Advertisement
Advertisement
Tram

ট্রাম যেমন পরিবহণের মাধ্যম, তেমনই সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান

ট্রামের চলনভঙ্গিতে ফুটে ওঠে বিশেষ জীবনভঙ্গি।

Editorial on Kolkata Tram
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 6, 2024 9:12 pm
  • Updated:October 6, 2024 9:12 pm  

ট্রাম যেমন পরিবহণের মাধ্যম, তেমনই সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞানও। আবার ট্রামের চলনভঙ্গিতে ফুটে ওঠে বিশেষ জীবনভঙ্গিও। সেটা কী? 

Advertisement

বলিউডের সিনেমায় কলকাতার আস্বাদ ও চালচিত্র বোঝাতে অব্যর্থভাবে মুখ দেখাত ট্রাম। এবার তাহলে কী হবে? কলকাতার অর্ধেক কলকাতাত্ব কি অর্ধনমিত ও অস্তমিত হবে? এসব জিজ্ঞাসার ফাঁকেই স্মৃতিতে ছেঁড়া ঘুড়ির মতো লাট খেয়ে পড়ে কখনও পাঁচের দশকে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ট্রাম পোড়ানোর দৃশ্য, কখনও জীবনানন্দ দাশের অমোঘ মন্তব্য ট্রামের প্রতি– “ফিলোজফার’স কার”। এক সময় টালা থেকে টালিগঞ্জ জুড়ে ৭৬ কিলোমিটার পথ ছিল ট্রাম চলাচলের জন্য। হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে তা চলে গিয়েছিল শিবপুর অবধি। ক্রমে সংকুচিত হতে থাকে যাত্রাপথ। ২০১১ সালে ট্রাম-পথের দৈর্ঘ্য কমে দাঁড়ায় ৫৬ কিলোমিটারে।

লকডাউনের পরে, ২০২২ সালে, আরও কমে হয় ১৪ কিলোমিটার। খবরে প্রকাশ– পথ হারিয়ে, রুট ভ্রষ্ট হয়ে এই মুহূর্তে ডিপোয় বন্দি হয়ে আছে ২৪০টি ট্রাম, তার ৬০ শতাংশ বিকল। ট্রামের ডিপোগুলি হয় বিক্রি হয়ে গিয়েছে, নয়তো বিক্রির প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এক-একটি ট্রামের গড় আয়ু ৫০ থেকে ৬০ বছর। ভালভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে ট্রামের আয়ু বাড়তেও পারে। কিন্তু যেসব ট্রাম ইতোমধ্যে হয়ে পড়েছে ডিপো-বন্দি, তাদের কি খোলা আকাশের তলায় ফেলে রাখলে লাভ হবে? না কি স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করে দেওয়াই শ্রেয়? এই প্রশ্নগুলি ধারালো চপারের মতো আঘাতে-আঘাতে স্নায়ুকে স্মৃতিচ্ছিন্ন করতে চায়।

ট্রাম যেমন পরিবহণের মাধ্যম, তেমনই সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞানও। আবার ট্রামের চলনভঙ্গিতে ফুটে ওঠে বিশেষ জীবনভঙ্গিও। ট্রাম মন্থর যান, তার কারণ, এই নয় যে সে গতি বাড়াতে পারে না, কারণ, তার গতি-বৃদ্ধির পথ সীমিত, অন্য-নির্ভর। কলকাতায় যেভাবে ট্রামের লাইন পাতা, তাতে রাজপথে ট্রামকে চলতে হয় অন্য যানবাহনের সঙ্গেই। আর আমরা এমন দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত, যেখানে ট্রামের লাইনে, ট্রামের পথ রুদ্ধ করে, ঢুকে পড়েছে অন্যান্য যান। ঘন-ঘন ঘণ্টাধ্বনি দিয়েও ট্রাম পারছে না এগিয়ে যেতে। এর মধ্যে অসহায়তা রয়েছে। যাত্রীদের বিরক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে প্রচুর। কিন্তু জীবনভঙ্গির আলোয় দেখলে, ট্রাম যেভাবে পথ চলে, তা-ই কি ভদ্রজনোচিত নয়? চাইলেই নিজের মতো করে ট্রাম চলতে পারবে না, তাহলে লাইনচ্যুত হবে।

কিন্তু স্বধর্ম রক্ষা করেও সে নিজের স্বাতন্ত্র্য ও অস্মিতা ধরে রাখতে পারছে না, কারণ অন্য যানের স্বধর্ম রক্ষা করার দায় নেই, ভব্যতা নেই, দ্রুতির সঙ্গে এমনই আপস করেছে তারা, যে, ট্রামের মতো হয়ে ওঠার উপায়ও আর তাদের নেই। মহানগর ট্রামরহিত হচ্ছে এই বাস্তবতার অন্য পিঠে যখন অ্যাপ ক্যাব সংস্থার বাইকের দাপাদাপি আমরা দেখি, দ্বন্দ্বের এক নতুন সমীকরণ সামনে খুলে যায়। বাইক খুচরো স্থান দিয়েও গলে যেতে চায়, সওয়ারিও সেটা চায়, তাতে সময় বঁাচে। আর এই ক্ষুৎকাতর দৃশ্যের সামনে নির্বিকারভাবে পড়ে থাকে ট্রামের পরিত্যক্ত লাইনেরা!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement