Advertisement
Advertisement
Environmental Monitoring

পরিবেশ পর্যবেক্ষণে এবার বেসরকারি সংস্থা, জনস্বার্থের পরিপন্থী হবে না তো?

যদি আমলাতান্ত্রিক প্রভাব কাজ করে?

private organisations will also be involved in environmental monitoring
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:September 9, 2025 8:42 pm
  • Updated:September 9, 2025 8:42 pm   

পরিবেশ পর্যবেক্ষণে এবার থাকবে বেসরকারি সংস্থাও। কিন্তু যদি আমলাতান্ত্রিক প্রভাব কাজ করে, তা জনস্বার্থের পরিপন্থী হবে না তো?

Advertisement

ভারতের পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিতে বড়সড় পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্র সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক একটি পরিবেশ অডিট নীতিমালা, ২০২৫ প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও অডিটের কাজ আর কেবল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও নিজেদের ‘অডিটর’ হিসাবে স্বীকৃতি নিয়ে শিল্প ও প্রকল্পগুলির পরিবেশগত মান্যতা যাচাই করতে পারবে।

আপাতদৃষ্টিতে এই উদ্যোগ দেশের পরিবেশগত প্রশাসনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে পারে বলে আশা করা হলেও, এর ভিতরে সম্ভাবনার পাশাপাশি আশঙ্কার ছায়াও কম নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, মন্ত্রকের আঞ্চলিক কার্যালয় এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদগুলি কর্মীসংকট, পরিকাঠামোগত ঘাটতি ও সীমিত ক্ষমতার কারণে কার্যকরভাবে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। শিল্পায়নের দ্রুত বিস্তার, নগরায়নের চাপ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অগণিত প্রকল্পের ফলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর বোঝা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় নতুন নীতিমালা সেই ঘাটতি মেটাতে বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।

তবু প্রশ্ন থেকেই যায়। বেসরকারি অডিটরের অন্তর্ভুক্তি যদি কেবল কাগুজে হিসাবের খাতায় সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা পরিবেশ সংরক্ষণে কতটা ফলপ্রসূ হবে? শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে গোপন অঁাতঁাতের ফলে যদি অডিট রিপোর্ট বিকৃত হয়, তবে তা বর্তমান পর্ষদের এখানকার সীমাবদ্ধতার চেয়েও ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক সময় বেসরকারি কনসালটেন্সি বা অডিট সংস্থার উপর ব্যবসায়িক চাপ কাজ করে, যা জনস্বার্থের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। সুতরাং নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কঠোর স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতারা কাঠামো অপরিহার্য। এর পাশাপাশি, আমাদের মনে রাখতে হবে পরিবেশ সুরক্ষার প্রকৃত যুদ্ধক্ষেত্র অনেক সময় জেলাস্তর, ব্লকস্তর বা পঞ্চায়েত স্তরে।

গ্রামের ভিতরে ছোট-ছোট ইটভাটা, অবৈধ বালি খনন, নদী দূষণ, কীটনাশকের অতিব্যবহার বা বর্জ্য ফেলার মতো কার্যকলাপই স্থানীয় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। অথচ এই স্তরেই প্রশিক্ষিত কর্মী ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব সবচেয়ে প্রকট। তাই কেন্দ্রীয় নীতিমালার আলোচনায় যদি প্রান্তিক প্রশাসনিক স্তরকে ক্ষমতায়িত না করা হয়, তবে তা মূল লক্ষ্যকেই ব্যর্থ করে দেবে। এই নতুন পরিবেশ অডিট নীতিমালা ২০২৫-এর কার্যকারিতা তাই নির্ভর করবে একাধিক উপাদানের উপর।

একদিকে বেসরকারি অডিটরদের দক্ষতা, সততা ও স্বাধীনতা; অন্যদিকে সরকারি সংস্থাগুলির ক্ষমতায়ন, স্থানীয় স্তরে নজরদারি এবং সর্বোপরি জনসচেতনতার প্রসার। পরিবেশ সংরক্ষণ কেবল নিয়ন্ত্রক কাঠামোর উপর নির্ভর করে না, বরং তা একটি বৃহত্তর সামাজিক দায়িত্ব। যদি এটি কেবল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়ায় বা কর্পোরেট প্রভাবের কাছে নতিস্বীকার করে, তবে তা পরিবেশ রক্ষার সংগ্রামে এক নতুন বিপদের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ