Advertisement
Advertisement

Breaking News

Language Autonomy

ভাষা অস্মিতা বনাম ভাষা স্বাধীনতা, কোন পথে যাবে দেশ?

সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর এক ব্যাঙ্ক আধিকারিক কন্নড়ে কথা না বলার জন্য সমালোচিত হন।

Editorial on Language autonomy vs. language freedom
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:May 26, 2025 8:37 pm
  • Updated:May 26, 2025 8:37 pm  

বেঙ্গালুরুর ব্যাঙ্ক আধিকারিক কন্নড়ে কথা না বলার জন্য সমালোচিত। স্থানীয় ভাষা না জানা থাকলে তা অগৌরবের?  

ভাষা অস্মিতা বনাম ভাষা স্বাধীনতা? এই দেশকে এক ছাতার তলায় আনা যাবে কোন ভাষা-দর্শনে? সম্প্রতি, বেঙ্গালুরুতে ‘স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’-র একজন ম্যানেজার পদমর্যাদার আধিকারিক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলার সময় কন্নড় বলতে অস্বীকার করেন। তাঁর মত ছিল, ভারতে হিন্দি বা ইংরেজিও বলা যেতে পারে সংযোগের ভাষা হিসাবে, কন্নড় বলতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতার কারণ কী? কিন্তু তাঁর ভাষা-দৃষ্টিকোণকে সমাজমাধ্যমে যথেষ্ট তুলোধনা করা হয়েছে কন্নড়ভাষীদের তরফে।

বেঙ্গালুরু যেহেতু কর্নাটকের রাজধানী শহর, অতএব সেখানে স্থিত ব্যাঙ্কের কর্মী কেন উপভোক্তাদের সঙ্গে স্থানীয় ভাষায় মতপ্রকাশ করবেন না, অভিযোগ উঠেছে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া স্বয়ং এ-বিতর্কে কন্নড় ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব-সূচক মন্তব্য করে বসেছেন। তিনি ‘এসবিআই’-এর ওই কর্মীর আচরণকে নিন্দনীয় বলেছেন, দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সমীপে প্রস্তাব দিয়েছেন যে, ব্যাঙ্কের কর্মীদের যেন স্থানীয় সংস্কৃতি ও ভাষা-ঐতিহ্যের প্রতি সজাগ করা হয়, দরকারে তাঁদের সেভাবে প্রশিক্ষিত করা হোক। অর্থাৎ, তাঁর ভোট কন্নড়ভাষীদের অস্মিতা রক্ষার করার দিকেই ঝুঁকেছে।

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী রূপে তিনি হয়তো প্রশাসনিক দায়িত্ব নির্বাহ করেছেন, কিন্তু রাজধর্ম পালন করেছেন কি না, সে-প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কারণ, বেঙ্গালুরুর মতো শহরে এমন অনেক কর্মপ্রতিষ্ঠান থাকতে পারে, যেখানের কর্মীরা হয়তো অ-কন্নড়ভাষী। তারা হতে পারে পাঞ্জাবি, মারাঠি, অসমিয়া বা বাঙালি, বা অন্য প্রদেশের লোক। সেক্ষেত্রে সেই অ-কন্নড়ভাষী মানুষরা কী করে কন্নড়ে সংযোগ করবেন? না করতে পারলে কি অন্যান্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তঁারা চাকরিহারা হবেন?

এই কথাটি নেহাত সম্ভাব্য তর্কের পরিধিতে আর আটকে নেই। কেননা, ‘এসবিআই’ ঘটনার পরেই বেঙ্গালুরু-স্থিত একটি টেক কোম্পানির বড়কর্তা তাঁর অফিস পুনেতে স্থানান্তরের ঘোষণা করে বসেছেন। ওই সংস্থায় কর্মরত অ-কন্নড়ভাষীদের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জিজ্ঞাস্য, পুনেতে যদি তাঁর সংস্থার কর্মীরা মারাঠি ভাষা অস্মিতার প্রাবল্যের মুখে পড়েন, এবং অনেকেই মারাঠিতে দক্ষ না হন, তাহলে কী করবেন ওই টেক সংস্থার কর্ণধার? আবার ছ’-মাস পরে সংস্থাকে সরিয়ে নিয়ে যাবেন অন্যত্র?

উদ্ভূত সমস‌্যাটিকে ‘ল্যাঙ্গুয়েজ ননসেন্স’ বলে অভিহিত করা যায়। কিন্তু সারাৎসারের সন্ধান তাতে পাওয়া যাবে কি না, সংশয় থাকছে। ভারতে সরকারি ভাষা বলতে কোনও একটি ভাষাকে বোঝানো হয় না। প্রশাসনিক ভাষা হিসাবে হিন্দি ও ইংরেজি এগিয়ে। তাহলে অ-প্রশাসনিক সংযোগের ভাষায় স্থানীয় ভাষাকে কতখানি আত্মস্থ করতে হবে, অস্মিতার প্রশ্নটি সেখানে গুরুত্ব পাবে, না কি ভাষাব্যবহারকারীর স্বাধীনতা– এসবের সমাধান কী করে ঘটবে? বঙ্গে যাঁরা বঙ্গভাষী নন, তাঁদেরই বা আমরা কী বলব?

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement