কুণাল ঘোষ: আর জি করে অভয়ার ধর্ষণ ও হত্যার প্রথম বর্ষপূর্তিতে আজ তাঁর বাবা-মাকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নবান্ন অভিযান ডেকেছে কোনও কোনও গোষ্ঠী। বলা হচ্ছে, বিচার চাইতে যাওয়া হবে। আমাদের ঘরের এক মেয়ের ওই ভয়ংকর পরিণতির ঘটনার তীব্র নিন্দা করেও বলতে বাধ্য হচ্ছি ওই মৃত্যুর রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক ‘মার্কেটিং’ চলছে। তদন্ত করছে সিবিআই আর যাওয়া হচ্ছে নবান্ন, এই নাটকের মানে কী? সিবিআইয়ের নিয়ন্ত্রণ বিজেপির হাতে, আর অভয়ার বাবা-মা সেই বিজেপির সঙ্গে নবান্ন যাবেন, এমন করুণ রসিকতা আদৌ প্রয়োজন ছিল কি?
বাস্তবে আসুন।
১) ঘটনা খুব খারাপ। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীকে ধরেছে কলকাতা পুলিশ।
২) বাবা-মা ও সমালোচকরা কোর্ট থেকে সিবিআই এনেছে। তাদের তদন্তেও ওই লোকটা দোষী। দুর্নীতির তদন্ত আলাদা চলছে।
৩) বিচার হয়েছে পুরোদমে। লোকটার যাবজ্জীবন। আমরা ফাঁসি চাই। অ্যাপিল হবে। কিন্তু বিচার হয়নি বলা যাবে না। সর্বোচ্চ শাস্তি কোনটা দেবেন, তা বিচারকের সিদ্ধান্ত। ফলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানের প্রাসঙ্গিকতা নেই, অন্তত এক্ষেত্রে।
৪) কোর্টে যাবজ্জীবন আনিয়েছে সিবিআই। কেন ফাঁসি আদায় হল না, দায় সিবিআইয়ের। এই সময়ে একাধিক কেসে রাজ্য পুলিশ ফাঁসির রায় আদায় করেছে।
৫) তিনটি কোর্ট সব দেখেছে। ট্রায়াল কোর্ট, হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট। বাবা-মায়ের হয়ে সেরা আইনজীবীরা ছিলেন। রাম-বাম ছিল। যা বলার সব আদালতে বলেছেন। তারপর এখন তার বাইরে কে রাজনীতি করছে, কে মিডিয়ায় জ্ঞান দিচ্ছে, নিজেদের ইচ্ছেগুলোকে প্রচারে ভাসিয়ে দিচ্ছে। ক্ষমতা থাকলে ওই আইনজীবীদের দিয়ে বলান যে কোর্ট আপনাদের কথা না শুনে ভুল করেছে। উল্টে আপনারা উকিল বদলেছেন বারবার। এখন অনেকে মিডিয়া বা সোশাল মিডিয়ায় নানা রহস্যজনক ভঙ্গিতে ধামাচাপার প্রশ্ন তুলছেন। বাস্তব হল, এর সবই তো আদালতের বিচার্য ছিল। আপনাদের তৈরি করা গুজব বা ইচ্ছা আদালত না-মানলেই আপনারা নতুন করে রটনায় নামবেন, এবার তো মানুষ বুঝে যাচ্ছেন এই নাটক। আর যাঁদের কাছে গোপন তথ্য আছে, তাঁরা মামলায় পার্টি হয়ে সাক্ষী দিলেন না কেন? ‘সঞ্জয় একা নয়’ বলে যাঁরা বাজার গরম করছেন, তাঁরা প্রমাণ দিচ্ছেন কোথায়? পুলিশ ভুল, সিবিআই ভুল, আদালত ভুল, শুধু তাঁরা নিজেদের অন্য রাগ মেটাতে বা উদ্দেশ্যে যাঁদের দিকে দাগিয়ে দেবেন, তাঁদেরকেই দোষী বলে ধরতে হবে? ইয়ার্কি মারার জায়গা পাননি?
৬) দিল্লির বড় নেতারা বাবা-মার সঙ্গে দেখা করেননি। কারণ সারা দেশে এই কুকাজ হয়েছে। বাবা-মার অভিযোগ এখন সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে। তাঁরা সিবিআইকেও এখন কাঠগড়ায় তুলছেন। অথচ তাঁরা বিজেপির সঙ্গে নবান্ন অভিযান করবেন। আজব! তদন্ত সিজিওতে। কেন্দ্রের হাতে। অভিযান নবান্নতে। এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটকে কি মৃত অভয়া সম্মানিত হচ্ছে? না কি অভয়ার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক ফায়দার নাটকে যেভাবে বাবা-মা জড়াচ্ছেন, তাতে তাঁদের সম্মান, আবেগও আহত হচ্ছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে নানা বিভ্রান্তিকর উত্তর দিচ্ছেন বাবা-মা। তাঁরা নিশ্চয়ই যন্ত্রণা কাতর। কিন্তু তাঁদের নিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে সেটা কি তাঁরা বুঝছেন না? সিপিএম জমানায় এই ঘটনা বারবার হয়েছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে নিয়মিত চলছে। বাংলায় কম, একটাও আমরা চাই না, পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু এই সামাজিক বিকৃত রোগ এখনও তো মুছে ফেলা যায়নি। আর জি করের এই ঘটনায় যেখানে আসল খুনি ধৃত, কোর্টে বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে, দুর্নীতির তদন্ত চলছে, তখন ‘বিচার পাইনি’, ‘বিচারহীন এক বছর’, ‘অভয়া কেন বিচার পেল না’ এসব আবেগ-প্ররোচনার কথা বলে নিজের নিজের ব্যক্তিগত ধান্দায় কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী রাজনীতি করবে, এটা চলতে পারে না। যে যাই মনে করুন, যুক্তি দিয়ে এদের অপচেষ্টা খণ্ডন করছি এবং করব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.