খেলার মঞ্চে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ খেলার অঙ্গ। তবে তার সীমা রয়েছে, মাত্রাবোধ রয়েছে, অনুশাসন রয়েছে। গুকেশের কাছে হেরে যেভাবে ম্যাগনাস কার্লসেন টেবিলে ঘুসি মেরেছেন, তা কি সম্ভ্রমের? হয়তো কোনও দিন কার্লসেনও ক্ষমা চাইবেন– মাইক টাইসনের মতো নতজানু হয়ে।
ইভান্ডার হোলিফিল্ডের কান কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছিলেন ‘আয়রন’ মাইক টাইসন ১৯৯৭ সালে। তা ছিল ডব্লিউবিএ হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চ। একবার নয়, দু’-বার এমন অনৈতিক আক্রমণ শানান টাইসন, সম্মুখসমরে এঁটে উঠতে না-পেরে। অত বড় আসরে, ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রেফারি কিন্তু টাইসনের বিরাট ইমেজের দ্যুতিতে থমকে যাননি। প্রথমবার সতর্ক করার পরেও টাইসন সংযত না হওয়ায়– ম্যাচ বাতিল করে দেন। চ্যাম্পিয়নের খেতাব ধরে রাখেন ইভান্ডার হোলিফিল্ড। অনেক বছর পরে টাইসন বলেন– যা করেছি ভুল করেছি। ইভান্ডারের কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছি। ওর উদার মন। ক্ষমা করেও দিয়েছে। এখন আমরা বন্ধু, কিন্তু পুরনো কৃতকর্মের কথা মনে পড়লে– লজ্জিত হই।
ওয়াসিম আক্রম একটি চমৎকার গল্প ‘শেয়ার’ করেছেন কপিল শর্মার শো-তে এসে: অল্প বয়সে তিনি একবার এমনই রাগিয়ে দিয়েছিলেন কিংবদন্তি ভিভিয়ান রিচার্ডসকে যে, ব্যাট বাগিয়ে চড়াও হতে বাকি রেখেছিলেন ভিভ। বিষয়টি এরকম– একটি বাউন্সার দেওয়ার পর, জোর গতির বোলারের আগ্রাসী স্বভাবধর্ম প্রদর্শন করতে গিয়ে, ওয়াসিম দু’-চারটে অপশব্দ প্রয়োগ করে বসেন ভিভের উদ্দেশে। ভিভ সিনিয়র। সাবধান করে দেন ওয়াসিমকে যে, ‘‘ভদ্রভাবে কথা বলো।’’ তখন পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন ইমরান খান। তিনি পালটা উসকে দেন ওয়াসিমকে– ‘‘আবারও বাউন্সার দাও।’’ এবং ওয়াসিম বাইন্সার নিক্ষেপ করে ফের দু’-চারটে অপশব্দ ছুড়ে দেন। এবার ভিভ বলেন– ‘‘আই উইল কিল ইউ ম্যান।’’ ওয়াসিম তখন সত্যি ভয় পেয়ে যান। ছুটে যান অধিনায়কের কাছে। ইমরান তঁাকে আশ্বস্ত করে বলেন– ‘‘ভয় পেও না, আমি আছি। বল করে যাও।’’
সে-ম্যাচে ভিভকে আউট করেছিলেন ওয়াসিম-ই। সেই আনন্দে উদ্বেল হয়ে পুনরায় দু’-একটি অপশব্দ বলেন ওয়াসিম। এরপর ম্যাচের যখন লাঞ্চ ব্রেক চলছে– তখন ঘটে কাণ্ড! ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্রেসিং রুম থেকে ভিভ হাজির ব্যাট নিয়ে। মারবেন ওয়াসিমকে। তখন কিন্তু ইমরান খান আর ত্রাতা হননি। বলেছিলেন, ‘‘নিজের লড়াই নিজে বুঝে নাও।’’ কোনওরকমে হাত-পা ধরে সে-যাত্রা ভিভকে মানাতে পেরেছিলেন ওয়াসিম।
খেলার মঞ্চে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ খেলার অঙ্গ। তবে তার সীমা রয়েছে, মাত্রাবোধ রয়েছে, অনুশাসন রয়েছে। যেভাবে সদ্য নরওয়ে চ্যাম্পিয়নশিপে ডি. গুকেশের কাছে হেরে ম্যাগনাস কার্লসেন টেবিলে ঘুসি মেরেছেন, তা কি খেলার শালীনতা ও সম্ভ্রমের অনুকূল? গ্যারি কাসপারভের কাছে হেরে বিশ্বনাথন আনন্দ, বা ভ্লাদিমির ক্রামনিক কি কখনও তা করেছেন? অন্তরের ক্ষোভ যতই কষাটে হোক, তা ভব্যজ্ঞানের পরিপন্থী হলে মুশকিল। হয়তো কোনও দিন কার্লসেনও ক্ষমা চাইবেন– মাইক টাইসনের মতো নতজানু হয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.