বিকশিত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখছে যে মোদি সরকার, সেখানে অর্থনীতিতে স্থিতিশীল এবং নিম্ন-মুদ্রাস্ফীতি কি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করবে?
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে এবং ভারতবাসীকে দেখাচ্ছে। কিন্তু, এই সময় তার জন্য ক্ষেত্র কতটা প্রস্তুত, সেই প্রশ্ন উঠছে। আর সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দেশের ২০২৪-’২৫ অর্থবছরের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যান। ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, সদ্য ফেলে আসা আর্থিক বছরে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ। যা কোভিড-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর।
তবু, সরকার ও শাসক দলের নেতারা ওই বৃদ্ধিকে ‘মন্দ নয়’ বলে ব্যাখ্যা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, এটি বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘ভালো’। এই বক্তব্যে কিছুটা সত্য থাকলেও ভারতের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশের জন্য এই মন্থর বৃদ্ধি মোটেই যথেষ্ট নয়। মনে রাখতে হবে যে, ভারতের চ্যালেঞ্জ শুধু অন্য দেশগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, বরং নিজস্ব বিশাল জনসংখ্যা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। কারণ, ভারত যে আগামী ২২ বছরের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন দেখছে, তার জন্য লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতি বছর অন্তত আট শতাংশ বৃদ্ধি অর্জন– যেমনটি অর্থনৈতিক সমীক্ষাতেও বলা হয়েছে। এই গড়পড়তা ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধি দিয়ে সরকারের স্বপ্নপূরণ হবে না।
অবশ্য, গত আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে ৭.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। এই বৃদ্ধি মূলত কৃষি ও নির্মাণ ক্ষেত্রের কারণে ঘটেছে, যা কর্মসংস্থানেরও একটি প্রধান চালিকাশক্তি। পরিষেবা ক্ষেত্রটিও আগের মতোই মজবুত রয়েছে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, ৭.৪ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধির পিছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ১২.৭ শতাংশ অপ্রত্যক্ষ কর আদায় বৃদ্ধি। অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, এর অর্থ হল– প্রকৃত উৎপাদন ও ভোগের দিক থেকে অর্থনীতি কিছুটা পিছিয়ে আছে। কিন্তু কর আদায়ের কারণে পরিসংখ্যানগতভাবে জিডিপি খানিকটা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ‘মহাকুম্ভ’ ছিল।
যা নিয়ে কেন্দ্র সরকার বিপুল প্রচারে নেমেছিল এবং তাতে অর্থনৈতিক সুবিধার কথাও মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ‘রেজাল্ট’ প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে যে, প্রত্যাশিত ‘মহাকুম্ভ প্রভাব’ ভোগবাজারে প্রতিফলিত হয়নি। ওই ত্রৈমাসিকে ব্যক্তিগত খরচে বৃদ্ধির হার মাত্র ছয় শতাংশ, যা গত পাঁচ ত্রৈমাসিকের মধ্যে সর্বনিম্ন। ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি. অনন্ত নাগেশ্বরন বলেছেন, আমরা এক ‘স্থিতিশীল ও নিম্ন-মুদ্রাস্ফীতির’ যুগে প্রবেশ করছি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে– এই স্থিতিশীলতা আমাদের কি কাঙ্ক্ষিত গতি এনে দেবে?
উত্তরটি হবে, সম্ভবত না। স্থিতিশীলতা ভাল, যদি তা গতি আনে। কিন্তু যখন তা কেবল একটা সীমিত গড় বৃদ্ধি বজায় রাখে– তখন তা এক ধরনের স্থবিরতাও তৈরি করে। তাই বিকশিত ভারতের পথে এগতে হলে, প্রয়োজন আরও সাহসী, গতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক নীতি এবং গতি বৃদ্ধি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.