আচমকা ভারতীয় ওষুধের উপর থেকে সমস্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে শূন্য করেছে বেজিং। ড্রাগনের এই বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো কতটা ভরসাযোগ্য?
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার মসনদে বসার পরেই বিশ্ব জুড়ে ত্রাহি-ত্রাহি রব। একেবারে ‘একে ধরো, ওকে কাটো’ মনোভাব। তার ফল কম-বেশি সব দেশকেই ভুগতে হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তঁার তথাকথিত ‘বন্ধুত্ব’ সত্ত্বেও ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নানা সিদ্ধান্ত ভারতের বিরুদ্ধে গিয়েছে। তা সে ভিসায় ‘ফি’-বৃদ্ধি, ভারতীয় পণ্যে ৫০% শতাংশ শুল্ক চাপানো বা পাক প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে মাখামাখি, যা-ই হোক না কেন। গোদের উপর বিষফোড়া, ব্র্যান্ডেড ওষুধের উপর ১০০% শুল্ক চাপাতে চলেছেন ট্রাম্প! তঁার এই এলোপাথাড়ি অসমীচীন সিদ্ধান্তের প্রভাব ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উপর পড়বে ভালমতোই।
এই পরিস্থিতিতে নয়া চটক। পাশার দান উল্টে দিতে আসরে নেমেছে বেজিং। আচমকা ভারতীয় ওষুধের উপর থেকে সমস্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে শূন্য করেছে তারা। যা এত দিন ছিল ৩০%। এই সিদ্ধান্ত কারও-কারও কাছে ‘ঐতিহাসিক’। এতে ভারতীয় সংস্থাগুলির সামনে রফতানি বিরাট দরজা খুলে যাবে। বিশেষত, সস্তায় জেনেরিক ওষুধ ও টিকার ক্ষেত্রে বিশ্বে যেখানে আমাদের দেশের প্রাধান্য, প্রতিপত্তি ও নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নাতীত।
বলা বাহুল্য, বেজিংয়ের এই ঘোষণার সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। তারা ইঙ্গিত দিচ্ছে, বন্ধুত্বের হাত বাড়াচ্ছে। আমেরিকার অক্ষ ছেড়ে বিকল্প জোটে এসো। হাত মেলাও চিন-রাশিয়ার সঙ্গে। আর এখানেই থাকছে শঙ্কা। মেঘ না-চাইতে পানি সন্দেহের একটা অবকাশ রেখেই দিচ্ছে। ড্রাগনের বন্ধুত্ব কতটা ভরসাযোগ্য?
প্রথমত, এশিয়া মহাদেশে চিনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। সীমান্ত বিতর্ক, আধিপত্যবাদী মানসিকতা-সহ নানা বিষয়ে দু’-দেশের বিরোধ। তার উপর ভারতের গণতান্ত্রিক বহুদলীয় ব্যবস্থার সঙ্গে চিনের একদলীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা মেলে না। দক্ষিণ চিন সাগর, তাইওয়ানের উপর ওদের নজর। যার পাল্টা আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার জোট ‘কোয়াড’ বেজিংয়ের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ। আমেরিকার পাশ থেকে দিল্লিকে সরাতে পারলে চিনের বিরাট লাভ। যদিও সাময়িক কিছু দ্বন্দ্ব বাদ দিলে বিশ্বের দুই বৃহত্তম গণতন্ত্রের সম্পর্ক মোটের উপর ভালই। তার উপর দিল্লিকে চাপে রাখতে প্রথম থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে ‘দৃঢ় বন্ধুত্বের সম্পর্ক’ গড়ে তুলেছে বেজিং। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ‘ঢাল’ হয়ে দঁাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়, তার আগে রাষ্ট্র সংঘে জঙ্গি তকমা দেওয়ার ক্ষেত্রে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, এমন একটি ধুরন্ধর প্রতিবেশীর সঙ্গে খুব ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করা দরকার। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ভবিষ্যতের চুলচেরা বিশ্লেষণ না-করে স্বল্পমেয়াদি লাভ-লোকসানের হিসাব কষতে গেলে হিতে-বিপরীত হতে পারে। এরপরেও বলার, বুনো ওলের ওষুধ কিন্তু চিরকালই বাঘা তেঁতুল। কাজেই ভারত আত্মবিশ্বাসী হতে পারলে, হয়তো এই ‘ডিল’ অলাভজনক হবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.