স্বাস্থ্যবিমার উপর চড়া হারে জিএসটি নিয়ে সরব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের একাংশ পুরোপুরি জিএসটি প্রত্যাহারে নারাজ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম সরব হয়েছিলেন জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমার উপর চড়া হারে জিএসটি চাপানোর বিরুদ্ধে। দু’ক্ষেত্রেই প্রিমিয়ামের উপর ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি দিতে হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্যবিমা ছাড়া মধ্যবিত্তের পক্ষে এক পা চলা অসম্ভব। তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিমায় প্রিমিয়াম প্রতি বছর বাড়িয়ে দেয় বিমা সংস্থাগুলি। বিমা-গ্রাহকদের একটি বড় অংশ প্রবীণ ও পেনশনভোগী। প্রিমিয়ামের পরিমাণ লাগাতার বৃদ্ধি ও চড়া হারে জিএসটি তাঁদের পক্ষে অসহনীয়।
কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতির জনবিরোধী দিকগুলি তুলে ধরার ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় অগ্রগণ্য। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিমায়, বিশেষত স্বাস্থ্যবিমায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিএসটির চড়া হার নিয়ে মুখ খোলার পরেই সবাই নড়ে বসে। বিমায় জিএসটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। এবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকটি রাজে্যর অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রীগোষ্ঠীও মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়ের দাবির প্রতিধ্বনি করল। বৈঠকে স্বাস্থ্য ও জীবনবিমার উপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহার করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের একাংশ বিমার উপর থেকে জিএসটি পুরোপুরি প্রত্যাহারে রাজি নয়। কোনও-কোনও মহলের প্রস্তাব, শুধু প্রবীণদের স্বাস্থ্যবিমার উপর জিএসটি প্রত্যাহার করা হোক। নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে জিএসটি ছাড়ের প্রস্তাবও রয়েছে। বিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি কমিয়ে ৫ শতাংশ করার কথাও বলা হচ্ছে।
আপাতত ঠিক হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীগোষ্ঠী একটি রিপোর্ট তৈরি করে জিএসটি পর্ষদের পরবর্তী বৈঠকে পেশ করবে। তবে জীবন ও স্বাস্থ্যবিমা পুরোপুরি উঠে যাওয়ার পক্ষেই এখনও পাল্লা ভারী। এই দুই বিমায় জিএসটি পুরোপুরি প্রত্যাহৃত হলে মোট ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে। কেন্দ্র ১২ ও ২৮ শতাংশের হার দু’টি তুলে সমস্ত পণ্য ও পরিষেবাকে ৫ ও ১৮ শতাংশে নিয়ে অাসার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রাথমিক একটি হিসাবে ৫ ও ১৮ শতাংশ হার লাগু হলে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে।
এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে সে-বিষয়ে বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কিছু বলতে চাননি। জিএসটির এই বিপুল ক্ষতির বোঝা যে রাজ্যগুলিকেই বেশি পরিমাণে বহন করতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। কেন্দ্রের যুক্তি, খাদ্যদ্রব্য-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে জিএসটি কমে ৫ শতাংশ হলে জনগণের হাতে অতিরিক্ত অর্থ আসবে। সেই টাকা দিয়ে তারা অন্য সামগ্রী কিনবে। অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। এই যুক্তি কেন্দ্র আয়করের হার কমানোর সময়ও দিয়েছিল। তাতে যে বিশেষ লাভ হয়নি তা বোঝা যাচ্ছে ফের জিএসটির হার কমিয়ে কেন্দ্রের চাহিদা বৃদ্ধি
করার চেষ্টায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.