Advertisement
Advertisement
Economic Growth

অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির অন্তঃসারশূন্যতা, যে কোনও মূল্যে চাকরি করার গ্লানি!

‘জব হাগিং’। নতুন শব্দটি এখন বাজার দাপাচ্ছে।

Emptiness of economic growth
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 13, 2025 9:25 pm
  • Updated:October 13, 2025 9:25 pm   

‘জব হাগিং’। নতুন শব্দটি এখন বাজার দাপাচ্ছে। যে কোনও মূল্যে চাকরি করে চলার গ্লানি অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির অন্তঃসারশূন্যতা দেখাচ্ছে।

Advertisement

বনিবনা হচ্ছে না। বসের মুখের উপর তাই চাকরিটি ছুড়ে বেরিয়ে আসা অস্বাভাবিক নয়। রোহিত, ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত হলেও ভালো গান করে, কম্পোজ করে, সুর দেয়। কিন্তু সামান্য কারণে তার সঙ্গে খটাখটি লেগে গেল বাজারের প্রসিদ্ধ সঙ্গীত পরিচালক জুটির। তাঁরা প্রভাবশালী। অল্পবয়সি ছেলেটির স্বাভিমান সহ্য হয়নি। অতএব, এবার দেখে নেওয়ার পালা। ছেলেটি যে-সুরই ধরে, সঙ্কীত পরিচালকদ্বয় বলে– হচ্ছে না। আবার করো। অপদস্থ হতে থাকে ছেলেটি। এক সময় তার ক্রোধ ঠিকরে বেরয়। যৌবন জ্বলে ওঠে প্রতিভার রোষে। সবার সামনে গেয়ে ও বিচার করে বুঝিয়ে দেয়, সে যেভাবে গাইতে চাইছে, সেটা অনেক বেশি আকর্ষক ও ব্যঞ্জনাপূর্ণ। সঙ্গীত পরিচালকদ্বয় যেভাবে গাইতে বলছে, তা বেসুরো নিশ্চয়ই নয়, কিন্তু বৈচিত্রে পিছিয়ে। বলা বাহুল্য, পরিচালকদ্বয় সঙ্গে-সঙ্গে ছেলেটিকে নিষ্ক্রমণের দরজা দেখিয়ে দেয়। অখ্যাতের গুমর তারা সহ্য কেন করবে!

মনসুর খান পরিচালিত ‘আকেলে হম আকেলে তুম’ (১৯৯৫) দেখিয়েছে অপছন্দের চাকরি ছাড়তে দ্বিধাহীন হতে পারার দুঃসাহস। ‘অব তক ছাপান্ন’ (২০০৪) বা ‘থ্রি ইডিয়টস’ (২০০৯) আবার অন্যভাবে ধরে একই বিষয়টি। সাধু আগাসে, ক্রাইম ব্রাঞ্চের খ্যাতকীর্তি অফিসার, মুহূর্তে তার হাই প্রোফাইল চাকরিটি ছেড়ে দেয়, কারণ, ঊর্ধ্বতন অফিসার প্রতি পদে তদন্তে বাধা তৈরি করছে সুচারুভাবে। সাধুর মনে হয়, জীবনের এতগুলি দিন যে দিল ক্রাইম ব্রাঞ্চকে নিঃস্বার্থভাবে, তার এই পরিণাম বেরল? এখানে চাকরি ছাড়ার কারণ অভিমান। ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় রাজু রাস্তোগি চাকরির ইন্টারভিউতে এত খোলামেলাভাবে কথা বলে যে, নিয়োগকর্তারা ঘাবড়ে যান। তাদের মনে হয়, এতখানি উন্মুক্ততা পেশায় কাম্য নয়। কিন্তু রাজু জানিয়ে দেয়– এই সারল্য, এই সততা, এই স্বচ্ছতা অনেক কষ্টার্জিত। চাকরি পাওয়ার লোভে জীবনের এই অমূল্য সম্পদ সে ছাড়তে পারবে না। তার চেয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এখানে আত্মবিশ্বাস বড় হয়ে ওঠে, অভিমান বা রাগের চেয়ে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীললোহিত চাকরি করতে চাইত না। বাঁধাধরা চাকরি মানে মনের স্বাধীনতা হরণ, চিত্তকে যেন কুয়োর ফেলে দেওয়া দড়ি বেঁধে। প্রচেত গুপ্তর সাগর একইভাবে চাকরি-বন্ধন এড়িয়ে চলতে প্রয়াসী। কিন্তু সিনেমা বা গল্পের এসব চরিত্রকে এখন আমরা কোথায় পাব, খুঁজব? ‘জব হাগিং’ বলে একটি নতুন শব্দ এখন পশ্চিমি দুনিয়া দাপাচ্ছে। ‘আলিঙ্গন’ শব্দের সঙ্গে মমত্ব, ভালোবাসা, প্রীতির মনোভাব জড়িয়ে। কিন্তু ‘জব হাগিং’ তুলনায় অনেক বেশি গদ্যময়, কড়া হাতুড়ির ঘাতসম্পন্ন। ‘জব হাগিং’ অর্থে বোঝানো হচ্ছে চাকরিটিকে প্রাণপণ আঁকড়ে ধরে রাখার সর্বস্বান্ত প্রচেষ্টা। ‘দ্য নিউইর্য়ক টাইমস’-এ সম্প্রতি
লোরা কেলি এ নিয়ে যে-নিবন্ধটি লিখেছেন তা ইতিমধ্যে হইচই ফেলে দিয়েছে। চাকরি ছাড়া নয়, বরং সব অনুভূতি গিলে চাকরি করার গ্লানিকে ভিন্নভাবে ফুটিয়েছেন। একদিকে এআইয়ের দাপট, অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক শোষণ– মানুষ যাবে কোন দিকে?

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ