামাজিকতার কারণ। আবার তাদের দুঃসাহসী গর্জনেই নেপাল থেকে লাদাখ প্রতিবাদমুখী।
নাম ঈশিত ভাট। ক্লাস ফাইভ। বছর দশের খুদে। সে এসেছিল সবে ’৮৩-তে পা রাখা অমিতাভ বচ্চনের বিখ্যাত ‘গেম শো’-তে। শো-র শুরু থেকে তার ব্যবহারে দেখা গেল চ্যালেঞ্জ নেওয়ার বেপরোয়া ভঙ্গি। সে যেন জানেই না, তার উল্টোদিকের চেয়ারে বসে স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন! অমিতাভ যেই সেই বালককে বোঝাতে গেলেন তঁার গেমের বিশেষ পদ্ধতি, বালক বলল, ওসব আমার জানা, আপনি সরাসরি প্রশ্ন করুন। এবং বেশ কয়েকবার প্রশ্নের ক্ষেত্রে অমিতাভ উত্তরের ‘অপশন’ বলার আগেই তাঁকে থামিয়ে উত্তর বলে অমিতাভকে ওই দশ বছরের বালক আজ্ঞা করে, ‘এবার লক করে দিন’। এবং বেশিরভাগ উত্তরই বেঠিক।
তবে উত্তর ঠিক হোক বা বেঠিক, ওই খুদে সারা ভারত কাঁপিয়ে দিয়েছে তার ঔদ্ধত্যে। তাকে নিয়ে গর্জে উঠেছে বিতর্ক। একদল বলছে, এই বালককে বাবা-মা, এবং শিক্ষকরা শেখাননি, কীভাবে গুরুজনদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। এবং তাকে শো-এর আগে বলে দেওয়া উচিত ছিল, কে অমিতাভ বচ্চন, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে কতখানি সুভদ্র ও শ্রদ্ধাবান হওয়া উচিত। আর একদলের বক্তব্য, ঈশিত নিতান্তই বালক, সে নার্ভাস হয়ে একটু বেশি স্মার্ট হতে চেয়েছে। এবং উদ্ধত আচরণ করে ফেলেছে। অমিতাভ অবশ্য এতটুকু বুঝতে দেননি, ওই বালকের ঔদ্ধত্যে তিনি কতটা বিরক্ত বা ক্ষুব্ধ।
ঈশিত ভাট ‘জেন অালফা’ প্রজন্মের নিটোল বিশুদ্ধ নিদর্শন। ২০১০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে যাদের জন্ম, তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এখন ‘জেন আল্ফা’ বা ‘অ্যাল্ফ্’। এরা বড় হয়েছে এবং হচ্ছে ট্যাবলেটস্-স্মার্টফোন, এআইয়ের সঙ্গে। ছোট্ট জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে এবং কাটছে অনলাইনে; স্ক্রিনের সামনে। এদের শিক্ষাদীক্ষা, সামাজিকতা, মেলামেশা এবং স্বভাবের উপর কোভিড ১৯-এর বিপুল প্রভাব ভুলে গেলে চলবে না। এদের লেখাপড়ার প্রায় সবটাই ‘টেকনোলজি-ড্রিভন্’। সেখানে বাবা-মা বা শিক্ষকদের নীতিশিক্ষার প্রভাব বেশি নেই।
এদের আচরণে, সামাজিক ব্যবহারে প্রত্যাশিত নম্রতা, ভদ্রতা ফুটে ওঠে না কারণ এরা সামাজিক মেলামেশায় অভ্যস্তই নয়। স্বচ্ছন্দ অনলাইন কমিউনিকেশনে। সমাজবিদরা বলছেন, পৃথিবীজুড়ে এই ‘আই-প্যাড কিডস্’-দের মধ্যে দেখা যাচ্ছে এমন উদ্ধত আচরণ, যা হল ‘আন্ইন্টেনশানাল গ্লোবাল এক্সপেরিমেন্ট’। কারণ এদের গড়ছে না কোনও মানব অভিভাবক। বরং বড় করছে ‘ভার্চুয়াল অ্যাসিসটেন্স’, ‘সিরি’, ‘অ্যালেক্সা’, ‘চ্যাটজিপিটি’। জেন অালফার প্রধান ‘গুণ’: এরাই ভবিষ্যতের ডিসিশন মেকার। প্রধান ‘দোষ’: গুরুজনদের ভক্তি শ্রদ্ধা করার কথা বলা হলে এরা উল্টে বলে, কেন করব ওরা যদি আমাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা না করে?
অমিতাভ যেভাবে ঈশিতের প্রতি এতটুকু অসন্তোষ প্রকাশ না করে তার সমস্ত ধৃষ্টতাকে মার্জনার চোখে দেখলেন, তা বোঝাল তিনি মনে রেখেছেন লাদাখে অ্যাক্টিভিস্ট সোনাম ওয়াংচুকের পাশে দাঁড়িয়েছে এই জেন প্রজন্মই। সোনাম তো তাঁর আন্দোলনের নামই দিয়েছেন ‘জেন জি’ রেভোলিউশন। সবাই সবুজ, সবাই তারা কাঁচা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.