Advertisement
Advertisement
Indian Railway

গ্লানির জন্ম! ভারতীয় রেলের শৌচাগার

বিদেশি যাত্রীর অভিজ্ঞতায় মুখ পুড়ল দেশের।

Indian Railway sanitation system
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:April 21, 2025 9:37 pm
  • Updated:April 21, 2025 9:38 pm   

বিদেশি যাত্রীর অভিজ্ঞতায়, বর্ণনায়, ভ্লগ পোস্টে ভারতীয় রেলের যে করুণ শৌচাগার-ব্যবস্থা ফুটে উঠছে, তা লজ্জার। সংশোধন হবে?

Advertisement

‘যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে’। এ-কথার তাৎপর্যে উঠে আসে ‘মহাভারত’-এর মহিমা। জীবনের প্রতিটি স্তরের উপস্থাপনা এমনই নিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই মহাকাব্যের পরিসরে, যে, ধরে নেওয়া হয়, যা মহাভারতে নেই, তা আসলে এ দেশের চরিত্রলক্ষণেও নেই। প্রেম ও প্রতিহিংসা, বন্ধুত্ব ও স্বার্থত্যাগ, অহং ও সন্ন্যাসচেতনা, বীরত্ব ও কাপুরুষতা, লোভ ও বিত্তত্যাগ– হেন অনুভূতি নেই– যা প্রদর্শিত হয়নি। যেখানে অস্ত্র সংবরণ করে নেওয়া অর্জুনকে পুনরায় উদ্যোগী হতে বলছেন কৃষ্ণ, দেখাচ্ছেন বিশ্বরূপ, সেই পর্যায় তো ভাবশক্তির উদ্বোধনে ধন্য। বৈচিত্র ও বিশালতা, সূক্ষ্মতা ও অভিনিবেশ– বিপরীতমুখী গতিপথের দৃষ্টান্ত মহাভারতের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে।

মহাভারতের নির্যাস-গুণ আরও কোথাও পাওয়া সম্ভব নয় জেনেও– আমরা ভারতীয় রেলযাত্রার প্রসঙ্গে সেই ব্যাপ্তির কথা তুলে আনতে আগ্রহী। রেলযাত্রায় খণ্ড খণ্ড যেসব অভিজ্ঞতা আমাদের প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে, তা যেন চুম্বকে এই দেশের আত্মাকেই প্রকট করে। রেলের নিত্যযাত্রার অভিজ্ঞতা তৈরি করে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক। রেলের ভিড়-ঠাসা কামরায় আমরা সমাজের নানা স্তরের মানুষের উপস্থিতি বুঝতে পারি– তাদের অভাব ও অনুযোগ, আনন্দ ও গ্লানি সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে অনুরণিত করে। দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটলে, রাজনৈতিক টালমাটাল দেখা দিলে, সামাজিক অবক্ষয়ের হাড়হিম করা দৃষ্টান্ত সামনে এলে– রেলের নিত্যযাত্রীদের প্রাত্যহিক কথায় ও আচরণে তার বহুমাত্রিক ছবিটি উদ্ভাসিত হয়। দূরগামী রেলের যাত্রায় আবার বিবিধ চরিত্রের মধ্য দিয়ে আমরা টের পাই– আসলে এ দেশের কত কিছু আমরা জানি, এবং জানিও না ভাল করে।

ইদানীং দীর্ঘ রেল-যাত্রা ঘিরে ঘনীভূত হয়েছে বিতর্ক– আর তার কেন্দ্রে রয়েছে বেহাল শৌচাগার ব্যবস্থা। ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’-এর প্রথম পর্বে আশ্চর্য একটি শৌচাগার দৃশ্যের অবতারণ করেছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ। নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিক অভিনীত চরিত্রটিকে আমরা দেখি, চোরাই রিভলবার ট্রেনের শৌচাগারে লুকিয়ে রেখে পুলিশকে ধোকা দিতে। লম্বা ট্রেনযাত্রায় আকছার দেখা যায়, জেনারেল কম্পার্টমেন্টের শৌচাগার দখল করে সেখানে সাধারণ মানুষ বসে আছে, বা তার ভিতরে জিনিসপত্র ভরে রেখেছে। দেশে প্রত্যহ যে হাজার দশেক দূরপাল্লার এক্সপ্রেস মেল এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলে, তার মধ্যে হাতেগোনা কিছু ট্রেন-ই সবিশেষ ‘গুরুত্ব’ পায়, বাকি ট্রেনের শৌচাগার পরিষেবা চিরকালই প্রশ্ন-বিদীর্ণ।

সেখানে জল থাকলে পরিচ্ছন্নতা নেই, আওয়াজ তুললেও পরিচ্ছন্ন করার লোকবল নেই, যে-পরিমাণ যাত্রী ধারণ করে এক-একটি দূরপাল্লার ট্রেন, তার তুলনায় শৌচাগারের সংখ্যাও কি সংগতিপূর্ণ? শৌচাগারের দৃশ্যদূষণ এতখানি মারাত্মক যে, মহিলাদের পক্ষে সেগুলি ব্যবহার করা দুরূহ হয়ে ওঠে, অথচ সাধারণ মানুষের জন্য রেলই যে ভরসা! ভারত ও ভরসা কি তবে একত্রে যায় না?

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ