ইরান-ইজরায়েল সংঘাত অস্বস্তিতে ফেলেছে ভারতকে। আপাতত কূটনৈতিক নীরবতা ও সক্রিয় মধ্যস্থতার মিশ্র কৌশলই শ্রেয়।
ইরান-ইজরায়েল সংঘাত আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের সম্ভাবনা যেমন উদ্বেগজনক, তেমনই এর প্রভাব পড়েছে সারা দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়া জুড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। ভারত ঐতিহ্যগতভাবে ইজরায়েল ও ইরান– উভয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।
অন্যদিকে, ইরান ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা, চাবাহার বন্দর এবং মধ্য এশিয়ায় প্রবেশদ্বার হিসাবে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে একদিকে যেমন ইজরায়েলের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা, তেমনই ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ– এই দ্বৈত সম্পর্ক ভারতের পক্ষে সংঘাতের ময়দানে কোনও একটি পক্ষ নেওয়া কঠিন করে তুলছে। ভারত আপাতত কূটনৈতিক নীরবতা ও সক্রিয় মধ্যস্থতার মিশ্র কৌশল নিচ্ছে।
ইতিমধ্যেই ইরান-ইজরায়েলের সংঘাতের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের বাজারে। অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে, যার ফলে ভারতের আমদানি খরচ ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। তেল-নির্ভর অর্থনীতির ভারসাম্য রাখতে ভারতকে সাবধানী কূটনীতির আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ভারত এখনও পর্যন্ত সংযত ভাষায় ‘সংঘাত পরিহার’ এবং ‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধান’-এর পক্ষে সুর তুলে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে, ভারত এমন একটি অবস্থান নিতে চায়, যাতে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা হয়, আবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুদ্ধবিরোধী ও শান্তিপূর্ণ শক্তি হিসাবে নিজেকে তুলে ধরা যায়। এই সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, বা আমেরিকা ও রাশিয়া সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়ে, তখন ভারতের উপর চাপ বাড়বে। সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী তো বটেই যদি আরও তীব্র হয়, তবে ভারতের পক্ষে নিরপেক্ষ থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
একদিকে আমেরিকার চাপ থাকলেও ইজরায়েলের পাশে দঁাড়ানোর ঝুঁকি, অন্যদিকে ইরান ও রাশিয়া-চিন জোটের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি– এই দোটানায় ভারতের বিদেশনীতিকে আগামী দিনে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে ভারতকে তার ‘স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি’-র নীতি বজায় রাখতে হবে। ভারত জি-২০, ব্রিক্স, এসসিও, রাষ্ট্র সংঘ ইত্যাদি অান্তর্জাতিক মঞ্চে আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে এবং ‘আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ সমাধান’-এর পক্ষে সুর তোলার মাধ্যমে নিজের বিশ্বস্ততা বাড়াবে।
এদিকে, দেশের মুসলিম জনসমষ্টির একটি অংশ ইরানের প্রতি সহানুভূতিশীল। আবার ইজরায়েলপন্থী মহলও সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। ভারতের সামনে একমাত্র পথ– দ্রুত কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয়তা বৃদ্ধি, যাতে এই সংঘাত বৃহত্তর যুদ্ধে রূপ না-নেয় এবং ভারতের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.