Advertisement
Advertisement
Rain

জলের গানে যত হর্ষ, গরিব তত বিমর্ষ! বর্ষার অমঙ্গল কথা

গার্সিয়া মার্কেস ফুটিয়ে তুলেছিলেন বর্ষার অ‌্যান্টি-রোমান্টিক দৃষ্টিকোণ।

Editorial on Rain what has a cruel, merciless side.
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:August 25, 2025 12:01 am
  • Updated:August 25, 2025 12:01 am   

গার্সিয়া মার্কেস ফুটিয়ে তুলেছিলেন বর্ষার অ‌্যান্টি-রোমান্টিক দৃষ্টিকোণ। জলের গানে যত হর্ষ, গরিব তত বিমর্ষ। সমাজের এই চিত্রই বড় বিচিত্র।

Advertisement

একটানা বৃষ্টি। ঠিক ৪ বছর ১১ মাস ২ দিন। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের নোবেলজয়ী উপন্যাস ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অফ সলিটিউড’-এ! সেই বৃষ্টির ভয়ংকর বর্ণনা শেষ পর্যন্ত আমাদের নিয়ে যাচ্ছে উরসুলা নামের এক নারীর পিঠে গজিয়ে ওঠা থিকথিক করা জেঁাকের বাসায়। মার্কেসের এই বর্ষা বিশ্বসাহিত্যে বর্ষার সমস্ত রোমান্টিক রূপ, জগৎ জুড়ে কবিতায়-গানে বর্ষার উদ্‌যাপন, বর্ষার একই সঙ্গে হয়ে ওঠা পেলব প্রেম এবং মধুর বিরহের ঋতু– সবকিছুকে যেন এক ধাক্কায় নস‌্যাৎ করে দেয়। আমাদের চোখের সামনে মার্কেসের বর্ষা ফুটিয়ে তোলে এক সম্পূর্ণ নতুন অ‌্যান্টি-রোমান্টিক দৃষ্টিকোণ।

এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ষার নির্মম, নিষ্ঠুর দিকটি প্রকট হয়ে ওঠে। সারা দেশে সেসব অসংখ্য মানুষ, যাদের মাথার উপরে ছাদ নেই, যাদের রাত কাটে ফুটপাতে, কিংবা যাদের রান্নাঘরে, শোয়ার ঘরেও কোমর পর্যন্ত জল, দিনের পর দিন, কিংবা যাদের বাড়ির সামনে থইথই জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে হঁাটার পথ– তাদের কথা ভাবলে, তখন কি বাক্যে-সাহিত্যে বর্ষা নিয়ে রোমান্টিকতাকে মন সহজে গ্রহণ করতে পারে? বর্ষার জমা জলে যখন ডেঙ্গির মশারা বংশবৃদ্ধি করছে আমাদের চারপাশে, বর্ষার নর্দমা থেকে জমা জলকাদার পচা গন্ধে সাধারণ মানুষ গরিব এঁদো পাড়ায় অতিষ্ঠ, তখন সেখানে সেই পরিবেশে, মনপ্রাণ কি গেয়ে উঠতে পারে, ‘মেঘমল্লারে সারা দিনমান বাজে ঝরনার গান’?

সত্যিকথা বলতে, গরিব মানুষের বর্ষায় আপদ-বিপদের অন্ত থাকে না। তাদের বর্ষা অসহায়তার ঋতু। রবীন্দ্রনাথ বহু বছর আগে তঁার একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ঘোর বর্ষার মধ্যে, ১৮৯৪ সালের অাগস্ট মাসেই, ‘আমাদের দুটো জীবন আছে,– একটা মনুষ্যলোকে, আর একটা ভাবলোকে।’ বর্ষাকালে যারা গরিব মানুষ, নিতান্ত সাধারণ মানুষ, তাদের কাছে ফুটো ছাদ, ভাঙা জানালা, ডুবে যাওয়া পথ, বাড়ির মধ্যে ঢুকে আসা খালবিল, পুকুর, কিংবা বর্ষার ফুটপাতে কোলের বাচ্চাকে শুইয়ে তাকে বঁাচিয়ে রাখার আর্ত চেষ্টা– বৃষ্টিপ্রসূত আপদ ছাড়া আর কী!

বর্ষা এলেই অনেকে ভাবে ইলিশ-উৎসব! ইলিশ নিয়ে যাদের আদিখ্যেতা প্লাবনের আকার নেয় সারা দিন-রাত ইলশেগুঁড়ির মধ্যে, তারা অধিকাংশই উচ্চবিত্ত মানুষ। কিন্তু বর্ষার বস্তিগুলি কি বর্ষার ইলিশ-আদিখ্যেতার অঁাচ পোহাতে পারে? পারে কি তারা ইলিশ-উৎসবে মজলিশ জমাতে? উচ্চবিত্ত মানুষের বাড়িতে যে কাজের মেয়েটি বর্ষার ইলিশের অঁাশ ছাড়িয়ে সেসব রুপোলি অঁাশ প্যাকেটে পুরে তাদের গতি করে, সে কি ভাগ পায় একটুকরো ইলিশের? তার ঘরের মেঝেতে বর্ষার-জ্বরে ভোগা বাচ্চাকে শুইয়ে এসে সে কিন্তু ম্লান মুখে কাটে বর্ষার ইলিশ! পাশের ঘরে পিয়ানোতে বাজে ‘বাদল-দিনের প্রথম ফুল করেছ দান’-এর সুর। সে কি জানে এটি বর্ষার গান? জানে কি সে, তার ধরাছেঁায়ার বাইরে ওই ইলিশের সঙ্গে ওই গানের একটা সম্পর্ক থাকতেও পারে?

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ