ক্যালিফোর্নিয়ায় ভারতীয় যুবক খুন হয়েছেন, একজন মার্কিনকে প্রকাশ্যে প্রস্রাব করতে বাধা দিয়ে। পুরুষচরিত্র সব জায়গাতেই এক।
‘বাথরুম’ কথাটাকে বাধ্যতামূলক নাগরিক সুভদ্রতায় আগাগোড়া মুড়ে ‘ওয়াশরুম’ বলার ঢালাও রেওয়াজ যখন চালু হয়নি, তেমনই এক সময়ে, ধরে নিন, গত শতকের ছয়ের দশক, একদিন সকালবেলা বিজন পেচ্ছাপ করতে গিয়ে দেখে– তার ‘রক্ত বেরচ্ছে, সে রক্তপ্রস্রাব করছে’। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের কাল্ট হয়ে যাওয়া গল্প ‘বিজনের রক্তমাংস’ শুরু হয়েছিল এইভাবে। প্রস্রাব-বিপর্যয় আখেরে অস্তিত্বের বিপর্যাসকে চেনাতে শুরু করে, এবং তার মর্মমূলে পৌঁছতে চায়।
এই গল্পের প্রেক্ষিতে মনোজ্ঞ প্রাবন্ধিক আমাদের মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না যে, ১৯৬৮ সালে, সন্দীপনের লেখার আরও আট বছর বাদে, মতি নন্দীর একটি উপন্যাসের (‘দ্বাদশ ব্যক্তি’) চরিত্র তারক, ঘুম থেকে একটু দেরি করে উঠে, কলঘরে গিয়ে সহসা আবিষ্কার করে, পেচ্ছাপ করতে গিয়ে জ্বালা করছে। পুঁজও কি বেরচ্ছে? তাহলে কি তার গনোরিয়া হল? কেন এ ধরনের যৌনরোগ পুরুষের দেহে বাসা বঁাধে, কী ধরনের অবাধ যৌনতায় অংশ নিলে, তার ইঙ্গিত দিয়ে মতি নন্দী আমাদের নিয়ে যান নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিভূ একটি অসফল চরিত্রের ডঁাটাচচ্চড়ি-সম যাপনকথায়। দু’টি লেখাই প্রস্রাবের অনুষঙ্গ অঁাকড়ে ডুব দেয় অন্যতর আখ্যানের গোপন মর্মে। আর এও বলার যে, দু’টি লেখার কোনওটিই প্রস্রাব করার বিধি বা টয়লেট ম্যানার্সের সঙ্গে জড়িত নয়। প্রস্রাব এখানে উপলক্ষ। জীবনের উপাখ্যানকে স্পষ্টতর করার প্রশ্নে। কিন্তু প্রাত্যহিক ভারতীয় জীবনে পুরুষের ‘টয়লেট ম্যানার্স’ আলোচনার বিষয় বইকি।
যত্রতত্র ও যথেচ্ছ জলঝরনার ধ্বনিতে শহর-মফস্সল আক্রান্ত। বাড়ি থেকে বেরিয়েই পুরুষদের যেন-বা দরকার হয় জলবিয়োজন করার। তবেই যেন জীবন ধীরে ধীরে বীতশোক হতে পারবে। যেটা সমস্যার, যে-পরিমাণ মানুষ বাইরে বেরচ্ছে, আমাদের দেশে, সেই পরিসংখ্যানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রস্রাবাগার নেই। পাবলিক ইউরিনাল অপ্রতুল ও অপরিচ্ছন্ন। ফলে অনেক পুরুষই প্রকৃতির উদাত্ত পরিবেশেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়। যা ক্রমে একটি সহজ ও সাধারণ অভ্যাসে রূপান্তরিত হয়। কলকাতার মতো মহানগর যেসব অহরহ দৃশ্যদূষণের শিকার, তার মধ্যে পুরুষের মূত্রত্যাগের ঘটনাটি তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে, সন্দেহ নেই। কোনও-কোনও নাগরিক নিজের বাড়ির দেওয়ালে লিখে রাখেন ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’।
সেই নির্দেশকে কঁাচকলা দেখিয়ে সেখানেই প্রস্রাব করা যেন বীরত্ব দর্শানো ও নিয়মভাঙার পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠেছে, যা সিনেমাতেও আকছার দেখানো হয়। ‘টয়লেট ম্যানার্স’ ভারতীয় পুরুষদের শেখানো যাবে কি না, এই সংশয়ের মাঝেই বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটল যেন। আমেরিকায় এক ভারতীয় যুবক, কপিল, খুন হয়েছেন, খোদ একজন মার্কিনকে, প্রকাশ্যে প্রস্রাব করতে বাধা দিয়ে। ওই মার্কিন সরাসরি গুলি দেগে দিয়ে আপত্তি ও প্রত্যুত্তর দিয়েছে। প্রেক্ষাপট বদলে গেলে রুচিতেও বদল আসে। কপিল সেই বদলের দৃষ্টান্ত। তবে সবক শেখানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরুষ তো আমেরিকাতেও রয়েছে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.